দুই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৩৫ জনের নামে নৌকা প্রার্থীর অভিযোগ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা। দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৩৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ভোটের মাঠে সক্রিয় বলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।
এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এখনই কোনো ব্যবস্থা না নিলে ভোটের পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই আসনের নৌকার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো.আবদুস সবুর। সবুর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং আইইবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।
এদিকে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারী) দুপুরে কুমিল্লা-১ আসনের নৌকা মার্কার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো.আবদুস সবুরের পক্ষে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দু’টি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সবুরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলার সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে ওই দু’টি লিখিত অভিযোগটি করেন।
নৌকার প্রার্থীর নেতাকমর্মী ও ভোটারদের ভাষ্য- নির্বাচন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু করতে হলে এখনই এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ বর্তমান অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অভিযোগকারী মো.আবদুল মান্নান জানান, নাঈম হাসানের নেতৃত্বে দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন এবং তিতাস উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। নির্বাচনে দুই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীদের আইনের আওতায় আনার দাবি এখন সাধারণ ভোটারদেরও। না হলে তারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
মোহাম্মদ আলী সুমন কুমিল্লা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়ার ছেলে।
তিতাস উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান মো.পারভেজ হোসেন সরকার ছাড়াও ওই উপজেলার কলাকান্দি গ্রামের ইউসুফ চিশতি, বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.নুরনবী, তিতাস উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন ফকির, আকালিয়া গ্রামের মো.আরিফ হোসেন, বাতাকান্দি গ্রামের মো.পরশ, কড়িকান্দি গ্রামের মো.ছবির হোসেন, মো.মোশারফ হোসেন, গাজীপুর গ্রামের মো.রাশেদ ফরাজী, কাপাশকান্দি গ্রামের মো.আমির হোসেন, গাজীপুর গ্রামের আরিফ খান, কড়িকান্দি গ্রামের গাজী মো. সোহেল রানা, শ্রী নারায়নকান্দি (উত্তর) গ্রামের কাজল মেম্বার, গাজীপুর (মাজারবাড়ি) গ্রামের মো.নাজিরুল ইসলাম মামুন, কলাকান্দি (দাক্ষিণপাড়া) গ্রামের সজিব ভূইয়া, কাউছার আহম্মেদ ভূইয়া, কাড়িকান্দি গ্রামের আরিফ ভূইয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।
অভিযোগকারী জানান, অভিযুক্তরা সবাই মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী হিসেবেই এলকায় পরিচিত। এদের নেতৃত্ব দেন ওই দুই উপজেলা চেয়ারম্যান। আর এসব সন্ত্রাসীরাই এবার ঈগল প্রতীকের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এদের এখনি আইনের আওতায় না আনতে পারলে সুষ্ঠু ও শান্তিপ্রিয় নির্বাচন না-ও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে কুমিল্লা সহকারী পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) এনায়েত কবির সোয়েব বলেন, যে কোনো অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকে। আমরা অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। নৌকার প্রার্থীর এমন কোনো লিখিত অভিযোগ এখনো আমাদের হাতে আসেনি। রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে অভিযোগের কপি এলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। নির্বাচনের পরিবেশ যথেষ্ট ভালো রয়েছে।
এদিকে, এসব বিষয়ে কথা বলতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের ব্যারিস্টার নাঈম হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত বলে দাবি করেছেন নাঈম হাসানের পক্ষে ভোটের মাঠে থাকা দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন।
মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, নৌকার প্রার্থীর এই অভিযোগের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত আমাদের কাছে। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। ঈগল প্রতীকের প্রার্থী বা আমাদের সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী ভোটের মাঠে নেই। এসব কথা সবই তাদের মনগড়া। বরং আপনারা খোঁজ নিলেই দেখতে পাবেন- দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলার সক্রিয় ও চিহ্নিত যত সন্ত্রাসীরা আছে- তারা সকলেই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন তাঁরাই উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।