কেমন হবে জাহান্নামের আগুন
সিলেটের সময় ডেস্ক :
নবী করিম (সা.) উম্মতকে শেখানোর জন্য বেশি বেশি জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। কেননা দুনিয়ার আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের এক ভাগ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৮৪৩)
জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর পর্যন্ত প্রজ্বালিত করা হলো, এক পর্যায়ে তা লাল হয়ে যায়, অতঃপর আরো এক হাজার বছর, এক পর্যায়ে তা সাদা হয়ে গেল, অতঃপর আরো এক হাজার বছর প্রজ্বালিত করা হলো, অবশেষে তা কালো হয়ে গেল, এখন তা একেবারে কালো। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬০০)
জাহান্নামে যার সবচেয়ে কম আজাব হবে, তাকে আগুনের জুতা পরিধান করানো হবে, যার কারণে তার মগজ এমনভাবে ফুটতে থাকবে, যেমন তামার পাতিল ফুটতে থাকে, সে মনে করবে যে সবচেয়ে বেশি আজাব তাকেই দেওয়া হচ্ছে, অথচ তার ওপর সবচেয়ে হালকা আজাব হচ্ছে।(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬৪)
দুনিয়ার আগুন সহ্য করার ক্ষমতা কারো নেই, তাহলে জাহান্নামের আগুন কিভাবে সহ্য হবে? শুধু তাই নয়, আগুন ছাড়াও আরো অনেক ভয়ংকর আজাব হবে সেখানে। সুতরাং জাহান্নামের ভয়াবহতা, পুলসিরাতের বিপদ এবং আখিরাতে বাঁচার চেষ্টা করার কোনো বিকল্প নেই। ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় থাকা অবস্থায় কিয়ামত সম্পর্কে বেশি চিন্তা-ভাবনা করবে, সে সেই ভয়াবহতা থেকে বেশি নিরাপদ থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি দুটি ভয় একত্র করেন না।
সুতরাং যে দুনিয়ায় এই ভয়াবহতার প্রতি ভীত থাকে, সে আখিরাতে তা থেকে নিরাপদ থাকবে এবং ভয় দ্বারা নারীদের মতো কান্নাকাটি করা নয় যে চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত করবে এবং সেমা (জিকির) করার সময় অন্তর নম্র হয়ে যায়, অতঃপর তোমরা তা ভুলে নিজেদের খেলাধুলায় লিপ্ত হয়ে যাও। এই অবস্থা ভয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, যে ব্যক্তি যে জিনিসকে ভয় করে, তা তাড়াতে থাকে এবং যে জিনিসের আশা রাখে তা চায়। সুতরাং তোমাদের ওই ভয়ই মুক্তি দেবে, যা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতা থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতি ধাবিত করে।’ (ইহইয়াউল উলুম, ৫/২৮৬-২৮৭)
যদি আমরা জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচতে চাই এবং জান্নাতের স্থায়ী নিয়ামতের হকদার হওয়ার আকাঙ্ক্ষী হই, তবে আমাদের সব ধরনের গুনাহ যেমন—নামাজ ছেড়ে দেওয়া, দাঁড়ি মুণ্ডন করা বা এক মুষ্টি থেকে ছোট করা, পিতা-মাতাকে কষ্ট দেওয়া, নারীদের বেপর্দা বাজারে ঘুরাফেরা করা, হারাম উপার্জন করা, সুদি ব্যবসায় অংশ নেওয়া, খারাপ গালাগাল, গিবত, চুগলি ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করা এবং বেনামাজি ও ফ্যাশন পূজারি মন্দ বন্ধুদের সঙ্গে উঠবস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আর অর্জন করতে হবে খোদাভীতি। খোদাভীতি এমনই এক ওষুধ, যা দ্বারা গুনাহের রোগের চিকিত্সা সম্ভব। যতক্ষণ পর্যন্ত এই মহান নিয়ামত অর্জিত হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত গুনাহের প্রতি ঘৃণা এবং নেকির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব। আসুন! অন্তরে খোদাভীতির প্রদীপ জ্বালাতে খোদাভীতিতে কান্না করার ফজিলত সম্পর্কিত তিনটি হাদিস শ্রবণ করি—
১. দুটি চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না—একটি হলো সেই চোখ, যা রাতের কোনো অংশে আল্লাহ তাআলার ভয়ে কাঁদে এবং দ্বিতীয়টি ওই চোখ, যা আল্লাহ তাআলার পথে পাহারা দিয়ে রাত অতিবাহিত করে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৪৫)
২. এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কোন জিনিসের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারব? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নিজের চোখের অশ্রুর মাধ্যমে; কেননা যে চোখ আল্লাহ তাআলার ভয়ে কান্না করে, তাকে জাহান্নামের আগুন কখনো স্পর্শ করবে না।
(আত তারগিব ওয়াত তারহিব, ৪/ ৯৮)
৩. তিন লোকের চোখ জাহান্নাম দেখবে না। একটি হলো ওই চোখ, যা আল্লাহ তাআলার পথে পাহারা দিল, দ্বিতীয়টি হলো ওই চোখ, যা আল্লাহ তাআলার ভয়ে কান্না করে এবং তৃতীয়টি হলো ওই চোখ, যা আল্লাহ তাআলার হারামকৃত জিনিসের দিকে দেখা থেকে বিরত থাকে। (মুজামুল কাবির, মুসনাদে বাহাজ বিন হাকিম, হাদিস : ১০০৩)
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ইরশাদ করতে শুনেছি : হে লোকেরা! কান্না করো। যদি তোমাদের কান্না না আসে তবে কান্না করার চেষ্টা করে কান্না করো, কেননা দোজখিরা দোজখে কান্না করবে, এমনকি তাদের অশ্রু তাদের চেহারায় এমনভাবে বয়ে যাবে যে যেন তা নদী, এক পর্যায়ে অশ্রু শেষ হয়ে যাবে; অতঃপর তাদের রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে এবং সেই রক্ত এতই বেশি প্রবাহিত হবে যে যদি এতে নৌকা চালানো হয় তবে নৌকা চলবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৬)