সিলেটে এসেই বদলে যায় সোহাগ
ডেস্ক রিপোর্ট :
‘বাড়িতে থাকার সময়ে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে যেতো সোহাগ মিয়া। সিলেট আসার পরই হঠাৎ বদলে যায় সোহাগ। এসময় সে নামাজি হয়ে যায়। সিলেটে এসেই সে বিপথে চলে যায়। বাড়িতে এলে বেশিরভাগ সময় ঘরেই থাকতো। কারও সঙ্গে খুব বেশি মিশতো না।’ এমনটিই বলেছেন সোহাগ মিয়ার বাবা ছাদিকুর রহমান।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলা মামলায় এই সোহাগ মিয়াকে নগরীর কালিবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে ৭ দিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। জাফর ইকবালের উপর হামলাকারী ফয়জুর হাসানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার বন্ধু সোহাগে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশের।
সোহাগ মিয়ার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের উমেদনগর গ্রামে। তার বাবা ছাদিকুর রহমান ওরফে ছও মিয়া রাজানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরআগে তিনি এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টি করতেন।
ছাদিকুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ -সাত বছর আগে থেকেই সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে সিলেটে গিয়ে ব্যবসা শুরু করে। সেখানে গিয়ে সে হয়তো কোনও মতাদর্শের দিকে ধাবিত হয়। পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকলেও সে কাপড়ের ব্যবসার বাইরে অন্য কি করে, তা আমার জানা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর বিষয়টি জানতে পারি।’
ছাদিকুর রহমান জানান, তার পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। সোহাগ মিয়া দশ সন্তানের মধ্যে ষষ্ঠ ও ছেলেদের মধ্যে তৃতীয়। তার জন্ম ১৯৯৪ সালে। সে গ্রামের উমেদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে। পরে কৃষ্ণনগর পাবলিক হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগে সে একদিনের জন্য বাড়ি এসেছিল এবং সেদিনই সে সিলেট ফিরে গেছ।
ছাদিকুর রহমান বলেন, সোহাগ ঢাকা থেকে কাপড় কিনে এনে সিলেটে পাইকারি বাজারে বিক্রি করতো। ৫-৭ বছর ধরে সিলেটে বাসা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছে।
তিনি বলেন, ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় সোহাগ যদি দোষী হয়, তাহলে আইনত যে শাস্তি হবে— তা আমি মেনে নেবো। আর তার কোনও সম্পৃক্ততা না থাকলে, তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘ছাদিকুর রহমান ছাও মিয়া রাজানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি আগে কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। এলাকায় তিনি সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।’ তবে, ছাও মিয়ার ছেলে সোহাগকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না। বলে জানান।
রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরী বলেন, ‘সোহাগ সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবার এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে।’
রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মছদ্দর মিয়া বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে সোহাগ মিয়া সিলেটে কাপড়ের ব্যবসা করে। মাঝে-মধ্যে বাড়ি আসতো, আবার চলেও যেতো। তার বাবা প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’
গত ১৮ মার্চ রাতে নগরীর কালীবাড়ি আবাসিক এলাকা থেকে সোহাগকে আটক করা হয়। ১৯ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এসময় পুলিশ জানায়, জাফর ইকবালের উপর হামলাকারী ফয়জুরকে তার বন্ধু সোহাগই জঙ্গি মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করে।