‘ঈদ কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া সাগর বাড়িতে আসত না’

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে পড়ে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. সাগর হোসেন (২১) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এখন তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার বাবা অঝোরে কাঁদছেন আর বিলাপ করে বলছেন— ছেলেটা উচ্চশিক্ষা নেওয়ার আগেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল। কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে মিরপুর গোলচত্বরের সংঘটিত সংঘর্ষে মারা যান সাগর। তিনি মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সাগর হোসেনের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে। তার বাবা পেশায় একজন কৃষক। পরিবারের দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোট বোন নারুয়া লিয়াকত আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাগর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন নারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর নারুয়া লিয়াকত আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। পরে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে উচ্চশিক্ষার জন্য রাজধানী ঢাকায় চলে যান। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের অভাব পূরণের জন্য তিনি একটা পার্টটাইম চাকরি করা শুরু করেন। সেখানেই তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করতেন।

সাগরের ভাই মো. সাইফুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমি আর সাগর একসঙ্গেই ঢাকায় থাকতাম। আমি তাকে অনেকবার নিষেধ করার পরও গত শুক্রবার সকালে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিরপুর-১০ নম্বরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সে চলে যায়। তার যাওয়ার পর থেকে আমি অনেকবার সাগরের মোবাইল ফোনে কল দিতে থাকি, কিন্তু ফোনে কোনো সাড়া পাইনি। পরে এক ঘণ্টা পর ফিরতি একটা ফোন আসে সাগরের মাথায় গুলি লেগেছে বলে। চিকিৎসার জন্য বর্তমানে মিরপুর আজমল মেডিকেল হসপিটালে ভর্তি আছেন। খবর পেয়ে তখন তাড়াতাড়ি করে আমি সেখানে গিয়ে জানতে পারি সাগর মারা গেছেন। পরে তাকে তার গ্রামের বাড়িতে লাশটি নিয়ে আসি। ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার নারুয়ার টাকাপোড়া ঈদগাঁও ময়দানে তার জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।

নিহতের বাবা মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমার ছেলে ৬ বছর ধরে পড়ালেখার জন্য বাড়ি ছাড়া হয়ে ঢাকায় যায়। ঈদ কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া সাগর বাড়িতে আসত না। কখনো কোনো দিন সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমি মাঠে কাজ করে খাই। আমিও কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমার ছেলে সব সময় পরিবারের সবার কথা ভাবত। তার আশা ছিল তার ছোট বোনকে এইচএসসি পাশ করার পর ঢাকায় নিয়ে কোচিং করাবে। কত কত স্বপ্ন ছিল, সব শেষ হয়ে গেছে। আমি কাউকে দোষ দেব না। আল্লাহ যা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। আল্লাহর কাছে শুধু একটাই চাওয়া— আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দিও।

এ বিভাগের অন্যান্য