কী ঘটেছিল এশার কক্ষে?
মোরসেদা আক্তার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী। কবি সুফিয়া কামাল আবাসিক হলে থাকেন। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। হলের সভাপতি ইফফাত জাহান এশার ‘ঘনিষ্ঠ ছোট বোন’। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিয়মিত অংশ নিতেন মোরসেদাসহ হল শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন পদধারী ছাত্রী। হলের সভাপতি হিসেবে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আন্দোলনে যোগ দেয়া নিজ সংগঠনের কর্মীদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে কৈফিয়ত তলব করেন এশা। শাসনও করেন পদধারী ৩ ছাত্রীকে।
এ সময় এশার রুমের দরজা আটকানো ছিল। রাগে-ক্ষোভে এক পর্যায়ে এশার কক্ষের ভেতর থেকে জানালার কাঁচে লাথি মারে মোরসেদা। কেটে যায় তার পা। রক্ত ছড়িয়ে পড়ে বারান্দা ও সিঁড়িতে। এরপর উভয়ের মধ্যে শুরু হয় বাকবিতÐা, চিৎকার-চেঁচামেচি। যা ছড়িয়ে পড়ে হলজুড়ে। এরপর কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যোগ দেয়ার অপরাধে মোরসেদার পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেয়া হয়। মুহ‚র্তের মধ্যে যা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন হলসহ গণমাধ্যমে।
এরই মধ্যে সুফিয়া কামাল হলের হাউস টিউটর মোরসেদাকে এশার রুম থেকে বের করে নিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। গুজব ছড়িয়ে পড়লে হলের অন্য ছাত্রীরা বাইরে জড়ো হয়ে এশাকে লাঞ্ছিত করেন ও তাকে রুমের মধ্যে আটকে রাখেন। এক পর্যায়ে হলের জুনিয়র ছাত্রীরা তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এ ছাড়া এশার বাবা-মাকে নিয়েও গালিগালাজ করেন। সুফিয়া কামাল হল ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা সুফিয়া কামাল হলের সামনে এসে জড়ো হন। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। এশার বিরুদ্ধে সেøাগানও দিতে থাকেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হয়ে রাতভর বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই, পড়তে এসেছি, মরতে নয়, হলে হলে অত্যাচার বন্ধ কর বন্ধ কর’ প্রভৃতি সেøাগান দেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসজুড়ে অস্থিরতা শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা এশার শাস্তিÍ ও বহিষ্কারের দাবি জানান। একপর্যায়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী দ্রæত ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং এশাকে হলের আবাসিক শিক্ষক হেফাজতে নেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এশাকে প্রথমে হল থেকে ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও জানান প্রক্টর।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংগঠন থেকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের বিবৃতি দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রীদের লাঞ্ছনা, ছাত্রলীগ ও আবাসিক হল এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ইফফাত জাহান এশা এখন মানসিকভাবে অনেকটাই বিপর্যস্ত। নিজের সম্মানহানি হওয়ায় রাতেই বেশ কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু অন্য সহকর্মীরা তাকে বাধা দেন।
এদিকে গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে সুফিয়া কামাল হলের হাউস টিউটর নীলিমা আক্তার তার ফেসবুক পেজে লেখেন ‘সুফিয়া কামাল হলের যে মেয়েটির ছবি ভাইরাল হয়েছে, ওর রগ কাটেনি। ও সে সময় অন্য একটি মেয়ের চিৎকার শুনে রাগে ছাত্রলীগের নেত্রীর গøাসে লাথি মেরেছিল। যে শিক্ষক তাকে পাশের হসপিটালে নিয়েছেন, তার কাছে ওই ছাত্রীই এটা বলেছে। সেই শিক্ষকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তবে ওখানে কিছু ছাত্রী বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছিল। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দোষীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রী মগবাজারে তার লোকাল গার্ডিয়ানের কাছে গেছে নিজের ইচ্ছায়।’
এদিকে পায়ের রগ কাটা নিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী মোরসেদা আক্তারের একটি ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে তিনি তার পায়ের রগ কেটে দেয়ার কথাও অস্বীকার করেন। ভিডিও বার্তায় বিভিন্ন সময়ে এশার দ্বারা সংগঠনের কর্মীদের নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
এদিকে এশার বাবা ইসমাইল হোসেন বাদশা গতকাল গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, আমার মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সব মিথ্যা ও ভুয়া। এটা সম্পূর্ণ একটা ষড়যন্ত্র। ভিসির বাসভবনে যারা হামলা করে তারা মিথ্যা রটিয়েছেÑ এমন মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে আমার মেয়ের বিরুদ্ধেও।