পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ:ওয়াজি তাসনিম

স্বপ্ন গড়ার প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তির পর প্রথমদিকে ক্যাম্পাস জীবনের সাথে পরিচয় পেতেই চলে যায় কয়েকটি সেমিস্টার। ঠিক সে অনুযায়ী থাকে পড়ালেখার চাপ। ক্যাম্পাস জীবনে পড়ালেখার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করতে বেশ আগ্রহী থাকে শিক্ষার্থীরা। তবে ক্লাস, পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের কারণে হয়ত খুব বেশি সহজ হয়ে ওঠে না খণ্ডকালীন চাকরি কিংবা অন্যান্য কাজের সাথে জড়িত হওয়া। এসকল বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে অনেক নারী শিক্ষার্থী কাজ করছে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সংকলন করেছেন— ওয়াজি তাসনিম

তেহামি তারিতা

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তেহামি তারিতা। প্রিয় শখ ছবি আঁকা ও নিত্যনতুন কারুশিল্প জড়িত কাজ করা। সে থেকেই সূত্রপাত হাতের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের হিজাব পিন ও ব্রোজ তৈরি করা। হিজাব পরিহিতা মেয়েদের চাহিদা পূরণে তাই শুরু করেন অনলাইন বিজনেস। শুরু থেকেই বেশ ভাল চলছে তার অনলাইন ব্যবসা। ফেসবুক পেজের সাহায্যে অধিক জনপ্রিয়তা পায় তারিতার বিজনেস। নিজের হাতের তৈরি হিজাব পিন ও ব্রোজ ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করত সে। পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ খুব সহজ ছিল না তারিতার কাছে। তবে সময়ের কাজ সময়েই শেষ করা এবং কঠোর পরিশ্রমী হওয়ার ফলে বেশ লাভবান হয় সে। তারিতার মতে পারিবারিক সমর্থন ও নিজের ইচ্ছা শক্তি থাকলে খুব কম বয়সেই করা যাবে ভাল ভাল কাজ।

নাদিয়া পুতুল

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাদিয়া। কাজ করেছেন বিবিসি মিডিয়া একশনের সাথে। ডিজেস্টার ইমারজেন্সিস প্রিপিয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের প্রজেক্টটিতে কাজ করার সুযোগ হয় নাদিয়ার। বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগ সম্পর্কিত প্রজেক্টটি ত্রাণ, ক্যাম্পিং কিংবা দুর্যোগ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কিত উন্নয়ন করে থাকে। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক কিংবা মানব সৃষ্ট বিপর্যয়ের অভাব থাকে না। তাই প্রয়োজন প্রকৃত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি। নাদিয়া এরকম একটি কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে খুবই আনন্দিত।

নাদিয়ার মতে শুধু স্নাতক পাস করেই চাকরি করা উচিত্ নয়। প্রয়োজন আগে থেকেই কিছু মৌলিক শিক্ষার এবং স্নাতক পাশের পর চাকরির খোঁজে দেখা যায় এক নতুন বিড়ম্বনার। চাকরিদাতা একজন সদ্য গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তির কাছে চেয়ে বসেন কাজের অভিজ্ঞতা। যা বিশ্ববিদ্যালয় থাকা কালীন কাজ করা ছাড়া অসম্ভব। তাই নাদিয়া মনে করেন শিক্ষা জীবনে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রয়োজন। ‘কাজের ক্ষেত্র নারীদের সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়। আমি মনে করি এই কাজ ছাত্র জীবন থেকেই করা উচিত্’ বলেন নাদিয়া।

