পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট
ঢাকার বাতাস নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘দেশের নদীগুলো দূষিত, বাতাস দূষিত। ঢাকার অবস্থা আরো খারাপ। আমরা শঙ্কিত।
আজ বৃহস্পতিবার ইটভাটা সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানিতে অধিদপ্তরের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে এ প্রশ্ন রাখেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন হলফনামা করে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।’
ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে জনস্বার্থের এক রিট আবেদনে চার বছর আগে রায় দেন হাইকোর্ট। সে রায়ে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে জনস্বার্থের রিট আবেদনটি করা হয়।
এসব নির্দেশনার পাশাপাশি আদালত সেদিন রুল জারি করেছিলেন।
বন ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএমপি কমিশনার, রাজউকের চেয়ারম্যানসহ ১১ বিবাদীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এসব নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়ন না করায় তিন মাস পর পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন উচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয় অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালককে।
এরপর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর এ রিটে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার বায়ুদূষণ কমাতে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য পরিবেশসচিবের নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এলাকায় যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে বা পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে চলছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সেগুলো ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধ করতে নির্দেশ দেন আদালত। প্রয়োজনে অতিরিক্তি লোকবল নিয়োগ করে রাস্তা, ফুটপাথ, ফ্লাইওভার, ওয়াকওভারের যেসব জায়গায় ধুলাবালি, ময়লা বা বর্জ্য-আবর্জনা জমিয়ে রাখা হয় বা জমে থাকে সেসব ধুলাবালি, ময়লা, বর্জ্য-আবর্জনা সাত দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশনকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায়ের কার্যকারিতা চলমান (কন্টিনিউয়াস মেন্ডামাস) রেখে আদালত রায়ে বলে দেন, এ রায়ের আলোকে ভবিষ্যতে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বায়ুদূষণ রোধে আদালতের কাছে প্রতিকার চাওয়া যাবে। এরপর বিভিন্ন সময় ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বায়ুদূষণ রোধে আদালতে সম্পূরক আবেদন করা হয় এইচআরপিবির পক্ষ থেকে। সেসব আবেদনে আদেশও এসেছে হাইকোর্ট থেকে। সম্প্রতি ‘বিক্রি হচ্ছে ইটভাটার ছাড়পত্র, বাড়ছে পরিবেশদূষণ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন ছাপে একটি জাতীয় দৈনিক। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ফের সম্পূরক আবেদন করে নির্দেশনা চাওয়া হয় এইচআরপিবির পক্ষে। আজ বৃহস্পতিবার শুনানির পর আদেশ দেন উচ্চ আদালত।