একতরফা নির্বাচনের পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী: রিজভী

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

বিএনপি নেতাকর্মীদের আটকে রেখে সরকারের একতরফা নির্বাচনের পরিকল্পনা কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ফাঁস করে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ সোমবার দুপুরে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গতকাল রবিবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাকারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সিট ভাগাভাগির নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন, কণ্টকমুক্ত করার জন্যই বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়েছে। বিএনপিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে- এমনকি একরাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাবও তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য থেকে একটি কবিতা পড়তাম। আমাদের পাঠ্য কবিতার প্রথম লাইনটি ছিল, ‘‘এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে’’। কিন্তু এখানে আমরা একটু পরিবর্তন করে বলতে চাই, এতক্ষণে ড. আব্দুর রাজ্জাক কহিলেন হরষে অত্যন্ত আনন্দের সাথে। এই হরষের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পন্ড করে পুলিশ তান্ডব-হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা-মিথ্যা মামলা- গ্রেপ্তার-হুলিয়া-হত্যা-বিএনপিসহ বিরোধী দলের বাড়ি-ঘরে হামলা-তল্লাশি-ভাঙচুর-গৃহছাড়া-আটক-বাণিজ্য সব কিছু শেখ হাসিনার পূর্বপরিল্পিত।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত এই প্রভাবশালী মন্ত্রী (ড. রাজ্জাক) হাটে হাঁড়ি ভেঙে স্বীকার করলেন যে, দেশের আইন-আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-প্রশাসন, কোট-কাঁচারি, বিচার-আচার সব কিছুই আওয়ামী মাফিয়া সরকারের হাতে বন্দী। বিচারব্যবস্থা আর আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে গেছে। পৃথক কোনো সত্তা নেই, দেশে কোনো আইন নেই, সব কিছু শেখ হাসিনার ইশারায় চলছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লক্ষ মামলা দায়ের আর অর্ধ-কোটি আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে। কারাগারে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে সরকারের ব্লুপ্রিন্টে। বিনা কারণে বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার, নির্বিচারে বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর নেতাকর্মীদের কারাগারে আটক ও নির্যাতন, ইচ্ছামাফিক জেল ও জামিন বিচার বিভাগের অস্তিত্বকেই বিলিন করে দিয়েছে।’

বিচার বিভাগ আইনের গতিতে চলছে না বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ আইনের গতিতে নয়, চলছে গণভবনের গতিতে, শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো গতিতে, তিনি এর মোমেন্টামটা ধরে রেখেছেন। গণভবন যে গতিতে চাইবে, যেভাবে বলবে, বিচার বিভাগের গতি তাই থাকবে।’

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রতিথযশা সাংবাদিক ও লেখক এম জে আকবর বাংলাদেশে এসে গতকাল (রবিবার) এক সেমিনার শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন বলে জানান রুহুল কবির রিজভী। তার বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারত কী তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকেই বন্ধুত্বের বন্ধনে আঁকড়ে রাখতে চায়? এম জে আকবর বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণকে অবজ্ঞা করার শামিল। এম জে আকবরের মন্তব্য কর্তৃত্বসূলভ ও বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে অসম্মান করা বাংলাদেশ কোনো স্যাটেলাইট স্টেট নয়। বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রোটেক্টটরেট নয়।’

রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা বঞ্চিত। চলমান আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং জনগণের মালিকানা জনগণকে ফেরত দেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তো ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাই না। বাংলাদেশি নাগরিকরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমমর্যাদার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়াতে বিশ্বাস করে। আপনি একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক ও বিদগ্ধজন। জনগণ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের ভোট চুরির দোসর হবে না ভারত। প্রতিবেশী হিসেবে এদেশের ১৮ কোটি জনগণের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পক্ষে দাঁড়াবেন এটাই এদেশের মানুষ কামনা করে।’

এ বিভাগের অন্যান্য