ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে প্রথম ট্রেন যাচ্ছে আজ
ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সাত বগির বিশেষ একটি ট্রেন ৮২ কিলোমিটার নবনির্মিত রেলপথ পাড়ি দিবে।
ঈশ্বরদী থেকে গতকাল বুধবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে পদ্মা সেতুর ট্রায়াল রান ট্রেনটি রাজবাড়ী স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি ৮টি কোচ ও ১টি ইঞ্জিন নিয়ে গতকাল সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা কমলাপুর রেল স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে এসে কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করছে ট্রেনটি।
প্রকল্পের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অগ্রগতির তথ্য বলছে, পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এর মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৬.৫০ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৮০.৫০ ভাগ।
আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন ট্রেনে করে পদ্মা সেতু পাড়ি দিবেন তিনি।
গত ১৭ আগস্ট উদ্বোধন হতে যাওয়া অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র বলছে, কাজ বাকি রেখেই চালু হতে যাচ্ছে ঢাকার কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীন এই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। সব ধরনের কারিগরি কাজ শেষ না হওয়ায় শুরুতে মাঝের কোনো স্টেশনে ট্রেন থাকার সুযোগ নেই।
সম্প্রতি কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, উদ্বোধনের পর শুরুতে সব স্টেশনের ট্রেনের বিরতি দেওয়া সম্ভব হবে না। মাঝে অনেক জায়গায় কাজ বাকি আছে। কিন্তু মেট্রো রেলের মতো আমরা ট্রেন চালানো শুরু করে দিতে চাই। মাঝের স্টেশনের কাজগুলো চলমান থাকবে। সেগুলো শেষে সব স্টেশনে ট্রেন থামবে।
রাজধানীর কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং, পদ্মা সেতু, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত এই রেলপথে ২০টি স্টেশন থাকবে। প্রকল্পের অধীনে মূল পথ ১৬৯ কিলোমিটার। সেখানে লুপ ও সাইডিং ৪২.২২ কিলোমিটার এবং তিন কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ মোট ২১৫.২২ কিলোমিটার রেলওয়ে পথ নির্মাণ করা হচ্ছে।
শুরুতে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কয়টি ট্রেন চলবে তা এখনও চূড়ান্ত করেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে এই অংশ চালু হলে আরো ছয়টি রেলপথ এর সঙ্গে যুক্ত হবে। প্রাথমিক ভাবনায় রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, যশোরের বেনাপোল, খুলনা, রাজশাহীর ট্রেনও এই পথে চালানোর চিন্তা আছে। সে ক্ষেত্রে ভারতে যাওয়ার মৈত্রী ট্রেনও এ পথ ব্যবহার করবে ভবিষ্যতে।
রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা দিয়ে যশোরের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে। একই সঙ্গে ভাঙ্গা থেকে পাচুরিয়া-রাজবাড়ী সেকশনটি পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে।
রেলের পরিকল্পনায় প্রথমে প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর কথা ছিল। এরপর ঢাকা-মাওয়া অংশকে যুক্ত করা হতো। সব শেষে যুক্ত হতো ভাঙ্গা-যশোর অংশ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা এবং সময়মতো সেতু বুঝে না পাওয়ায় পরিকল্পনায় বদল আনে রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু করতে চান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে।
৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়।
এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানোর আলোচনা উঠছে। প্রস্তাবটি এখনও চুড়ান্ত হয়নি। এর খসড়া নিয়ে কাজ রেলওয়ে। খসড়া চূড়ান্ত হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আলোচনা তোলা হবে। সেখানে অনুমোদন পাওয়ার পর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যয় বাড়বে কিনা সেটা এখনও পরিষ্কার না। তবে সময় কিছুটা বাড়াতে হবে। আগামী ১০ মাসের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এরপর প্রকল্প শেষে কার্যকারীতা দেখার জন্যেও একটা সময় থাকা দরকার। এসব বিবেচনায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে।