ছাত্রলীগের মিছিলে না যাওয়ায় তিন শিক্ষার্থীকে কান ধরে উঠবস সভাপতির

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

নাটোরের বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজে নবাগত শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছাত্রলীগের বের করা মিছিলে না যাওয়ায় কলেজের তিন শিক্ষার্থীকে কান ধরে উঠবস করানোর অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী হলেন জুয়েল রানা, শহিদুল ইসলাম ও ইমন। নবাগত শিক্ষার্থীদের সামনে এই তিনজনকে শ্রেণী কক্ষের মধ্যে ৫ বার করে কান ধরে উঠবোস করানো হয়। এদিকে ঠিক মতো কান না ধরার অভিযোগ এনে ইমনকে আরো ৫ বার কান ধরে উঠবোস করতে বাধ্য করা হয়।
নতুন করে ঝামেলায় পড়ার ভয়ে এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি নির্যাতিত এসব শিক্ষার্থীরা। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা জানায়, সারাদেশের মতো রবিবার বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী ক্লাশ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিল বের করে কলেজ ছাত্রলীগ। মিছিলে সকল সাধারণ ছাত্রদের বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের রসায়ন ক্লাশ চলায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মিছিলে যেতে পারেনি। মিছিল শেষে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীরা এসে শ্রেণী কক্ষে কলেজের সবচেয়ে মেধাবী বিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষার্থী জুয়েল রানা, শহিদুল ইসলাম ও ইমনকে বসে থাকতে দেখে মিছিলে না যাওয়ার কারণ জানতে চায়। তিন শিক্ষার্থী এ সময় মিছিলে না যাওয়ায় তাদের কাছে ক্ষমা চায়। কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীরা এ সময় ক্ষমা না করে তাদের ৫ বার করে কান ধরে উঠবোস করায়। তারপরও ঠিক মতো কান না ধরার অভিযোগ এনে ইমনকে আরো ৫ বার কান ধরে উঠবোস করতে বাধ্য করা হয়। কানধরে উঠবোস করানোর এসব দৃশ্য অসংখ্য নবাগত শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুয়েল রানা বলেন, সেদিনের বিষয়ে কথা বলে আর কষ্ট বাড়াতে চাই না। তবে নবাগত শিক্ষার্থীদের সামনে এমন কাণ্ড করায় খুব মানসিক কষ্ট পেয়েছি।
এসব বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানায়, গত বছরও একই ভাবে নবাগতদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বের করা মিছিলে না যাওয়ার অভিযোগে সোহেল রানা নামে আরেকজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে কলেজ মাঠে মারপিট করে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীরা। কলেজের বঙ্গবন্ধু কর্নারকে দলীয় কার্যালয় বানিয়ে সামনের বারান্দায় শিক্ষকদের চেয়ার নিয়ে এসে প্রকাশ্যে দিনের পর দিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজ চলাকালিন সময়েই আড্ডা দেন।
দলীয় প্রতিটি অনুষ্ঠানের সকল ব্যয় ভার কলেজ প্রশাসনকে দিতে বাধ্য করছেন বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন। নিয়মিত তাদের দলীয় প্রোগ্রামের ব্যানার ও নাস্তার খরচ কলেজ বহন করায় অন্য সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে কেউ তাদের কোন কাজের প্রতিবাদ করেন না। গত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা নিজেরা ব্যানার তৈরি করে বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন করলে ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকায় উপস্থিত শিক্ষকদের লাঞ্চিত করে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীরা। শিপন আহমেদ এখন এই কলেজের কোন শিক্ষার্থী নয়, এবং সে একজন মাইক্রো চালক বলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবেদককে জানায়।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শিপন আহমেদ এর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কলেজের আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক নেতা আমিনুল হক মতিন লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ঘটনার পর লাঞ্ছনাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাদশা উল্লাহ বলেন, কলেজের কাজে তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এদিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে করা অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার কলেজ থেকে বহন করতে বাধ্য করার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি মোবাইল কেটে দেন।
এ বিভাগের অন্যান্য