জাবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ, হত্যার হুমকি

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া মারধরের ঘটনা কাউকে না জানাতে ভুক্তভোগীর পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকিও প্রদান করা হয়।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অমানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ হাসান ইমন। জাহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও জাবি ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের (৪১তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী আরমান খান যুব, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের (৪২তম ব্যাচ) আরাফাত, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (৪৫তম ব্যাচ) তুষণ ও অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি। এদের মধ্যে, আরমান খান যুব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের আপন ছোটভাই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচের ‘র‌্যাগের রাজা’। এছাড়া কয়েকবছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও তিনি মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষ অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন।

জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনায় গত ১৩ আগস্ট সাভারের রেডিও কলোনীর বউবাজার এলাকার ভাড়া বাসার মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হয় জাহিদের। ওই ঘটনার জেরে জাহিদকে ফোন করে আরমান খান যুবর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন বাড়ির মালিকের পূর্ব পরিচিত আরাফাত। তার পরিপ্রেক্ষিতে যুবর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে জাহিদকে মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন তিনি। এরপর কক্ষে ঢুকতেই ঘুষি মেরে জাহিদের নাক ফাটিয়ে দেন যুব। তখন যাতে চিৎকার করতে না পারে, এজন্য জাহিদের মুখ বেঁধে দেন আরাফাত। পরে যুব ও আরাফাতসহ সেখানে উপস্থিত অন্য অভিযুক্তরা জাহিদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। তাদের কাছে আকুতি-মিনতি করেও কোনও প্রতিকার পাননি জাহিদ। এসময় জাহিদের শরীরে মদ ঢেলে উল্লাস করতে থাকেন যুব ও তার সহযোগীরা।

এরপর দিবাগত রাত ৩ টার দিকে জাহিদকে হলের দ্বিতীয় তলার ২২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। সেখানে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে গালাগালি করেছেন বলে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেন তারা। পরে তাকে ফের ১২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধরের ঘটনা কাউকে না জানাতে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেন অভিযুক্তরা। কিছুক্ষণ পর আকতারুজ্জামান সোহেল ওই কক্ষে গিয়ে জাহিদকে বাইরে বের করে নিয়ে যান। এসময় তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও তাকে আশ্বাস দেন।

এদিকে, ঘটনার আগে জাবির প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে অবহিত করেন জাহিদ। তার পরিপ্রেক্ষিতে মারধরের ঘটনার বিষয়ে জানাতে গত ১৪ আগস্ট সকালে প্রক্টরের বাসায় যান তিনি। তবে জাহিদ সেখানে গিয়ে দেখেন আকতারুজ্জামান সোহেল আগে থেকেই প্রক্টরের বাসায় অবস্থান করছেন। এসময় জাহিদকে কোনও কথা না বলতে দিয়ে মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে গিয়ে বসতে বলেন সোহেল। তখন জাহিদ প্রক্টরের উপর ভরসা না পেয়ে তার বাসা থেকে চলে যান। এরপর তিনি মারধরের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের জানান। কারো কাছ থেকে ঘটনার বিচার না পেয়ে কয়েক দফায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন জাহিদ।

এদিকে আরমান খান যুবর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের সিন্ডিকেট ও মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে ‘টর্চার সেল’ পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে, গত ১০ সেপ্টেম্বর বহিরাগত এক যুবককে তুলে এনে ওই কক্ষে বেধড়ক মারধর করেন যুব।

নির্যাতনের বিষয়ে জাহিদ হাসান ইমন বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের জানানোর পরও কেউ আমার এ ঘটনার বিচার করেনি। কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি। কারণ ওই রাতের ঘটনা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। পারি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আরমান খান যুব ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম বলেন, হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকে, সে বিষয়টি আমি জানি। আমি এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে মারধরের ঘটনা আমি জানিনা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে কল কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তাকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিভাগের অন্যান্য