পহেলা বৈশাখ রাঙ্গাতে ব্যস্ত কারিগর..

পুরানো সব জীর্ণতা আর গ্লানি মুছে বৈশাখ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসছে নতুন দিনের নতুন বছরের এক অনন্য আনন্দ উৎসব। আর এই বৈশাখকে বরণ করার জন্য চলছে নানান প্রস্তুতি। আর একদিন পরই পহেলা বৈশাখ। তাই পহেলা বৈশাখ এবং মাস জুড়ে বৈশাখী বিভিন্ন মেলাকে সামনে রেখে মাটি দিয়ে তৈরী বর কনে, পশু-পাখি, ব্যাংকসহ বিভিন্ন খেলনা, নানান রঙের ও প্রকারের বাহারী কাগজ, কাপড় ও শোলা দিয়ে গোলাপ ফুল, তারা, সূর্যমুখি ফুল, কিরনমালা, মানিক চাঁদ সহ বিভিন্ন নামের কৃত্রিম ফুল ও বাঁশি তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর  কারিগররা।

 

পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত সুলতানপুর, দেবীপুর, শৌলগাছি ও আত্রাই উপজেলার জামগ্রামের কারিগররা। সারা বছরই তারা এসব তৈরীর সঙ্গে জড়িত। আর এটিকে তারা পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন।

তবে কাঁচামাল, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি সেই সঙ্গে আধুনিক প্লাষ্টিক খেলনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পারায় মাটির খেলনা তৈরী ও বিক্রি অলাভজনক হয়ে পড়েছে। বিশেষ দিবস যেমন ঈদ, পুজা, পার্বন ও মেলা ছাড়া আর কুমার পাড়ায় খেলনা তৈরী করছেন না জেলার কারিগররা।

জেলার নওগাঁর সদর উপজেলার  সুলতানপুর, রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা, মহাদেবপুর উপজেলার শিবপুর সুলতানপুর গ্রামের কুমারপাড়া গুলো মাটির খেলনা তৈরীর জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এসব গ্রামেও এখন আর বিশেষ দিবস ও মেলা ছাড়া খেলনা তৈরী করেন না কারিগররা। তবে হাড়ি পাতিল ও রান্নার বাসনপত্র তৈরী করে কোন রকমে টিকে রেখেছেন তারা বাপ দাদার এই পেশাকে।

কারিগর সমনাথ মহন্ত ও অরুন কুমার পাল জানান, মাটির খেলনা তৈরীর উপকরন (কাঁচামাল) জ্বালানী কাঠ, মাটি, রং ইত্যাদির দাম ও পরিবহন খরচ ২/৩ গুন বাড়লেও খেলনার দাম সেভাবে বাড়েনি আর কেনা-বেচাও খুবই কম। বিভিন্ন ধরনের ১ হাজার খেলনা মেলায় বিক্রি করে সব খরচবাদে টেকে মাত্র ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। যা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই অধিকাংশ কারিগররা এখন জীবন জীবিকার প্রয়োজনে চলে যাচ্ছেন ভিন্ন পেশায়।

নওগাঁর সদর উপজেলার দেবীপুর গ্রাম বাঁশি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। বৈশাখের মেলাকে সামনে রেখে বাঁশি তৈরীতে নল কাটা, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য জড়ি প্যাচানো ও বিভিন্ন রঙের বেলুন লাগানোর কাজে ব্যস্ত কারিগররা। এ গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবারের মধ্যে ২৫০ পরিবারই বাঁশি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

আজিম উদ্দিন ও হেলাল হোসেন জানান, বৈশাখীর বিভিন্ন মেলা, ঈদ ও পুঁজা পার্বনে বাঁশির চাহিদা থাকে বেশি। স্থানীয়দের কাছ পাইকারী ও খুচরা বাঁশি বিক্রি করে ২০০ টাকার মত লাভ হয়। এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া, পাবনা, দিনাজপুর, খুলনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় পাইকারী বিক্রি করা হয়।

এই গ্রাম থেকে বছরের প্রায় ৫০ লাখের মতো বাঁশি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে। এমনকি বিদেশেও পাঠানো হয়। তবে পৃষ্টপোষকতার অভাবে এসব কারিগর বাশিঁ বিদেশে রপ্তানী করতে পারছেন না।

এ বিভাগের অন্যান্য