নেতাকর্মী-সমর্থকের হতাশা কাটাতে চায় বিএনপি

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের পরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ভর করছে। এই হতাশা দূর করতে চায় দলটি। এ জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সে ক্ষেত্রে ১২ অথবা ১৩ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এসএসসি পরীক্ষা মাথায় নিয়ে এ কর্মসূচি সাজানো হবে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষনেতারা কর্মসূচির পাশাপাশি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠন শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় নতুন কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে কারাবন্দি ও বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়া ফেরারি নেতাকর্মীদের মুক্ত জীবনে ফিরিয়ে আনতে আইনি সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে বাড়তি গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, ২০০৬ সালের শেষ দিকে ক্ষমতা ছাড়ে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। এরপর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে দলটি। এর মধ্যে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আরও পাঁচ বছরের জন্য নতুন সরকার গঠন

করে কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই দীর্ঘ সময়ে দলের নেতাকর্মীরা বৈরী পরিবেশে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারসহ নানা নিপীড়ন-নির্যাতনে এখন আর্থিকসহ নানা সংকটের মুখে তারা। এই অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশে^র ভূমিকাসহ নানা কারণে আশাবাদী হয়ে উঠেছিল নেতাকর্মীরা। বিএনপিসহ বিরোধী ৬৩টি রাজনৈতিক দল বর্জন করলেও ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া আশা করেছিল তা তারা দেখতে পাননি। বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকার আগামী ৫ বছর তার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের আরও সংকটের মুখে পড়তে হবে। রাজনীতিতে কোনো আশা না দেখায় নেতাকর্মীদের মাঝে আরও হতাশা ভর করেছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ বছরে তাদের ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে; ২ হাজার ৭শর বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা এবং প্রায় ৭শ জনকে গুম করা হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। দলের মহাসচিবসহ ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত তিন মাসে ১৩ জন নেতাকর্মী কারাগারে মারা গেছেন।

দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, দলের এমন পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি কী আর করতে পারে; তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের স্থায়ী কমিটির সভায়ও সে ভাবনা উঠে এসেছে। তবে নেতাকর্মীদের জন্য আশার খবর হচ্ছে, নেতাকর্মীদের অনেকেই জামিনে মুক্ত হতে শুরু করেছেন।

গতকাল শুক্রবার বিকালেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায় ও সালাউদ্দিন আহমেদ দলের নতুন কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। উভয় বৈঠক সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে একটি বই তৈরি করা হবে। সেই বই সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সম্প্রতি, গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন হয়। এই বইয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য বড় অংশ থাকবে।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, সম্ভাব্য কী কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় তা নির্ধারণ করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত দিলে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বৈঠকে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে মতামত দিয়েছে অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এ ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে ফেরাতে নতুন নতুন কর্মসূচির পাশাপাশি সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের পুনর্গঠন করার কথা ভাবছে দলটি। দলটির নেতারা বলেন, আন্দোলনে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলা ও মহানগর এবং বিভাগীয় শহরের সাংগঠনিক দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে। এই নিয়ে দলের মধ্যে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করে বিভাজন তৈরি করছে। যদিও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিরস্ত্র জনগণ ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জন করেছে। যে যাই বলুক, এবার জনগণই বিজয়ী।’

নেতাকর্মী ও পরিবারের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে

কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পরিবারের নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও সদস্যসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসায় যান জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এবং জিয়া শিশু একাডেমির মহাপরিচালক এম. হুমায়ুন কবির। এর আগে সম্প্রতি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানসহ কারাবন্দি নেতাদের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন তারা।

এ বিভাগের অন্যান্য