ভারতে রপ্তানির খবরে আরো বেড়েছে ইলিশের দাম

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হবে না-দায়িত্ব গ্রহণের পর এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। গেল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সরকার সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবারের (২৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যে আগ্রহী রপ্তানিকারকরা বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন।

আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের আগে ভারতে ইলিশ যাচ্ছে না।
 

ভারতে এখনো ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়নি। কিন্তু রপ্তানির সিদ্ধান্তের কথা শুনেই বরিশালের বাজারে গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকেই ইলিশের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। বিক্রেতারা বলছেন ১৫ দিনের জন্য রপ্তানির অনুমতি পাবেন।

এই স্বল্প সময়ে এত পরিমাণ ইলিশ রপ্তানিও সম্ভব না। তাই আগেভাগেই তারা ইলিশ মজুদ করছেন। কেউ কেউ ঘোষণার আগে থেকেই ইলিশ মজুদ করছেন। তাছাড়া আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ হচ্ছে।
ইলিশ স্বল্পতার পাশাপাশি এ দুই কারণেই রপ্তানিযোগ্য ইলিশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। 

ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হওয়ার আগেই রপ্তানি হবে এই খবরেই বরিশালে ইলিশের দাম বাড়া শুরু করেছে। আর রপ্তানি শুরুর পর দাম বাড়া অব্যাহত থাকবে বলে মাছ ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন। তারা বলছেন, প্রধানত তিন কারণে ইলিশের দাম বেড়ে গেছে। ভারতে ইলিশ রপ্তানির চাপ, মাছ কিছুটা কম ধরা পড়ছে আর ১৩ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসছে।

ফলে ইলিশের জোগান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। 

বরিশাল পোর্টরোডের মাছ ব্যবসায়ী জহির সিকদার জানান, কিছুদিন আগেও এক কেজি ওজনের একটি মিঠা পানির ইলিশ বিক্রি হত এক হাজার ৬০০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকায়। এর থেকে ছোট আকারে ৭০০-৯০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হত সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬৫০ টাকা। তার মতে, ভারতে ইলিশ রপ্তানির ঘোষণার পাশাপাশি অনলাইনে বেচাকেনার সুযোগ বাড়ার কারণেও ইলিশের দাম বাড়ছে।

পাথরঘাটা উপজেলার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি এনামুল হোসেন বলেন, ‘সাগরে ইলিশের জোগান কম। আগামী সপ্তাহে মাছ পড়বে। তবে এখন যা পাওয়া যাচ্ছে তা এলসি সাইজের থেকে ছোট। রপ্তানির ঘোষণায় ইলিশের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন আর এলসি সাইজের বড় ইলিশ কিনে খেতে পারছেন না। তারা জাটকা সাইজের ৭০০ গ্রামের চেয়ে ছোট ইলিশ খেয়েই তৃপ্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ভারতে বড় আকারের ইলিশ রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় কেজি প্রতি দাম গড়ে ২০০ টাকা বেড়ে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাইকারি বাজারেও রবিবার প্রতি মণ এলসি সাইজের (৭০০ থেকে এক কেজির কম ওজন) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫৮ হাজার টাকা। আগে যা ছিল ৪৮ হাজার টাকার আশপাশে। প্রতি মণে ১০ হাজার টাকা বেড়ে গেছে। আর ছোট আকারের ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকা। আগে ছিল ৪০ হাজার টাকার আশেপাশে। সবচেয়ে বড় ইলিশ এখন প্রতি মণ ৭০ হাজার টাকা যা আগে বিক্রি হত ৬০ হাজার টাকার আশপাশে। রপ্তানির খবর পাওয়ার পর থেকেই ইলিশের দাম বাড়তে শুরু করেছে।’

বরিশালের অন্তত তিনজন আড়ৎদারের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তারা বলছেন, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রপ্তানিকারকদের আবেদনের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছিল। জমাকৃত আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে অনুমতি দেওয়া হবে। সেই অনুমতি নিয়ে এলসি খুলে ২৮ সেপ্টেম্বরের আগে ভারতে ইলিশের চালান যাওয়া সম্ভব হবে না। রপ্তানিকারকরা ধারণা করছেন, আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এই ইলিশ রপ্তানি চলবে। এই সময়ের মধ্যে পূজা উপলক্ষে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হবার কথা রয়েছে।

বরিশালের আব্দুল্লাহ ফিশ ট্রেডিং-এর মালিক জহির সিকদার বলেন, ‘যে ভাবে নদী-সমুদ্রে ইলিশের আকাল চলছে, তাতে করে এবারও অর্ধেক পরিমাণ ইলিশ ভারতে পাঠানো যাবে কী-না? তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন। কারণ বুধবার পোর্টরোডে প্রায় ৪০০ মন ইলিশ এসেছে। তার মধ্যে রপ্তানিযোগ্য ইলিশ মাত্র ১০০ টন।’

বিগত বছরগুলো উদাহরণ টেনে জহির সিকদার বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৯৫০ টনের অনুমতি দিলেও দুটি স্থলবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন। কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া সময়সীমাকে তারা দুষছেন।’

মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী গতবছর প্রতি কেজি ইলিশ তারা ১০ ডলারে রপ্তানি করছেন। রপ্তানিমূল্যের চেয়ে এখানকার বাজারে ইলিশের দাম বেশি। কম মূল্যে কেন ইলিশ রপ্তানি করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রপ্তানিকারক বলেন, ইলিশ রপ্তানিকারকরা ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যৌথভাবে তারা ব্যবসা করেন। ভারতের বাজারে যে দামে শেষ পর্যন্ত বিক্রি হবে তার ওপর তারা লাভ ভাগাভাগি করে নেবেন। লাভের অংশ আমদানি পণ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য করেন। তবে এবছর ইলিশ রপ্তানি মূল্য এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য