গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণসভায় আ. লীগ নেতা! সমালোচনার ঝড়

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ও আহতদের স্মরণে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগের এক নেতার উপস্থিতি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওই নেতা সভায় কিভাবে অংশ নিয়েছেন, তাকে কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তা নিয়ে গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা চলছে।

জানা গেছে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১১টায় রাঙ্গাবালীতে একটি স্মরণসভার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পটুয়াখালী জেলা কৃষক লীগের সদস্য ও বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

 

সভায় থাকা ওই ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। 

ছবিতে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসানের সামনেই বসে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হোসাইন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চেয়ার থেকে চারটি চেয়ার পরেই ছিলেন ওই নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় থাকা কয়েক ব্যক্তি জানান, শুধু ফরহাদ হোসেন একাই নয়, ওই সভায় পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী একাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।

যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ইমরোজ মাহমুদ রুদ্র এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘দেড় হাজার শহীদের সাথে বেঈমানি করলেন? আজকে রাঙ্গাবালী উপজেলায় জুলাই বিপ্লবের শহীদ এবং আহতদের স্মরণে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। গুড ইনিশিয়েটিভ, কিন্তু কথা হচ্ছে, যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের মেরে শহীদ করল, তাদের পাশে নিয়ে শহীদদের স্মরণে সভা করলেন? এটা কি শহীদদের সাথে তামাশা নয়? আপনাদের স্মরণসভায় ছাত্র আন্দোলনের সময় মাঠে সক্রিয় ছিল এমন প্রতিনিধিরা কয়জন ছিল? আওয়ামী লীগের পোস্টেড নেতাকে পাশে রেখে শহীদ স্মরণসভা! বাহ্! ঘৃণাভরে নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

সরকারি তিতুমীর কলেজের রসায়ন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বাহাউদ্দীন হাসান বিপ্লব ‘আমাদের রাঙ্গাবালী’ নামে এক ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের আর পুলিশের গুলিতে পিটুনিতে আমাদের হাজারখানেক ভাইবোন শহীদ হইছে।

আরো কয়েক হাজার আহত হইছে। তাদের কেউ কেউ হাত হারাইছে। পা হারাইছে, চোখ হারাইছে। এর আগে গত ১৫ বছর এমন এক বিভীষিকার অপশাসন চালাইছে যে ফেইসবুকের এক স্ট্যাটাসের কারণে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে জেলখানায় পাঠায়ে দিত। ঘর থেকে রাতের বেলা ধইরা নিয়া গুম কইরা ফালাইত।
লাশ পাওয়া যাইত শীতলক্ষ্যায়। এই ইতিহাস বাদ দিয়া এই ফ্যাসিজমরে প্রতিদিন ফ্যাসিস্ট বইলা নিজেদের ঈমান নবায়ন না কইরা বাংলাদেশে আগামী দিনের রাজনীতির আর কোনো রাস্তা খোলা নাই। 

এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ-আহতদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। যে ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে, ওনার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল ছিলাম না। ওনাকে আমাদের পক্ষ থেকে দাওয়াত করা হয়নি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেউ ওনার সম্পর্কে আমাদেরও অবহিত করেননি। ওনার পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারলে আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারতাম।

এ বিভাগের অন্যান্য