প্রশ্ন ফাঁস একটি জাতীয় সমস্যা থামবে কোথায়? মুহাম্মদ বদরুল ইসলাম শাকির

প্রশ্ন ফাঁস একটি জাতীয় সমস্যা এর দায়বদ্ধতা কার? দেশ,সমাজের, নাকি সরকারের? ছোট বেলায় পড়েছিলাম শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড” কিন্তু এ কথাটির গবেষণা করতে হচ্ছে কতটুকু সত্য ! দুঃখ জনক হলেও বলতে হচ্ছে আজকাল যে হাওে প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস হচ্ছে তা বলা বাহুল্য কেউ বলে শিক্ষাহিন ব্যক্তি পঙ্গু, কেউ বলে অন্ধ। শিক্ষার মানোন্নয়ন; শিক্ষা মানোন্নয়নের গুরুত্ব; বাংলাদেশে শিক্ষার বর্তমান অবস্থা; শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা শিক্ষার মানোন্নয়ন মান বা গুণ বলতে সাধারণভাবে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, পণ্য, ঘটনা, ফলাফল ইত্যাদির কাঙ্ক্ষিত অবস্থাকে বুঝানো হয়। নাকি গুণগত বা মানসম্পন্ন শিক্ষা বলতে শিক্ষার আদর্শ মানকে বোঝানো হয়, যা সেই শিক্ষা থেকে প্রত্যাশা করা হয়। শিক্ষার এই মানকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয় (ক) শিক্ষার পরিমাণগত মান এবং (খ) শিক্ষার গুণগত মান। শিক্ষা এমন একটি জিনিশ যা কেউ দেখতে পায় না। জন্মমাত্রই মানুষ মানুষ হয়ে উঠেনা। মানুষকে সত্যিকার মানুষ করে তুলে শিক্ষা। মানুষ মাত্রই শিক্ষার প্রযোজনিয়তা রয়েছে। শিক্ষার কারনেই মানুষ অন্যান্ন প্রাণী থেকে নিজেকে আলাদা ভাবতে পারে। শিক্ষা থাকা- নাথাকা দিক থেকে মানুষে মানুষে যেমন ব্যবধান সৃষ্টি করে তেমনি শিক্ষাই এক জাতি থেকে অন্য জাতিকে স্বতন্ত্র করে তোলে। বিখ্যাত ফরাসি সেনাপতি নেপুলিয়েন বুনাপেট বলেছেন “আমাকে শিক্ষিত একটি মা দাও, আমি উন্নত জাতি উপহার দেব”। মানুষের আতিœক ও সামাজিক উন্নতি বিধান করে এই শিক্ষাই। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই …শিক্ষিত জাতি কি আজ প্রশ্নফাসের অন্তরায় মাঝে বিরাজমান । গণমাধ্যম ঘাটলে দেখতে পাই ২০১৭ সাল ছিল প্রশ্নফাঁসের বছর। পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সব ক্ষেত্রেই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এবারও পরীক্ষার প্রথম দিন থেকে একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করলো প্রশ্নপত্র ফাঁসের।স্বাধীন বাংলাদেশের সন্তান আমরা স্বাধীনভাবে বাচঁতে চাই। কিন্তু আজ স্বাধীনভাবে লেখাপড়া করতে গিয়ে পরাধীনতার দন্ডেদন্ডিত কারন পরীক্সা মানে চিন্তা আর চিন্তা কবে যে প্রশ্নফাস হয় সেটা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। সুতারাং এই যখন বাস্তবতা তখন বলতে হেচ্ছে .কয়েক বছর ধরেই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাসের ঘটনা নিয়ে সারাদেশে তোলাপাড় হচ্ছেই। প্রতিটি পরিক্ষার আগেই ফাঁস হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস একটি জাতীয় সমস্যা। প্রশ্নফাঁসের কারনে দেশ আজ বড় ধরনের বিপর্ষয়ের মূখে পড়ছে। এর প্রতিবাদ না করলে দেশ আরোও বড় বিপর্ষয়ের মূখে পড়বে। স্যার, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল (০৫জুন, ২০১৪ সালে) কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে অনশন পালনকালে গনমাধ্যমকে তিনি বলেন, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় সরকারকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরোও বলেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্ষায়ের লোকজন জড়িত। তা না হলে এটি দেখানোর মতো দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারত না। সরকারি কেউ জরিত কি না তা তদন্ত করা হউক।প্রশ্নফাঁস রোধে পরীক্ষা চলাকালে ইন্টারনেট সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্ত ও নেওয়া হয়। চলতি এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্ষন্ত সকাল ৮ থেকে সাড়ে ১০টা পর্ষন্ত ইন্টারনেটের গতি সীমিত রাখার বিষয়ে একটি নির্দেশনা ইন্টারনেট সেবাসংক্রান্ত সব প্রতিষ্টানকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন (বিটিআরসি) বিষয়টি নিশ্চিত করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম আলোকে বলেন,সরকারি নির্দেশনা অনুসারে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পরে ও রোধ করা সম্ভব হয়নি। পরীক্ষার আগেই বিভিন্নজনের কাছে প্রশ্ন পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চষে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও তারা মূলত প্রশ্ন বেচাকেনায় যুক্ত।