এমপি ফারুকের ভবনের ম্যানহোল থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর থিম ওমর প্লাজা বহুতল ভবনের ম্যানহোল থেকে এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে।
অর্ধগলিত লাশের সঙ্গে পাওয়া মানিব্যাগ থেকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাঁর নাম নয়নাল উদ্দিন।
লাশ মর্গে পাঠানোর আগে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা নানা আলামত সংগ্রহ করেছেন। ওই ব্যক্তিকে দুই থেকে তিন দিন আগে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
মর্গে গিয়ে মরদেহটি নয়নালের বলে শনাক্ত করেছেন তাঁর স্বজনরা। তাঁরা জানান, নয়নালের স্ত্রী-সন্তান নেই। তিনি ভবঘুরে প্রকৃতির ছিলেন। আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘নয়নাল আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। তিনি রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি এলাকায় আওয়ামী লীগের মহানগর কার্যালয়ের আশপাশেই বেশি ঘুরতেন। মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থও ছিলেন।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, একই সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ১০ তলা থিম ওমর প্লাজা ভবন (আবাসিক কাম বাণিজ্যিক) এবং তার পাশেই একতলা রাজনৈতিক কার্যালয়।
এই ভবনের প্রাচীরের সঙ্গেই এমপি ফারুকের রাজনৈতিক কার্যালয়। কার্যালয়ের সামনে ফাঁকা ছোট একটি মাঠ। মাঠটিও প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। বাইরে থেকে কারো প্রবেশাধিকার নেই সেখানে। মাঠের দক্ষিণে নগরীর নিউ মাকের্ট। থিম ওমর প্লাজা ও রাজনৈতিক কার্যালয়ের মাঝামাঝি স্থানে পেছন দিকের সীমানাপ্রাচীর সংলগ্ন ছোট একটি ম্যানহোল। ম্যানহোলটিও ওপর এবং নিচ থেকে গ্রিল দিয়ে ঘেরা, যাতে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। গ্রিলের একটি ছোট দরজা আছে। সেখানেও তালাবদ্ধ ছিল। এমন সুরক্ষিত ম্যানহোলের মধ্যেই পড়ে ছিল নিহত ব্যক্তির লাশ।
ওমর ফারুক চৌধুরী এবারও এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার পর তিনি তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিদিনই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে সেখানে। এই লাশের ব্যাপারে কথা বলতে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
থিম ওমর প্লাজার সিকিউরিটি ইনচার্জ জুবায়ের হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে নিরাপত্তা প্রহরীরা চারপাশ ঘুরে দেখেন। সোমবার সকালে রোম্মান নামের একজন নিরাপত্তা প্রহরী রাজনৈতিক কার্যালয় সংলগ্ন শৌচাগারের ম্যানহোলে লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন। লাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। পরে বিষয়টি এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে জানানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
থিম ওমর প্লাজা সামনের এক ব্যবসায়ী জানান, এখানকার ব্যবসায়ীরাও ওই শৌচাগারে যান। আগে কখনো শৌচাগারের আশপাশে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো দেখেননি। তবে সোমবার ওই শৌচাগার ও ম্যানহোলের আশপাশে প্রচুর ব্লিচিং পাউডার ছিটানো দেখেছেন।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘কয়েক দিন আগের লাশ। ম্যানহোল থেকে তোলার সময় শরীরের চামড়া উঠে গেছে কয়েক স্থানের। তাই কোনো আঘাত ছিল কি না তা বোঝা যায়নি। ময়নাতদন্তের পর এটি চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। আপাতত ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।’