এই প্রজন্মের মাঝেই বঙ্গবন্ধু যেন স্পস্ট প্রতীয়মান
বঙ্গবন্ধু—নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে রচিত হয়ে যায় ইতিহাসের শত শত পাতা। গত ৪৮ বছর ধরে বিশ্বের কোটি মানুষ হয়তো সহস্র কোটিবার শুনেছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে চিরস্থায়ী এক আসন করে নিয়েছে বাঙালির মানসে। বর্তমান প্রজন্ম সামনে থেকে দেখেনি মুক্তিযুদ্ধ, জানতে পারেনি বঙ্গবন্ধুকে। মুক্তিযুদ্ধ তাদের কাছে সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দি আর বঙ্গবন্ধু বইয়ের পাতায়। কিন্তু তারপরও বঙ্গবন্ধু যেন তাদের মাঝেই বারবার আবির্ভূত হন তরুণ রূপে।
গত ১৭ মার্চ মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম ছিল শিশু-কিশোরদের কলকাকলিতে মুখরিত। কেউ এসেছে বঙ্গবন্ধুর সাজে, কেউ গেয়েছে মুজিবের গান, কেউ আবার নূপুরে তুলেছে নৃত্যের ছন্দ। লক্ষ্য একটাই—উত্সব-আনন্দে জাতির জনকের জন্মদিনটি পালন করা। সেই সঙ্গে জাতির জনককে আরও গভীরভাবে জানা। ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের আয়োজনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহযোগিতায় ছিল আরাবি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া শতাধিক শিশু-কিশোররা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
নতুন প্রজন্মের এই প্রতিনিধিদের বঙ্গবন্ধু নামটি হয়তো প্রথমে নানা, নানি, দাদা, দাদি বা বাবামায়ের কাছ থেকে শোনা, তারপর বইয়ের পাতায় পড়া। কিন্তু তার মৃত্যুর এত বছর পরও এই শিশুদের মাঝেই বঙ্গবন্ধু যেন স্পস্ট প্রতীয়মান। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর অনুকরণ করা সাত বছর বয়সী ছেলেটির মতো অনেক শিশুই বঙ্গবন্ধুর মতো করে বলতে ভালোবাসে, ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লায়ন মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার সভাপতি মিয়া মনসফ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার।
‘বঙ্গবন্ধুর হূদয় ছিল পবিত্র শিশুর মতো। তিনি শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। এমন একজন মহান নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। অবিসংবাদিত এই নেতার জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হওয়ার মধ্যে চমত্কার এক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমনটাই বলেন আ স ম ফিরোজ। সভাপতির বক্তব্যে লায়ন এম কে বাশার বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এবং এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতির জনক সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে শিশুদের, তাদেরকে তা জানাতে হবে, নাহলে নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলাদেশের ইতিহাস অজানা থেকে যাবে।’ এছাড়া তিনি ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ৭ মার্চের ভাষণ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জাতীয় পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে শ্রেণিভেদে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে ক্যামব্রিয়ান কালচারাল একাডেমির মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
’৫২ ও ’৭১-এ সবার আগে তরুণ প্রজন্মই এগিয়ে এসেছিল নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে। তেমনি বর্তমান প্রজন্মও ঠিক তাদের পূর্বসূরিদের অনুসরণ করে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম ইতিহাস হয়তো জানে; কিন্তু এর মর্ম শুধু বলা, শোনা ও জানা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এই সীমানার বাইরে দাঁড়িয়েও বঙ্গবন্ধুর অবদানকে তরুণ প্রজন্ম সবসময় স্মরণ করে শ্রদ্ধা ভরে। পালন করে তার আদর্শ। তার সেই শক্তি, সেই দৃঢ়তা এই প্রজন্মকেও সমানভাবে স্পর্শ করছে! বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জড়ো হয় কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে সবশ্রেণির মানুষ। সেদিনের ওই অমর বাণী বাঙালিকে করে তুলেছিল স্বাধীনতাপ্রেমী। উল্কাপিণ্ডের মতো ক্ষণস্থায়ী নয়, ধূমকেতুর মতো হঠাত্ আবির্ভাব নয়, বাঙালির হূদয়ে নক্ষত্রের মতোই পরিক্রমায় তিনি থাকবেন, শুধু এই প্রজন্মের জন্য নয়, থাকবেন আরও শত বছর পরেও।