অ্যাপনির্ভর মোবাইল পেমেন্ট স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে কর্মজীবী নারীর

৮ ঘণ্টা অফিস, ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা যাতায়াত, ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার অবশ্য প্রয়োজনীয় ঘুম, ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার সাংসারিক কাজের বাইরের যে সামান্য সময়টুকু থাকে তা সন্তানদের জন্য বরাদ্দ রাখেন কর্মজীবী মায়েরা। বিমান চালনা থেকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বুটিক শপ থেকে ভারী শিল্প উদ্যোক্তা সব খাতেই নারীর পদচারণা বাড়লে সাংসারিক দায়িত্ব খুব একটা কমেনি। প্রতিদিনে ব্যস্ত রুটিনে তাই সব ধরনের কেনাকাটাই কর্মজীবী নারীদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে অনলাইন বাজার বা অনলাইনভিত্তিক সেবা খাতগুলো।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুসারে দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭, বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন। আর তৈরি পোশাক খাতের ৮০ ভাগ কর্মী নারী।

কর্মজীবী নারীদের অনেকে প্রতিদিনের বাজার সদাই, ফ্যাশন পণ্য, বইপত্র, বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী, তৈরি খাবারসহ সব ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রেই অনলাইন বাজারগুলোর ওপর নির্ভর করেন। সে কারণে বাংলাদেশে ই-কর্মাস বা ফেসবুকভিত্তিক এফ-কমার্স সার্ভিসের উল্লেখযোগ্য মাত্রার সম্প্রসারণ হয়েছে। একটি হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ই-কর্মাস এবং ৮ হাজারের মতো এফ কমার্স রয়েছে। তা ছাড়া সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে আড়ং, ইয়োলো বা বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলো অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে পণ্য বিক্রি করছে।

ব্যাংক কর্মকর্তা নওরীন তাবাসসুম বলেন, আমার জন্য কেনাকাটার সুযোগ তৈরি হয় প্রায় মাঝরাতে। যখন সব দোকানপাট বন্ধ। তাই প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর জন্য আমি অনলাইন বাজারই বেশি ব্যবহার করছি। উচ্চমাত্রার অনলাইন ব্যবহারকারী হওয়া সত্ত্বেও নওরীন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দেশে কেনাকাটাকে অনলাইন বলা ভুল হবে। কারণ অনলাইনে পণ্য দেখে আমরা এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অফলাইনে পেমেন্ট করছি। ফলে ঝামেলা কিছুটা থেকেই যাচ্ছে। মোবাইল দিয়ে সহজে অনলাইন পেমেন্ট করার সুযোগ তৈরি হওয়া প্রয়োজন।

গবেষণায়ও মেলে নওরীনের অভিযোগের সমর্থন। বেটার দেন ক্যাশ অ্যালায়েন্স পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, অনলাইন পেমেন্টের হার এখনও ১ শতাংশের মতো।

বইপ্রেমী কর্পোরেট কর্মকর্তা শায়লা নিয়মিত বই কেনেন অনলাইন শপ থেকে, তৈজসপত্র থেকে শুরু করে গহনা বা পোশাক সবই কেনেন অনলাইনে। কখনও কার্ড কখনও বা বিকাশে পেমেন্ট করেন। শায়লা বলেন, ক্যাশ অন ডেলিভারিতে আবার আমার নির্ভরতা থাকে। কখন কোথায় পণ্য ডেলিভারি হবে তা নিয়ে বাড়তি ঝামেলা এড়াতে আমি অনলাইন পেমেন্ট করি। তবে অনেক সময় প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনা বা অনলাইন পেমেন্টের সুযোগ না থাকায় ক্যাশ অন ডেলিভারি করি। প্রযুক্তিতে মোটামুটি অভ্যস্ত শায়লার অভিযোগ অনলাইন পেমেন্টের পদ্ধতিটা খুব সহজ নয়। সচেতনতার সঙ্গে অনেক ধাপ অতিক্রম করে অনলাইনে পেমেন্ট করতে হয়। পদ্ধতিটা সহজ হলে সময় বাঁচত এবং আমার মতো অনেকেই অনলাইনে পেমেন্ট করত। ফলে কর্মজীবী নারীদের জীবনে আরও স্বাচ্ছন্দ্য যোগ হতো।

আইন পেশায় নিয়োজিত শ্রেয়া সুস্মিতার অভিমতও একই ধরনের। শ্রেয়া লেখাপড়া করেছেন লন্ডনে। তখন থেকেই অনলাইনে পণ্য কেনায় অভ্যস্ত সে। এমনকি রাতের খাবার বা বাসায় বন্ধুদের গেট টুগেদারগুলোতে শ্রেয়া পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনায়। তার কর্মব্যস্ত জীবনে প্রযুক্তিগত এ সুবিধাকে আশীর্বাদ মনে করে সে। তবে শ্রেয়া বলেন, বিদেশে মোবাইল দিয়ে একটা কিউআর কোড স্ক্যান করে সহজেই পেমেন্ট করা যায়। আমাদের অনলাইন উদ্যোক্তা বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিদেশের মতো মোবাইল অ্যাপভিত্তিক সহজ পেমেন্টের সুযোগ কাজে লাগালে কর্মজীবীর নারীর স্বাচ্ছন্দ্য আরও বাড়বে।

এ বিভাগের অন্যান্য