সম-অধিকার:আকলিমা আতিকা কণিকা

অধিকার কেউ কাউকে দিতে পারে না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়…

যেখানে বাসে আমাদের জন্য আলাদা করে মহিলা সিট লাগে, মহিলা বাস লাগে সেখানে আমরা সম অধিকার বলে চিল্লাই কেন? বাসে যখন মহিলা সিট খালি থাকায় সেখানে কোন ছেলে বসে, তখন কেন আমরা তাকে অপমান করতে ছাড়ি না? তখন কেন আমরা মজা নিয়ে বলি, ‘ভাই আপনাকে দেখে তো মহিলা মনে হচ্ছে না, সরেন বসতে দেন, এইটা মহিলা সিট।’ তখন আমরা কেন ভুলে যাই আমরা সম অধিকারে বিশ্বাসী?

আচ্ছা, আমরা কি তখন তাদেরকে অপমান করতে গিয়ে উলটা নিজেদেরই অপমান করি না?

মনে হয় না, কথাগুলার মূলভাব দাঁড়ায় এমন, ‘‘ভাই আপনাকে দেখেতো তথাকথিত ‘অবলা’ ফেমিনিস্ট মহিলা মনে হচ্ছে না, যে একই সাথে সম-অধিকারের জন্য চিল্লায় আবার তাদের জন্য আলাদা করে মহিলা সিটও লাগ। সরেন, বসতে দেন, আমিও তাদেরই একজন।’’

যদি সেগুলো শারীরিকভাবে অসুস্থদের জন্য বরাদ্দ সিট হতো, তাহলে নাহয় ব্যাপারটা সুন্দর দেখাতো…

কিন্ত সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ! শুধুমাত্র মহিলা হওয়ার কারণে আমাদের আলাদা করে সিট লাগবে কেন। এইটা আমার বোধগম্য হয় না। তারপর আবার কেউ ‘অবলা’ বললেও তার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে ছাড়িনা। ব্যাপারটা কি খুবই হাস্যকর না?

আচ্ছা ভালো কথা, নারী পুরুষ সমান হলে আলাদা করে নারীদের জন্য ‘ফেমিনিজম’ টার্মটা তৈরি হয়েছে কেন? পুরুষদের জন্য কি এমন কিছু আছে? থাকলেও এত অপরিচিত কেন?

বাসে কেউ মজা নেওয়ার জন্য গায়ে হাত দিলে আমরা কিছু না বোঝার ভান করে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা জোর করে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি কেন? উল্টো তখন সাথে সাথে তার অন্ডকোষে গায়ের জোরে একটা লাথি দিয়ে আমরা মজা নেই না কেন?

নারী পুরুষ সমান অধিকার হলে, বিয়ের সময় কেন নারীদের নিজেদের থেকে হাই লেভেলের ছেলে লাগে? সমান যোগ্যতাসম্পন্ন কোন ছেলেকে আমরা বিয়ে করতে চাই না কেন?

হুম, এখন হয়তো কেউ বলবেন, আমি নিজে সমান যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে বিয়ে করব কিনা? এর উত্তর আমি জানি না, কিন্তু এতটুকু শিওর জানি, যদি সে আমার চেয়ে বেশি যোগ্য হয় তাহলে, সমান অধিকার নিয়ে বিশাল বয়ান দিয়ে বলব না, অতএব আজকে তুমি রান্না করবা….। বরং তার আগে অফিস থেকে এসে রান্নাটান্না করে রেখে দেব। পারলে সে খাওয়ার সময় ফ্যান অফ করে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করব….

যোগ্যতা কম হওয়ার পরেও সে যখন আমাকে বিয়ে করবে, অতএব তার জন্য কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই অন্তত এতটুকু করলে আমার সম্মান কমে যাবে না, আর সেটা না করে জামাইকে দিয়া রান্না করাইয়া আমি খুব স্মার্টও হয়ে যাব না…

কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে নারীদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে…

তাই ‘নারী-পুরুষ সমান অধিকার’ এইরকম ফালতু একটা ব্যাপার নিয়ে চিল্লাচিল্লি, লাফালাফি না করে চিল্লানো উচিত, ‘সমান যোগ্যতাসম্পন্নদের সমান অধিকার’ হোক সে ছেলে, বা মেয়ে…

তাদের যোগ্যতা সমান, অতএব তাদের অধিকার।

এ বিভাগের অন্যান্য