ফ্রি ফায়ার গেম খেলা নিয়ে কিল-ঘুষিতে শিশুর মৃত্যু, মা-ছেলে গ্রেপ্তার

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় শিশু মো. আব্দুল্লাহর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এক মা ও তার কিশোর ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

পুলিশ বলছে, মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলে আব্দুল্লাহ (১৩) ও আরেক কিশোর (১৫)। খেলার একপর্যায়ে গেমকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই কিশোরের  কিল-ঘুষিতে মারা যায় আব্দুল্লাহ।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) আলী হোসেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবারই অভিযুক্ত ওই কিশোর ও তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা এলাকা থেকে আব্দুল্লাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল আব্দুল্লাহ।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীর বন্দরটিলা এলাকা থেকে আব্দুল্লাহর লাশ উদ্ধারের পরপরই ছায়াতদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। একপর্যায়ে ভিকটিমের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে একটি মোবাইল থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ফোন করে তাদের জানানো হয়েছে আব্দুল্লাহকে অপহরণ করা হয়েছে। ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয় এবং পুলিশকে না জানানোর জন্য হুমকি দেয় অপহরণকারী।  এই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ও ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উপকমিশনার আলী হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার কিশোর ও নিহত আব্দুল্লাহ এক সময় বন্দরটিলা এলাকায় একটি মাদরাসায় পড়ত। সেখান থেকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। আব্দুল্লাহ পরে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পড়াশুনা শুরু করে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় কিছুদিন আগে গ্রামের বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে বাবা-মায়ের কাছে বেড়াতে আসে আব্দুল্লাহ। এরপর আগের বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়।

ঘটনার দিন বুধবার সকালে গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর আব্দুল্লাহর বাসায় গিয়ে তাকে নিজ বাসায় নিয়ে আসে। একপর্যায়ে উভয়ে মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলে। খেলার একপর্যায়ে গেমকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা, এরপর মারামারি হয়। একপর্যায়ে কিশোরের উপর্যুপরি কিল-ঘুষির আঘাতে আব্দুল্লাহ মারা যায়। 

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আব্দুল্লাহ মারা যাওয়ার পর ওই কিশোর ভিকটিমের পরিবারকে ভিন্ন দিকে ব্যস্ত রাখতে আব্দুল্লাহর বাবাকে ফোন করে বলে, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে ওই কিশোর ফোন করে তার মাকে ঘটনা জানায়। তার মা তখন কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আব্দুল্লাহর লাশ বস্তায় ভরে ফেলেন। এরপর রাত গভীর হলে বাসার কাছেই দুই ভবনের মাঝে সরু গলিতে লাশটি ফেলে আসেন মা-ছেলে মিলে। মুক্তিপণ দাবি করে জিম্মির পরিবারকে ব্যস্ত রাখার এই কৌশলটি টেলিভিশনের সিরিয়াল দেখে শিখেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে কিশোর।

পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পাশাপাশি মুক্তিপণ চাওয়া মোবাইল ফোনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রথমে বৃহস্পতিবার বিকেলে মাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পানির ট্যাঙ্কি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার কিশোর ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় ইপিজেড থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য