সিলেটে ৪লক্ষ ৮১ হাজার ৫১২হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ
সিলেটের সময় ডেস্ক:
সিলেটের হাওরের মাঠে মাঠে এখন সোনালী ধান। ঘরে ঘরে চলছে ধান তোলার প্রস্তুতি। কৃষকের ব্যস্ততা ও দুঃচিন্তা দুটোই সমানভাবে বাড়ছে। খোঁজ করা হচ্ছে, ধান কাঁটার শ্রমিক। আবার কোথাও কোথাও ইতিমধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন কৃষকরা। গত বছরের বন্যায় সম্পূর্ণ ধান হারানোর পর নিঃস্ব- নিঃপ্রাণ হাওরে যেনো আবারো জেগেছে প্রাণ। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে হাওরবাসীর জীবনে। ধানের ক্ষেতের প্রতিদিনের পরিবর্তন দেখে মলিন কৃষকের মুখে আবারো দেখা দিয়েছে আনন্দের হাসি। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ধান তুলতে পারলে হাওরের মানুষের দুঃখ অনেকাংশে লাঘব হবে বলে আশা করছেন তারা। কৃষকরা যাতে দ্রুত ফসল তুলতে পারেন সে জন্য কৃষি বিভাগ সর্বদা নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলতাবুর রহমান।
সিলেট কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবছর সিলেট বিভাগের ৪লক্ষ ৮১ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৮৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৫৪ হাজার ১২ হেক্টর, হবিগঞ্জে ১ লক্ষ ২১ হাজার ৪৩০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এবছর লক্ষ মাত্রার চেয়ে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে । সিলেটে ২ হাজার ৯শ হেক্টর, মৌলভীবাজারের ১ হাজার ৫৪১ হেক্টর, হবিগঞ্জে ৬ হাজার ১২৫ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত চাষ হয়েছে।
এদিকে, দিগন্ত বিস্তৃত হাওরের আকাশে মেঘের আনাগোনা, হাঠৎ ধমকা বাতাস, বিদ্যুৎ চমকানো, নিচে অবারিত মাঠে সোনালী ধানের দোলা। কৃষকের একদিকে আকস্মিক বন্যা-শিলাবৃষ্টির আশংকা অন্যদিকে, দ্রুত ধান তোলার জন্য চলছে প্রস্তুতি। ধান কাটার শ্রমিকের জন্য খবর পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। মেরামত করা হচ্ছে ধানের গোলা। ধান শুকানো ও মাড়াই এর জন্য লেপে মুছে তৈরি করা হচ্ছে ধানের খলা। ব্যস্ততার কারণে এখন বিয়ের অনুষ্ঠানে পর্যন্ত যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন অনেক কৃষক। এদিকে, ধান তোলার জন্য শ্রমিক সংকটই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা বলে জানিয়েছেন তারা। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার মাইজাইল হাওরপাড়ের কৃষক জমসেদ আলী উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জানান, এবছর ভালো ধান হয়েছে। হাওরের ধান পাঁকতে শুরু করেছে। তারা কিছু কিছু কাঁটছেনও। গত বছর সম্পূর্ণ ধান তলিয়ে যাওয়ায় সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও কৃষি বিভাগের তৎপরতায় এবছর ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, ব্যস্ততার মধ্যেও সবচেয়ে বেশি সমস্যা শ্রমিক সংকট। ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। একজন শ্রমিককে ৪/৫শ টাকা মজুরী দিতে হচ্ছে। এতে ধানের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। ধান দ্রুত তোলা এবং এর মধ্যে যেনো বন্যা বা শিলাবৃষ্টি না হয় সেই দোয়া করছেন তিনি। তিনি বলেন, ধান হাওরের প্রাণ। ধানের উৎপাদন ভালো হলে হাওরের মানুষ ভালো থাকে। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওরপাড়ের কৃষক মধু মিয়া জানান, এবছর ফলন ভালো হয়েছে। ৮/১০ দিন সময় পেলে ধান তোলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এবছর সম্পূর্ণ ধান তুলতে পারলে গত বছরের ক্ষতি অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা।
এবছর বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে জানিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার দরিয়াপুর হাওরের কৃষক আব্বাস উদ্দিন বলেন, গত বছর হাওরের ধান তোলা যায়নি। এবছর এখনো আবহাওয়া ভালো । কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো মাত্রায় ধান তোলা শুরু হবে। ধান কাটার শ্রমিক আনতে পরিচিতদের নিকট খবর দেয়া হয়েছে।
সুনমগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের বিছরাকান্দা গ্রামের কৃষক পারভেজ বলেন, বিগত ২বছর ফসল হানিতে কৃষকদের অনেকেই প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন। এবছরের ফসল নিয়ে তারা খুবই উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারেন বলে আশাবাদী তারা।
এদিকে, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও হাইব্রিড, উপশী ও স্থানীয় জাতের ধানের চাষ হয়েছে। সময় মতো সার, পরিচর্যা এবং নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত বৃষ্টিপাতের ফলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন কৃষকও কৃষি বিভাগের সকলে। কৃষকদের সহযোগিতায় কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা প্রশিক্ষক সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, আবহাওয়ার আগামী ৭দিনের যে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে তাতে তেমন কোন বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা নেই। পরে বৃষ্টি হলেও কৃষক ধান তুলতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিচালক মো. আলতাবুর রহমান বলেন, গত মঙ্গলবার তিনি হবিগঞ্জ ও গতকাল মৌলভীবাজার জেলায় ফিল্ড ভিজিটে গিয়েছেন। এবছর খুবই ভালো ধান হয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসের ১৫/১৬ তারিখ পর্যন্ত সময় পাওয়া গেলেও ৬০ ভাগ ধান তোলা সম্ভব হবে। আর পুরো এপ্রিল সময় পেলে শত ভাগ ধান কৃষকরা গোলায় তুলতে পারবেন। কৃষকদের দ্রুত ধান তোলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ধানের ৮০ ভাগ পাঁকলেই দ্রুত কেটে ফেলতে হবে। কোন কোন কৃষক শত ভাগ ধান পাঁকা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এতে ধানের রং নষ্ট হয় এবং অনেক ধান ঝরে পড়ে।