এগোচ্ছে ইসরায়েলের সেনা, মধ্য গাজা থেকে পালাচ্ছে মানুষ

 আন্তর্জাতিক ডেস্ক ঃ

 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চল থেকে আনুমানিক দেড় লাখ মানুষ পালাতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরায়েলি সেনারা সেখানকার শরণার্থীশিবিরগুলোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এরই মধ্যে শিবিরগুলোতে কিছুদিনের বোমা ও গোলা হামলায় শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হামাসের সশস্ত্র আল কাসেম ব্রিগেড শাখা জানায়, ইসরায়েলি ট্যাংকবহর মধ্য গাজার বুরেজ শিবিরের পূর্ব প্রান্তে পৌঁছে গেছে।

ইসরায়েলি বাহিনী সম্প্রতি বুরেজ ও তার কাছের নুসেইরাত ও মাঘাজি শরণার্থীশিবির লক্ষ্য করে স্থল অভিযান সম্প্রসারণ করেছে। ইসরায়েলের দাবি, সেখানে হামাসের লোকজন ও তাদের সামরিক স্থাপনা রয়েছে। 

বুরেজ ও নুসেইরাত ক্যাম্পসহ গাজার মধ্যাঞ্চলের লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানকার ৯০ হাজার বাসিন্দা এবং চলমান যুদ্ধে এর মধ্যেই এক দফা বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নেওয়া ৬১ হাজার মানুষকে দক্ষিণ দিকে দেইর আল-বালাহ শহরের দিকে চলে যেতে বলেছে ইসরায়েল।

তবে  জাতিসংঘ গত বৃহস্পতিবার বলেছে, এই মানুষগুলোর আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। দেইর আল-বালাহ শহরে এরই মধ্যে বহু বাস্তুচ্যুত মানুষ গিয়ে উঠেছে। শহরটি লোকারণ্য হয়ে গেছে। সেখানে নতুন করে বিপুলসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।
 

জাতিসংঘ আরো জানিয়েছে, ইসরায়েলের অভিযানের ফলে গাজার সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছে মিসর সীমান্তের কাছে থাকা রাফাহ।  ইসরায়েলি সেনারা ক্রমে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে আসায় সম্প্রতি সেখানে প্রায় এক লাখ নতুন আশ্রয়প্রার্থী জড়ো হয়েছে।

পরিকল্পনা নিশ্চিত করল মিসর

এদিকে গাজায় আরেক দফা যুদ্ধবিরতি দিতে তিন ধাপের পরিকল্পনার প্রস্তাব দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে মিসর। হামাসের এক কর্মকর্তা জানান, এই পরিকল্পনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের একটি প্রতিনিধিদলের গতকাল কায়রো যাওয়ার কথা। হামাসের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানায়, কায়রোর তিন ধাপের পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে যুদ্ধ অবসানে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।

 

নেতানিয়াহুর সরকারে মতবিরোধ

হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ ঘিরে উগ্র ডানপন্থী জোট সরকারে মতবিরোধের কারণে চাপের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। প্রায় তিন মাস ধরে চলা যুদ্ধে এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে। এখনো আটক শতাধিক জিম্মি নিয়ে ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার তাঁর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক বাতিল করেন। যুদ্ধের পর গাজার কী হবে তা নিয়েই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। জোট সরকারের অতি ডানপন্থী সদস্যদের প্রবল বিরোধিতার মুখে বৈঠকটি বাতিল করতে বাধ্য হন নেতানিয়াহু। জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের মতে, এ ধরনের বিষয় যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার আলোচ্য হতে পারে না। নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার প্রসঙ্গটি আগামী মঙ্গলবার নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকে তুলবেন।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে কয়েকটি জনপদে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। তাতে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। সেদিন থেকেই গাজায় ইসরায়েল নির্বিচার প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করে। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। তাদের প্রায় অর্ধেক শিশু।

সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা

এ বিভাগের অন্যান্য