সবকিছুর সংস্কার প্রয়োজন নেই, এটা নির্বাচিতরা করবে : ফখরুল

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় হিসেবে আমাদের অসহিষ্ণু হলে চলবে না, সহিষ্ণু হতে হবে। ১৭ বছরের জঞ্জাল ১৭ দিনে কিংবা ১৭ মাসেও সরানো সম্ভব নয়, এটাই সত্য। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে হবে। আমরা বারবার বলেছি যে, সবগুলো সংস্কারে হাত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন নেই। নির্বাচিত যে পার্লামেন্ট আসবে, তারা সেই সংস্কারের কাজগুলো করবে।

বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি এলাকার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হবে নির্বাচনের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা; সবাই যেন ভোট দিতে পারে এবং সবাই যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর আওয়ামী লীগ যে ভোট ব্যবস্থার প্রচলন করে গেছে সেটিকে নির্মূল করে নিরপেক্ষ লোকজনকে নির্বাচনের জায়গাগুলোতে বসানো; বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ করা, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা; নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য এগুলোই প্রধান কাজ।

সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা রিজেক্ট করেছি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন সম্ভব নয়।

সবাইকে সতর্ক করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদের প্রধান হোতা শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন এবং ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে; এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। না হলে জাতি হিসেবে আমরা অনেক বড় বিপদের সম্মুখীন হবো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্জনকে ধ্বংস করতে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু ব্যক্তি বা কিছু লোক চেষ্টা করছে। এখানে আল্টিমেটলি হেভি টু অর দ্য ডিজাস্টার অ্যাগেইন, আমি এই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাব। এই মুহূর্তে আমরা আরেকটা বিপর্যয় গ্রহণ করতে পারি না।

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আমি মনে করি যে মতামত দেওয়া সমীচীন নয়। কে রাজনীতি করবে আর কে করবে না এই মতামত দেবে জনগণ। নির্বাচনে যারা জনগণের কাছে খারাপ হয়ে যাবে, তারা বাতিল হয়ে যাবে অথবা পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত নেবে। আমি গণতান্ত্রিক ব্যক্তি, আমি বিশ্বাস করি যে, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়টা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, এটা জনগণের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের আমলের চেয়ে অনেক ভালো। কারণ প্রথমত হচ্ছে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারো নিয়ন্ত্রণে নেই; দ্বিতীয়ত হচ্ছে একটা ভয়াবহ ধ্বংসের মধ্য থেকে তাদের তুলে এনে… যেখানে পুলিশ বাহিনী ফেল করেছিল, সেখান থেকে তাদের নিয়ে এসে একটা সিস্টেমের মধ্যে ও দেশপ্রেমের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এটা বিরাট সফলতা। আমি মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও সফল হবে।

রংপুরের কোনো উপদেষ্টা নেই— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না; কারণ বিষয়টা তো আমাদের না, এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার। উনি উনার মেধা, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা দিয়ে বিবেচনা করবেন; যদি কোনো সমস্যা থাকে সেটির সমাধান করবেন। আর যদি দেখেন কোথাও কোনো অসামঞ্জস্য হচ্ছে, সেটিও তিনি দূর করবেন। আমি এটা প্রধান উপদেষ্টার ওপর ন্যস্ত করতে চাই।

জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বিএনপির বার্তা কী? এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিকে রক্ষা করতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন তা হলো ঐক্য। ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকার তারা যে কাজটা খুব সফলভাবে করেছে, সেটি হলো জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এ বিভক্তি দূর করে আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই।

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ জেলা, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য