শামার ভালোবাসা ছবি আঁকা: নুজহাত শামা
শামাকে যখন প্রশ্ন করা হলো তার সবচেয়ে পছন্দের কাজ কোনটি, এককথায় উত্তর এলো, ‘ছবি আঁকা।’ ছবি আঁকাতেই তার ভালোলাগা, ভালোবাসা। ছবি আঁকাকে যদি প্রথম ভালোবাসা বলি, তাহলে দ্বিতীয়, কিংবা তৃতীয় ভালোবাসা? সবগুলোই ছবি আঁকা! আবার ভালোবাসার সম্পর্কে যেমন মান-অভিমান বা ভালোলাগার পাশাপাশি কখনো মন্দলাগাও থাকে, তেমনি ভালো-মন্দ মিলিয়েই শামাও ছবি আঁকা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এর শুরুর গল্পটা মজার। শামা তখন সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। প্লে গ্রুপের ছাত্রী। একদিন তার বাবা তাকে পাশে বসিয়ে চোখের ছবি আঁকছিলেন। অর্ধেক আঁকার পর হঠাত্ উঠে গিয়ে খানিকক্ষণ পর ফিরে এসে দেখেন, ছোট্ট শামা পেন্সিল হাতে নিয়ে সেটা পুরোপুরি এঁকে ফেলেছে! সেই থেকে শুরু হলো। এরপর থেকে সবসময় বাবা-মা ছবি আঁকার জন্য উত্সাহ জুগিয়েছেন।
সিলেটের মেয়ে নুজহাত শামার বাবার নাম ডা. ইমরান আহমেদ ও মা নাসিমা আখতার। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়ছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি চলছে আঁকাআঁকি।
জানা গেল, পোর্ট্রেট ছবি আঁকতেই বেশি ভালো লাগে তার। নিপুণ হাতে বাস্তব ছবির মতো করেই আঁকেন বিভিন্ন পোর্ট্রেট। শতভাগ নিখুঁত করার জন্য কোনো কোনোটা চলে দু মাস-তিন মাস সময় ধরে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দৃশ্য কিংবা বিমূর্ত কোনো ছবিও আঁকেন মাঝে মাঝে। এসব ছবি আঁকায় চারকোল, তেলরং, রং পেন্সিল বা অ্যাক্রিলিকে ব্যবহার করলেও তার সবচেয়ে প্রিয় মাধ্যম জলরং ও পেন্সিল। এরমধ্যেই অংশ নিয়েছেন কয়েকটি প্রদর্শনীতে। গেলবছর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগেই শামার আঁকা ছবির একক প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রদর্শনীতে তার আঁকা পেন্সিল স্কেচ ও জলরঙের বেশকিছু ছবি প্রদর্শিত হয়। স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন। ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে ‘ব্রাশেজ অ্যান্ড পেন্সিলস’ নামে পেজ তৈরি করে সেখানে নিজের আঁকা ছবি পোস্ট করছেন তিনি। ইউটিউবে আপলোড করছেন ছবি আঁকার ভিডিও। দীর্ঘসময় ধরে ছবি আঁকতে তার ক্লান্তি নেই। তাহলে মন্দলাগা কোনটা? ‘যখন জোর করে আঁকতে হয়, কিংবা ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট থাকে!’ ছবি আঁকা কি কেবল শখ, নাকি ভবিষ্যতে পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে শামার উত্তর, ‘এখন তো স্থাপত্যে পড়ছি, এটিও শৈল্পিক জগত্। ভবিষ্যতে নিজেকে স্থপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। তবে যেহেতু ছবি আঁকাই আমার প্রিয় শখ, তাই এই শখ চিরদিনই থাকবে। আর শখ ও পেশাকে এক সুতোয় গেঁথে শিল্পী হিসেবেই পরিচিত হতে আমার কোনো আপত্তি নেই!’