নতুন ডিসিদের জন্য কেন্দ্রের ৩ নির্দেশনা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮ মাস আগে মাঠ প্রশাসনের নয়া ডিসিদের প্রধান তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রশাসন। এগুলো হল- রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধ ও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ যতœবান হওয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে তাদের এ নির্দেশনা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, দিক-নির্দেশনামূলক ওই ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম, স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক প্রমুখ। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ২২ জন জেলা প্রশাসককে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়।

এতে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও নির্বাচনী মাঠ সাজানোসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতায় নানা ধরনের সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় তা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে মোকাবেলা এবং যে কোনো মূল্যে জনস্বার্থ রক্ষা করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, নির্বাচনী বছরে মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বিশেষ নজরে রাখা হয়। এ জন্য নতুন কর্মস্থলে নিয়োগের পর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রত্যেক সরকারের আমলেই এটি হয়ে আসছে। তবে এবার কিছু ব্যতিক্রম নির্দেশনা রয়েছে। কারণ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বড় দুই দলের মধ্যে এখনো বিরোধ রয়েছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন নিয়োগ পাওয়া একজন জেলা প্রশাসক ভোরের কাগজকে জানান, আলাদা করে নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। মাঠ প্রশাসনের সব কাজের মধ্যে নির্বাচনও একটি কাজ। সেই কাজের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে নির্দেশনায় দুয়েকটি কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া জঙ্গিবাদ নিরসনে ডিসিদের কি ভূমিকা হওয়া উচিত, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প তত্ত্বাবধানের বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর এখনো ৮ মাস বাকি। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। গত রবিবার ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহসহ ২২ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) পরিবর্তন হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক আদেশে ১৯ জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ এবং তিন ডিসিকে অন্য জেলায় বদলি করে। এ ছাড়া একই দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২৯ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করেছে। এর আগে ২০১৭ সালের ২ মে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ ২৪ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। ৯ মাসের ব্যবধানে ফের ডিসি পাল্টানো হয়।

এ রকম পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার মাঠ প্রশাসনের ডিসিদের দিক-নির্দেশনা ব্রিফিং করে কেন্দ্রীয় প্রশাসন। ব্রিফিংয়ের সমাপনী বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম লিখিত নির্দেশনায় বলেন, আপনাদের (ডিসি) সহযোগিতায় ক্ষমতার শেষ বছরে সরকার কাজের গতি আগের তুলনায় অনেক বেশি বাড়াতে চায়। আপনারা কর্মস্থলে সফল হলে ভবিষ্যতেও ভালো ফল পাবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাজ বুঝিয়ে নেয়ার পাশাপাশি পুরাতনদের অভিজ্ঞতার আলোকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করবেন। জনগণের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবেন। জেলার ছোটবড় সব সাংবাদিককে গুরুত্ব দিয়ে কথা বলবেন। তাদের কাছ থেকে নানা কৌশলে বিভিন্ন গ্রামের জুয়া, মদসহ অনৈতিক কাজের তথ্য নেয়ার চেষ্টা করবেন।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় এমপিদের সঙ্গে কৌশলী আচরণ করতে হবে। যতদূর সম্ভব এমপিদের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কাজের ব্যাপারে সর্বদা সৎ, নিরপেক্ষ ও একনিষ্ঠ থাকবেন। সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোনো ঘটনার খবর ই-মেইল ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে দ্রুত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসনে পাঠাবেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নতুন ডিসিদের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, চলতি বছরের শেষে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চাইবেন। মনে রাখবেন, জনগণের শান্তি প্রতিষ্ঠা আমাদের কাজ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম বলেন, মাঠ প্রশাসনে ই-উদ্যোগ, উদ্ভাবন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন সংক্রান্ত বিষয়াদি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক বলেন, সরকার স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। এ জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রাস্তাঘাটসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হচ্ছে। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকেও দৃষ্টি দেবেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত থাকেন জেলা প্রশাসকরাই। সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা থাকেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে। তবে কয়েকটি এলাকায় সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারকেও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়ার নজির রয়েছে। আর রিটার্নিং কর্মকর্তারাই নিজেদের পছন্দ মতো পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দিতে পারেন। ফলে ভোট কারচুপির পরিকল্পনা থাকলে আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পর ১৫ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত ডিসি, এসপি, ইউএনওসহ কিছু কর্মকর্তাকে ইসির সঙ্গে পরামর্শ না করে বদলি করা যাবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলতি বছরের শেষে বা ২০১৯ সালের প্রথম দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য