শিক্ষকরা কি একবিংশ শতাব্দীর দাস? মো.মাকসুদ আলম
একসময় দাস ব্যবসা খুবই জনপ্রিয় ছিল। সাদা চামড়ার লোকেরা কালেদের ধরে এনে বিক্রি করত। বিনা পুঁজির ব্যবসা ছিল সেটা। যদিও এটা অমানবিক ছিল তবুও সাদা চামড়ার মানুষগুলো এ লাভজনক ব্যবসাটা ছাড়তে চাইল না। কিন্তু নিজেদেরকে সভ্য জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সেই ব্যবসাটা তাদের ছাড়তে হল। যে ব্যবসাটা ইউরোপে নিষিদ্ধ হয়ে গেল সেই ব্যবসাটাই আজ আমাদের দেশে রং আর রূপ বদলে প্রবল প্রতাপ নিয়ে চলতে শুরু করল। রাজধানী ঢাকা থেকেই শুরু হল শিক্ষা ব্যবসার প্রসারের আর শিক্ষকরা হয়ে গেল কালো চামড়ার দাসদের মত।
আমাদের এখানে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট স্কুল – কলেজ আর সেগুলো পরিচালনা করছেন শিক্ষাবিদ নামের কিছু মানুষ যাদেরকে আমি সাদা চামড়ার সেই দাস ব্যবসায়ীদের যোগ্য উত্তরসূরীই বলে থাকি( কিছু ক্ষেত্র ব্যতিক্রম আছে)। যারা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন এদের বেশিরভাগকেই আগের দিনের কালো চামড়ার দাসদের মতই জীবন কাটাতে হয়। দাসরা যেমন তাদের মালিকের সামনে মাথা উঁচু করে কিছু বলতে পারেন না তেমনি এ যুগের এসব শিক্ষকদেরও কিছু বলার ক্ষমতা নেই পাছে আবার চাকুরীটাই চলে যায়। সকালে প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার আগে ভাবতে হয় যদি পরেরদিন চাকুরীটা না থাকে তবে কি হবে। অধ্যক্ষ মহোদয়ের রুমে ঢুকলে দাসদের মত দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয়, রুমে বসার অনুমতি পর্যন্ত মিলে না। দাঁড়িয়ে কথা বলা শেষ করে আসতে হয়। বসার সুযোগ নেই। বসার সুযোগ হয় মাত্র ২ দিন। যেদিন চাকুরীতে যোগ দিবেন সেদিন আর যেদিন চাকুরী ছাড়বেন সেদিন। শিক্ষকরা কি এ যুগের দাস? সবসময় চাকুরী হারানোর ভয় কাজ করে। অধ্যক্ষ সাহেবরা তো বিরাট ক্ষমতার অধিকারী। উনারা কথায় কথায় বলেন, ” আমাকে আবুল সাহেবকে নিয়ে ভাবতে হবে, আমাকে রাসেল সাহেবকে নিয়ে ভাবতে হবে। না না আমি বাদ দিয়ে দিব। এদেরকে দিয়ে হবে না”। এভাবেই চলছে বেশিরভাগ প্রাইভেট স্কুল-কলেজ। শিক্ষকরা কি সত্যিই নতুন যুগের দাস?
ছুটি চাইতে গেলে তো অধ্যক্ষ সাহেব তো রেগে যান, কত কৈফিয়ত দিতে হয়। উনারা বলেন ছুটি নাকি শিক্ষকদের অধিকার নয়, এটা প্রতিষ্ঠান দয়া করে দিয়ে থাকেন।
আর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন দেন ৩ থেকে ৪ হাজার আবার কখনও কখনও ৫/৬ হাজার। দুই একটি প্রতিষ্ঠান ১০ হাজারের বেশি টাকা বেতন দিয়ে থাকেন। বাকিরা আগেকার দিনের জোদ্দারদের মত অল্প বেতনেই শিক্ষকদের নিয়োগ দেন। চাকুরীর বাজার মন্দা থাকার জন্য বাদ্য হয়েই অল্প বেতনে চাকুরী করতে হয়। এই অল্প বেতন দিয়ে কিভাবে একজন শিক্ষক জীবন কাটাবেন। তবুও সম্মানের আশায় পড়ে থাকেন। কিন্তু দিনশেষে কি প্রাপ্য সম্মানপুকু জোটে?
শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে যারা শিক্ষাবিদের তকমা লাগিয়ে সমাজের উঁচু স্তরে উঠে সাদা চামড়ার দাস ব্যবসায়ী হয়েছেন আপনাদেরকে বলছি শিক্ষকদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করুন। নতুবা আপনাদের মানুষ ঘৃণার চোখে দেখবে। সময় থাকতে ঠিক হোন।