রেহনুমা আলম

একজন শিক্ষার্থী। একজন কর্মজীবী নারী। বর্তমানে স্টেট ইউনিভার্সিটির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে অধ্যয়নরত। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেন একটি পার্ট টাইম জব শুরু করার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাধিক ক্লাস দুপুর কিংবা বিকেলে থাকায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফ্রি থাকেন রেহনুমা। তাই সকাল টুকু কাজে লাগাতে বিভিন্ন যায়গায় ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে খণ্ডকালীন চাকরির খোঁজ পান তিনি। লালমাটিয়ার একটি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ স্কুলে এডমিন হিসেবে একটি খণ্ডকালীন চাকরি পেয়ে যান রেহনুমা। সেখানেই কাজ শুরু করেন। স্বল্প বেতনে খুব ভালই কেটে যায় তার দিন। প্রথম প্রথম চাকরির সাথে ক্লাস চালিয়ে যেতে সমস্যার মুখোমুখি হলেও পরবর্তীতে সে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন কর্মঠ রেহনুমা আলম। ছোট থেকেই সঠিক উপায়ে উপার্জনের আশা এবং নিজের আয় করা অর্থে জীবন চালানোর ইচ্ছে তার। সে থেকেই কিছু করার প্রচেষ্টা ছিল। কিছুদিন পরেই স্নাতক পাস তারপর রয়েছে আরও সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনা। অল্প বয়সেই চাকরি করার এই ব্যাপক ইচ্ছের মধ্যে লুকিয়ে ছিল আরও কিছু কারণ । দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মনোভাব উন্নত করার অদম্য ইচ্ছে পরিশ্রমী রেহনুমার। তিনি মনে করেন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হিসেবে শুধু পড়ালেখা না, পাশাপাশি কিছু কাজ করা প্রয়োজন। স্নাতক শেষ করেই সাথে সাথে চাকরি করতে গেলে দেখা দিতে পারে নানা রকম সমস্যা, সে কারণে উচিত্ আগে থেকেই কিছু শুরু করা। কর্মজীবী নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে রেহনুমার মতামত ‘আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা এরকম খণ্ডকালীন চাকরি করতে ইচ্ছুক তাদের উপযুক্ত পরিমাণে সুযোগ করে দেয়া। সুযোগের অভাবে অনেক আগ্রহী শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারছে না। সেই সাথে পরিবার থেকেও পরিপূর্ণ সমর্থন প্রয়োজন। কারণ ছাত্র জীবনেই পরিশ্রমী হয়ে ওঠা উচিত্ সকলের।’

নাজিফা নওশীন

রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী নাজিফা। ছোট থেকে বরাবরই লেখাপড়ায় ভাল ফলাফল করে আসছে নাজিফা। তাই ভালোলাগা থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া। নিজের জ্ঞান অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিতে কিংবা শিক্ষার অধিক চর্চা করতে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। একজন শিক্ষার্থীর বাসায় যেয়ে টিউশন পড়ানো দিয়েই শুরু। ধীরে ধীরে আরও দুজন শিক্ষার্থীকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে তুলছেন নাজিফা। তবে পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করতে কেমন লাগছে তার? উত্তরে নাজিফা বলেন, ‘নিজ বাসা থেকে বাহিরে এসে পড়ালেখা করতে যেয়ে সারাক্ষণ মনে হত ব্যস্ত থাকাটাই উপকারের। ব্যস্ত জীবন হয়ত বেশি উপভোগ করা যাবে। ক্লাস কিংবা আড্ডা ছাড়াও উচিত্ মৌলিক কিছু কাজ করা যা জীবনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে অনেকাংশে। সেখান থেকেই টিউশনের চিন্তাটা মাথায় আসে। বেশ ভাল লাগছে কাজ করতে।’ পড়ালেখার ক্ষতি হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা ঠিক সময়মত করলেও অতিরিক্ত কিছু সময় পাওয়া যায় যা আমি চাইলেই কাজে লাগাতে পারি। তা ছাড়া নিজের হাত খরচ টা পেয়ে যাই।’ নাজিফার মতে শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমী হতে হবে। দেশের বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীদের নিজের উপার্জন করা অর্থে পড়ালেখা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যাদের আর্থিক সমস্যা নেই তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনে কাজ করা উচিত্। তবে খণ্ডকালীন চাকরির ক্ষেত্র বাড়ালে উপকৃত হবে শিক্ষার্থীরা। শুধু রাজধানী ঢাকা নয় দেশের অন্যান্য শহরগুলোতেও থাকতে হবে কাজের ক্ষেত্র।

 

এ বিভাগের অন্যান্য