আন্দোলনে স্থবির শিক্ষা কার্যক্রম, সেশনজটের কবলে শিক্ষার্থীরা

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

নানা ইস্যুতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। নির্ধারিত সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজটের কবলে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষকরা। অন্যদিকে কোটা সংস্কার চেয়ে নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

 

ফলে বিভিন্ন সেমিস্টারের পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে করে সেশনজটের কবলে পড়ে চরম হতাশায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে জানা যায়, প্রায় দুই মাস দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অন্তত ১২টি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তাবিত রুটিন প্রকাশ আটকে আছে। এ ছাড়া অন্তত পাঁচটি বিভাগের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় একটানা দুই মাস বন্ধ, এর আগে শিক্ষক সমিতির দফায় দফায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে ভাটা পড়ে শিক্ষা কার্যক্রমে। আবার এখন

এই বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত তাহসিন বলেন, গত ৯ মাস ধরে একই সেমিস্টারে পড়ে আছি। পরীক্ষা কবে হবে জানি না। এতে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।

কখন ক্লাস শুরু হবে বা আদৌ শুরু হবে কি না কিছুই জানি না। পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দিতে পারছি না। এক ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।

ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাঈমুর রহমান বলেন, ভিসি স্যারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষক সমিতি গত দুই মাস আগে থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আসছিল, আবার সিন্ডিকেটের কারণে বন্ধ ছিল দুই মাস। ফলে আমরা তিন-চার মাসের একটা সেশনজটে পড়ে গেছি।

এখন আবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কিছু যৌক্তিক দাবির কারণে ক্লাস বর্জন করেছে। ফলে আমরা এখন ভোগান্তিতে আছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই এই সমস্যাগুলো দ্রুত কেটে উঠুক। 

জানা যায়, সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক সমিতির মধ্যকার দ্বন্দ্বের ফলে কাগজে কলমে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকলেও আদতে সেটা প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মাসে পৌঁছবে। সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের আগেও শিক্ষক সমিতির দফায় দফায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে একপ্রকার স্থবির ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

গত ৫ জুন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দীর্ঘ বন্ধের পর ২৩ জুন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারে অর্ধদিবস কর্মবিরতি থেকে ক্রমান্বয়ে গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা, সেই সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন কর্মবিরতিতে। এ ছাড়া শিক্ষকদের কর্মবিরতির মধ্যেই শুরু হয় কোটাবিরোধী আন্দোলন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বিভাগের মধ্যে ১১টি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা কবে ক্লাসে ফিরবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে দ্রুত বেরিয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশ করা। যাতে পরিবারের হাল ধরতে পারেন। কিন্তু এখানে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে একটু সংকটে রয়েছেন। তবে ফেডারেশনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেই আমাদের কর্মবিরতি। সরকার এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আমাদের এখন ফিরে আসারও কোনো উপায় নেই। তবে আমরা আশা করছি, বিগত সময়ের মতো এ সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় ফেডারেশনও সচেতন রয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সচেতন রয়েছে। আশা করি, দ্রুতই এর সমাধান হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য