অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন : সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক শাহ পরানের পদ স্থগিত

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকা থেকে পাথর ও বালু অবৈধভাবে উত্তোলনের সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহ পরানের পদ স্থগিত করেছে দল। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তার পদ স্থগিত করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- রফিকুল ইসলাম শাহ পরানের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ পাথর ও বালু অবৈধভাবে উত্তোলনের সুষ্পষ্ট অভিযোগ থাকায় দলীয় শৃঙ্খলা এবং নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জন্য তার সকল দলীয় পদ স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

জানা যায়, বালু-পাথর আহরণে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হওয়ায় প্রকৃতি সুরক্ষায় গোয়াইনঘাটের ডাউকি-জাফলংকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করার পর ডাউকি-পিয়ান নদীর মোহনায় জমেছিল কয়েক স্তরে হাজার হাজার ঘনফুট পাথর। বছর বছর পরিমাপ করে রাখা এসব পাথর ৫ আগস্টের পর নতুন করে লুটের মুখে পড়ে। এক রাতের লুটপাটে এক কোটি ঘটফুট পাথর চুরি হয়ে গেছে বলে সরকারি হিসেবে উঠে আসে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী লুট করা পাথরের মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান- সর্বশেষ গত ২৬ জুলাই পরিমাপ অনুযায়ী জাফলংয়ে পাথর মজুত ছিল ৩ কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট। ৫ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে সেখানে ব্যাপক লুটপাটে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর উধাও হয়ে যায়। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সেখানে সেনা সদস্যরাও যেতে পারেননি। এই পাথর লুটের পর এর সঙ্গে আরও কয়েকজনসহ জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠে। পরে বিএনপি খোঁজ নিয়ে এ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় শাহ পরানের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে বলে সিলেটভিউ-কে জানিয়েছে জেলা বিএনপির একটি সূত্র।

উল্লেখ্য, দলের হাইকমান্ডের কড়া নির্দেশনা উপেক্ষা করে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতারা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাদেকে শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। কেউ হারাচ্ছেন পদ, কেউ হচ্ছেন সাময়িক, আবার কেউ হচ্ছেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার।

এমন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় জনসাধারণের কাছে দলটির ভাবমূর্তি আরও ক্লিন হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর দলীয় নেতারা বলছেন- দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যে কোনো স্তরের নেতা অপকর্মে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সিলেট জেলা ইউনিটের আওতাধীন জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ ও পৌর বিএনপি নেতা সুলতান আহমদকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সিলেট জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এতে বলা হয়- জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ জারি থাকবে।

এদিকে, রবিবার (১৪ অক্টোবর) রাতে জকিগঞ্জ পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রাজনসহ কয়েকজন নেতাকর্মীর উপর হামলা করে গুরুতর আহত করার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় সংগঠনের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের কারণে জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আব্দুস সালামের পদ স্থগিত করা হয়েছে। একই সাথে কেন তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে না- এই মর্মে আগামী ৩ দিনের মধ্যে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধসহ নির্দেশ প্রদান করা হয়। সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ও সদস্যসচিব শাকিল মোর্শেদ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এর আগেও ২৭ আগস্ট আরেকটি শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য সালামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিলো। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার শর্তে ও লিখিত ক্ষমা প্রার্থনার প্রেক্ষিতে তার সাময়িক বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিলো। তবে মাত্র কয়েক দিনের মাথায় আত্বশুদ্ধির পরিবর্তে বেপরোয়া আচরণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় দল সালামের বিরুদ্ধে আবার সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরবর্তী নির্দশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল সিলেটভিউ-কে জানান।

অপরদিকে, সিলেটে রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাতে চোরাই চিনিকাণ্ডে জড়িত সিলেটের ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা সোনালী-২২ বাসার মৃত দিলু মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান (৪৩) এবং ২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ভার্থখলা রুপালি আবাসিক এলাকার ৪৫ নং বাসার মৃত ছানা মিয়ার ছেলে মো. সুলেমান হোসেন সুমনকে (৪২) স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে দল। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে স্থায়ী বহিস্কারাদেশ প্রদান করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়- দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করে চিনি চোরাচালানিতে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আবদুল মান্নান ও মো. সোলেমান হোসেনকে সাময়ীক বহিষ্কার করা হয়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য