নিজ নিজ দলকে জয়ী দাবি ইমরান-নওয়াজের, পাকিস্তানজুড়ে অস্থিরতার আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ঃ
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও ফলাফল নিয়ে নাটকীয়তা এখনও শেষ হচ্ছে না। নির্বাচনে কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু এরই মধ্যে দুই বিরোধী রাজনৈতিক নেতা পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএলএন) নওয়াজ শরিফ এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ইমরান খান নিজ নিজ দলকে জয়ী ঘোষণা করেছেন।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। বাকি ৭০ সংরক্ষিত আসন, যার মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি অমুসলিমদের জন্য।
এবার একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় মোট ২৬৫ আসনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে দলগুলোকে। নির্বাচনে এককভাবে বিজয়ী হতে অন্তত ১৩৪টি আসনের প্রয়োজন।
তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৯টি আসনের ফলাফল প্রকাশ বাকি ছিল। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সতন্ত্র প্রার্থীরা ১০২টি আসন জিতে আছেন, যাদের প্রায় সবাই কারাবন্দী নেতা ইমরান খানের দল পিটিআই দল সমর্থিত প্রার্থী।
অপরদিকে নওয়াজ শরিফের পিএমএলএন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তারা ৭৩টি আসন পেয়েছে। অপরদিকে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি আসন। পাকিস্তানের ইতিহাসে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচন।
তবে জিও নিউজের খবরে বলা হচ্ছে, ইমরানপন্থী স্বতন্ত্ররা জিতেছেন ৯৪ আসনে। পিএমএল-এন পেয়েছে ৭৪ এবং পিপিপি পেয়েছে ৫৪ আসন। ১৭টি আসনে জিতে এমকিউএম-পি রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এছাড়া, অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন নয়টি আসনে।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো দল যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় তাহলে সংরক্ষিত আসন ছাড়াই অন্তত ১৩৪টি আসনে জয় পেতে হবে এবং সংরক্ষিত আসনসহ পেতে হবে ১৬৯টি।
অর্থাৎ, এবারের নির্বাচনে কোনও দলই যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, তা নিশ্চিত। ফলে সরকার গড়তে জোট গঠন অবধারিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইমরানপন্থিদের সরকার গঠন আটকাতে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি হয়েছে নওয়াজ ও বিলওয়াল ভুট্টোর দল।
পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট ও নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ বিলওয়াল ভু্ট্টো ও তার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের বাসায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শাহবাজ শরিফ। এসময় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
তবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেয়েও বেশ বিপাকে রয়েছেন ইমরান সমর্থিত প্রার্থীরা। কারণ, দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তারা সংরক্ষিত আসন পাবেন না। ফলে পিটিআই’র পক্ষে সরকার গঠন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, স্বতন্ত্ররা তিন দিনের মধ্যে যেকোনও দলে যোগ দিয়ে সরকার বা বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে আজ রবিবার দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইমরান খানের দল পিটিআই। দলটির দাবি, ভোটের প্রাথমিক ফলাফল প্রমাণপত্র ফরম-৪৫ অনুযায়ী তাদের প্রার্থীরা ১৭০ আসনে জিতেছে। কিন্তু পরবর্তীতে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণাকারী ফরম-৪৭ এ ফল পাল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু আসনে। এছাড়া যেসব আসনের ফলাফল এখনও ঘোষণা করা হয়নি সেগুলোও তাদের জয় পাওয়া বলে দাবি করেছে দলটি। ফলাফল পাল্টাতেই বিলম্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দলটি।
এরই প্রেক্ষিতে আজ দেশজুড়ে ‘ভোটের পবিত্রতা’ রক্ষায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পিটিআই। শুধু তা-ই নয়, পিএমএলএন নেতা নওয়াজ শরিফের আসনসহ বেশ আসনের ফলাফল নিয়ে ইতোমধ্যে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। সূত্র: জিও টিভি, ডন নিউজ