রাজশাহীতে ১০ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টি, সড়কে চলছে নৌকা

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাজশাহী শহর। সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পানি থাকায় আজ বৃহস্পতিবার দিনভর বন্ধ ছিল ছোট ছোট যানবাহন। যানবাহনের পরিবর্তে লোকজনদের নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে শহরের নিচু এলাকাসহ উঁচু এলাকাতেও জমেছে পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। শহরের বাইরে গ্রামের নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয় রাজশাহীতে, যা আজ বিকেল পর্যন্ত কখনো অঝোর ধারায়, কখনো ঝিরিঝিরিভাবে ঝরছে। আবহাওয়া পর্যক্ষেণাগার বলছে, বৃষ্টির পরিমাণও কম নয়। গত ১০ বছরে রাজশাহীতে এমন বৃষ্টি হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে শহরের লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, ঘোষপাড়া, সাহেববাজার, গণকপাড়া, কাদিরগঞ্জ, বর্ণালী মোড়, উপশহর, টিকাপাড়াসহ নগরীর সব এলাকায় পানি জমে গেছে। জমে থাকা পানির পরিমাণ কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান। শহরের টিকাপাড়া ও বর্ণালীসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে নৌকা চলাচল করছে। অনেকে সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাল দিয়ে মাছ ধরতে শুরু করেছেন।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দুপুর ১টা থেকে আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গতকাল দিবাগত মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত। সকাল থেকে বৃষ্টি একটু কমলেও পুরোপুরি থামেনি। বিকেল পর্যন্ত এভাবে বৃষ্টি চলছিলই। আরও বৃষ্টি হতে পারে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের তথ্য আলাদা করে সংরক্ষণ করেছেন। সেই তালিকার তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, এবারের বৃষ্টিপাতই সর্বোচ্চ।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯৯ মিলিমিটার, ২০১৪ সালের ২৭ মে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৮ দশমিক ৩ মিলিমিটার, ২০১৫ সালের ২৬ জুন ১০০ মিলিমিটার, ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল ১০২ মিলিমিটার, ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ১০৭ দশমিক ২ মিলিমিটার, ২০১৮ সালের ১ মে ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার, ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর ৭৮ মিলিমিটার, ২০২০ সালের ২১ মে ৮১ মিলিমিটার ও ২০২১ সালের ২১ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

রাজশাহীর পবা উপজেলার দুয়ারি এলাকার মাছচাষি আনিসুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে রাতেই আমার তিনটি বড় বড় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সকালে পুকুরে গিয়ে যখন এ দৃশ্য দেখি তখন আর কিছু করার ছিল না। এতে আমার অন্তত ১৫ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে।’

মৎস্য অফিস জানিয়েছে, ‘ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন এলাকার পুকুর পানিতে ভরে গেছে। এ কারণে মাছও পানিতে ভেসে গেছে। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা যায়নি।’

নগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় বাস করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান। তার ঘরের ভেতরেও বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাট, বাড়ির আঙিনা সবই ডুবে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে শোয়ার ঘরেও। রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে। পানি কবে নামবে তা বুঝতে পারছি না।’

নগরীর সপুরা এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে শহরে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এজন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন দায়ী।’

মাহমুদ জামাল নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘শহরে প্রচুর টাকা খরচ করে নতুন নতুন ড্রেন করা হচ্ছে। কিন্তু সেই ড্রেন যদি পানি নিষ্কাশন করতে না পারে তাহলে জনগণের টাকা খরচের দরকার কী!’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘শহরে জলাবদ্ধতার বেশ কয়েকটি কারণ দেখা যাচ্ছে। শহরের পুকুর ও ডোবাগুলো ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বড় বড় দালান উঠছে। এতে বৃষ্টির পানি আর সেসব পুকুর-ডোবায় যেতে পারছে না। আগে পদ্মা নদীতে শহরের পানি নেমে যেত। কিন্তু নদী দূষণ হবে বলে সেসব ড্রেন বন্ধ করা রয়েছে। আবার বারনই নদীতে পানি যে ড্রেন দিয়ে পাঠানো হয়, সেই ড্রেনেও পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। ফলে পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার কারণেও পানি নামার প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এ কারণেই এভাবে পানি জমে গেছে। এসব সমস্যার সমাধানে এবার কাজ শুরু করা হবে।’

তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু বলেন, ‘নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই উন্নত এবং আধুনিক। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। উপচে পড়ছে। বৃষ্টি থামার এক ঘণ্টার মধ্যেই সড়ক এবং ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে যাবে। এজন্য নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ বিভাগের অন্যান্য