মৃগীরোগী নিয়ে অযথা ভয় পাবেন না
সিলেটের সময় ডেস্ক :
মৃগী একটি রোগ। স্নায়ুর জটিলতাজনিত এ রোগে আক্রান্ত রোগীর খিঁচুনি হয় এবং এটি হয়ে থাকে হঠাৎ হঠাৎ। রোগী নিয়ে যখন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ যান এবং যখন চিকিৎসক রোগীর রোগের ইতিহাস শুনে কাউকে বলেন যে, আপনার প্রিয়জন মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তখন পরিবারের সবাই ভয়ে কুঁকড়ে ওঠেন। এমন অনেকেই আছেন, যারা শিশুর লেখাপড়া বন্ধ করিয়ে দিয়ে থাকেন। তারা ভাবেন, মৃগীরোগ হলে কেউ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন না। এ কথা মোটেও সত্য নয়। সম্পূর্ণই ভুল ধারণা।
অনেকে বলে থাকেন, লেখাপড়া করে আর কী-ইবা হবে, যেখানে আমার সন্তানই স্বাভাবিক নয়, আমার সন্তান তো আর স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে না।
এক্ষেত্রে সত্যিটা হলো, মৃগীরোগ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। আলেকজান্ডার দি গ্রেটের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। তার মতো দ্বিগবিজয়ী যোদ্ধা কমই জন্মেছে এই পৃথিবীতে। অথচ তিনি কিন্তু ছিলেন মৃগীরোগে আক্রান্ত।
বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটলও ছিলেন মৃগীরোগে আক্রান্ত। শুনলে হয়তো সবচেয়ে অবাক হবেন যে, বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলও কিন্তু মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি ডিনামাইটের আবিষ্কারক ছিলেন। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩৫০টি জিনিসের স্বত্ব ও ২০টি দেশে অনেক কারখানা এবং ল্যাবরেটরির মালিক ছিলেন। যদি স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে না পারতেন, তাহলে এত্ত বড় বিজ্ঞানী কিভাবে হলেন তিনি?
আমেরিকা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কথা আমরা সবাই জানি। থিওডোর রুজভেল্ট ছিলেন আমেরিকার ২৬তম প্রেসিডেন্ট। এ ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি কিন্তু মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলেন। শুধু এরাই নন, আরও অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তি মৃগীরোগী ছিলেন। এরা যদি মৃগীরোগ নিয়ে বিশ্বজয় করতে পারেন, বিশ্ববরেণ্য হতে পারেন, তাহলে আপনার শিশু বা প্রিয়জন কেন নয়?
কেন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, এর প্রকৃত কারণ আজও অজানা। তবে মস্তিষ্কে আঘাত, স্ট্রোক, মস্তিষ্কে টিউমার বা সংক্রমণ, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি এ রোগের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। জিনগত মিউটেশন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
মৃগীরোগে আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে পড়াশোনা করতে পারে। স্বাভাবিক অন্য শিশুর মতোই সে-ও খেলাধুলা করতে পারে। তবে সাবধান হতে হবে মৃগীরোগ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পানিতে সাঁতার কাটা, নদী-পুকুরে নামা, আগুনের কাছে যাওয়া, ধারালো বস্তু নিয়ে কাজ করা, গাড়ি ড্রাইভিং করা এবং একাকী রাস্তা পারাপার হওয়া যাবে না। রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্বাভাবিক সব কিছুই তার পক্ষে করা সম্ভব।
স্কুলের শিক্ষকদের আপনার সন্তানের মৃগীরোগের কথা জানিয়ে রাখা সবচেয়ে ভালো কাজ। খিঁচুনি শুরু হলে করণীয় কী, তা-ও শিক্ষকদের জানিয়ে রাখুন। মৃগীরোগ হলে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে কোনো ধরনের বাধা নেই। তবে মৃগীরোগের ওষুধ নিয়মিতভাবে খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একদিন ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। ওষুধ বন্ধ করলে আবার খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। শিশুর হাতে ওষুধ না দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওষুধ খাওয়ানো উত্তম।
মৃগীরোগে আক্রান্ত শিশুর অভিভাবদের জন্য পরামর্শ হলো, আপনার সন্তানের মৃগীরোগ নিয়ে অযথা হতাশাগ্রস্ত হবেন না। যথাযথ পরিচর্যা করুন। আপনার সন্তান ভালো থাকবে, আনন্দে জীবন-যাপন করতে সমর্থ হবে।
লেখক : স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক, ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস), আগারগাঁও, ঢাকা