কোথায় থেকে কেমন করে প্রশংগুলো ফাঁস হচ্ছে,সেটিই শনাক্ত হচ্ছে না।প্রশ্নফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরুষ্কার ঘোষনা করেও প্রশ্ন ফাঁস থামানো যাচ্ছেনা। কারা জরিত তার মূল কারন উদঘাটন করা যাচ্ছে না। প্রশ্নফাঁস প্রসঙ্গে ড. জাফর ইকবাল স্যার বলেন, শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ বা ইন্টারনেট বন্ধ রাখা কোনটাই সঠিক সমাধান নয়। তিনি আরোও বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের মূল কারণ উদঘাটন করে এর সমাধান করাটাই সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমি শিক্ষার্থী হিসেবে বলছি, এতে শিক্ষামন্ত্রী কেন দায় নিবেন? শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করলেই কী প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা যাবে? অনলাইনে জানতে পারলাম,শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করবেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আপনি পদত্যাগ করবেন না। কেনই বা পদত্যাগ করবেন। এই দায় আমাদের সবার, কারণ মূলকারণ উদঘাটন করা যাচ্ছেনা! কে কিভাবে প্রশ্নফাঁসে জরিত দা খুঁজে বের করা হউক কোন কোন অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেলো। যথারীতি এবারও শিক্ষামন্ত্রী বললেন, ‘মূলত এর লক্ষ্য হলো সরকার বা মন্ত্রনালয়কে মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা’।‘কোচিং সেন্টারগুলো প্রশ্নপত্র ফাঁসের আখড়া’, একথা শিক্ষামন্ত্রীর নিজের। বছর দুয়েক আগে তিনি এও বলেছেন, “দেশে এখন ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং বাণিজ্য হচ্ছে”। প্রায় সাত/ আট বছর আগে আমার নেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকার সব সময় আন্তরিক। তবে একদিনে বা রাতারাতি তা বন্ধ করা যাবে না।” সেই রাত কিংবা দিন আজ অবধি আসেনি। পশ্নফাঁস কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হুঙ্কার, আশ্বাস, ভবিষ্যদ্বাণী কিছুই কাজে আসছে না। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডও তা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনো শিক্ষার একটি মানদণ্ড প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেখানে যদি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো বিষয় ঘটে তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী আছে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছি আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে? কোথায় যাচ্ছে আমার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা? প্রশ্ন বারবার মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ৬-৭ সেট প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করা যেতে পারে। পরীক্ষার দিন সকালে লটারি করে ঠিক করা যেতে পারে কোন সেটে পরীক্ষা হবে। প্রশ্ন গুলোও হবে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। সর্বশেষ হলো এসএসসি পরীক্ষা,প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস। প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক প্রায় পরীক্ষারই নিয়মিত প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় খোদ শিক্ষামন্ত্রী নাহিদও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। দেশে প্রশ্ন ফাঁস এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এরকম সাধারণ ঘটনার সাথে অসাধারণ সব ব্যক্তিরা জড়িয়ে পড়েছেন। এই প্রশ্ন ফাঁস এখন বিরাট বাজারে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী ছাত্র–ছাত্রনেতা শিক্ষক অভিভাবক, কোচিং সেন্টার প্রেসের কর্মচারী–এরাই এই বাজারের অংশ। শিক্ষা ব্যবস্থায় যত বেশি পরীক্ষা বাড়ছে ততই বাড়ছে প্রশ্ন ফাঁসের এই বাজার। সিআইডির কর্মকর্তারা বলেছেন, “পরীক্ষার আগের রাতে রীতিমতো কোটি টাকার প্রশ্ন ফাঁস আর জালিয়াতির ইন্ডাস্ট্রি গড়ে বসে আছে কয়েকটি চক্র। একটি ফটকা বাজারে যত রকমের উপকরণ থাকে তার সবই রয়েছে এই প্রশ্নের বাজারে। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ স্যারের কথা দিয়ে শেষ করি “শিশুরা এখন শিক্ষার্থী নয় পরীক্ষার্থী। আমার অনুরোধ যারা শিক্ষাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করবেন তারাই শিক্ষকতা পেশায় এগিয়ে আসবেন। অন্যকোন উপায় না থাকায় জীবিকা অর্জনের শেষ উপায় হিসেবে নয়।”

লেখক সিলেট

এ বিভাগের অন্যান্য