বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারি সাধারণ মানুষকে উপকৃত করবে : প্রণয় ভার্মা
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অংশীদারি অবশ্যই উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষকে উপকৃত করবে এবং তাদের সম্পর্ক সব সময় জনকেন্দ্রিক।
ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংযোগের বাস্তবতা এবং আমাদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সুবিধার যৌক্তিকতাই আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নেবে।’
তিনি আরো বলেন, তারা একটি ‘গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বাংলাদেশকে সমর্থন করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।
ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের সময় হাইকমিশনার ভার্মা বলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখেন এবং বাংলাদেশের জনগণের আগামীর যাত্রায় মঙ্গল কামনা করেন।
হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো জোরদার হয় এই বিশ্বাস থেকে প্রতিবেশী হিসেবে আমরা সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি। আমাদের শান্তি, নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি আন্তঃসম্পর্কিত।
হাইকমিশনার ভার্মা বলেন, তাদের পারস্পরিক আন্তঃসংযোগ এবং অংশীদারিমূলক আন্ত নির্ভরশীলতা দ্রুত পরিবর্তিত সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সমাজ, জনগণ এবং ব্যবসায়কে আরো কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে যে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন ঘটেছে এবং যা এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করেছে—তা পারস্পরিক সংবেদনশীলতার ফলাফল, যা আমরা একে অপরের উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি দেখিয়েছি।
দুটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজের কথা পুনর্ব্যক্ত করে ভার্মা বলেন, তারা পরস্পর এই অঞ্চলকে অনেক কিছু দিতে পারে। যখন তারা একসঙ্গে কাজ করে এবং তাদের ভৌগোলিক নৈকট্যকে নতুন সুযোগ হিসেবে রূপান্তরিত করে।
পঁচাত্তর বছর আগে ১৯৫০ সালে ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের জনগণ তাদের গণপরিষদের মাধ্যমে নিজেদের সংবিধান রচনা করেছিল এবং ভারতকে একটি সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছিল।
এই ৭৬ বছর ভারতের জন্য দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্ত হয়ে একটি আধুনিক সক্ষম জাতি হিসেবে রূপান্তর একটি অসাধারণ যাত্রা।
এই রূপান্তর শুধু অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেই নয়, সুপ্রশাসনের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতীয় এই কূটনীতিক বলেন, ‘এটি প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের ক্ষমতায়নের বিষয়। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই উন্নয়ন সুরক্ষিত করার বিষয়।’
ভার্মা বলেন, ভারতের বিশাল আকার, ক্ষমতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে ভারতের রূপান্তর আজ নতুন সক্ষমতা তৈরি করছে এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, এই যাত্রায় বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, অভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অভিন্ন ইতিহাস ও ভৌগোলিক অবস্থানে যুক্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অভিন্ন ত্যাগের কারণেও আবেগগতভাবে সংযুক্ত।
হাইকমিশনার বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক সব সময়ই জনকেন্দ্রিক। সীমান্তের দুই পাশে পারিবারিক ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত। সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পের প্রতি আমাদের অভিন্ন ভালোবাসা আমাদের বন্ধনকে সংজ্ঞায়িত করে।’
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামের কাজগুলো সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে সংযুক্ত করেছে। নৃত্য, থিয়েটার এবং সিনেমার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকেও সংযুক্ত করেছে। দুটি জাতির মানুষের মধ্যে একটি গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে—যা পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধাকে উৎসাহিত করে।