নামিদামি কলেজে প্রতিযোগিতা

সিলেটের সময় ডেস্ক :

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। পছন্দের কলেজে ভর্তির ইস্যুই এই উদ্বেগের কারণ। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা একটু বেশিই সংকটে আছে। কেননা যারা মেডিকেল, বুয়েট আর বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায় তারা তুলনামূলক ভালো কলেজে পড়তে আগ্রহী। কিন্তু দেশে সেই তুলনায় মানসম্মত প্রতিষ্ঠান কম। এছাড়া যারা ইংরেজি ভার্সন থেকে পাশ করেছে এবং একই ভার্সনেই ভর্তি হতে হবে- তাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা বেশি। এ অবস্থায় হাতে তুলনামূলক ভালো ফল পাওয়ার পরও অনেকের মুখ থেকে মিলিয়ে গেছে সাফল্যের হাসি। এ কারণে ফল হাতে পাওয়ার পরদিনই তাদের কলেজ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে দেখা গেছে।

এদিকে ভর্তির ক্ষেত্রে ভালো কলেজে প্রতিযোগিতা বেশি হলেও অন্তত ১৭ লাখ আসন কলেজ পর্যায়ে শূন্য থাকতে পারে। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। অন্যদিকে এই স্তরে ভর্তিযোগ্য আসন আছে প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ। এ অবস্থায় অনেক কলেজ, মাদ্রাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী পাবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার রোববার বলেন, বরাবরের মতোই ভর্তির ক্ষেত্রে আসনের কোনো সমস্যা নেই। সংকট হচ্ছে, অনেকেই হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিচারে আকর্ষণীয় বা ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এ কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানে ভালো ফলধারীদের ভর্তির ক্ষেত্রে বেশি প্রতিযোগিতা করতে হবে। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি সত্য। কেননা যারা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, তারা সাধারণত ল্যাবরেটরি ও ভালো-দক্ষ শিক্ষক আছেন-এমন প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি পড়তে চায়। তাই এসএসসি পাশের পর মফস্বলের অনেকেই ঢাকাসহ শহরমুখী হয়। তাই দেখা গেছে, পছন্দের শীর্ষে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানে তুমুল ভর্তিযুদ্ধ হবে। আর এর বিপরীতে অখ্যাত ও নামসর্বস্ব কলেজ ও মাদ্রাসা যথারীতি শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে। সরকার ইতোমধ্যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নীতিমালার প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে। এতে আগামী ১০ আগস্ট থেকে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিষয়টি আজ (সোমবার) দুপুরে এ সংক্রান্ত বৈঠকে চূড়ান্ত করা হতে পারে। প্রস্তাব ঠিক থাকলে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে ১০ অক্টোবর একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করা হবে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া হয় এমন কলেজ ও মাদ্রাসা আছে ৯১৮১টি। সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে ৫৬৫টি। এছাড়া ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স প্রতিষ্ঠান ৭টি এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি) পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ১৮শ। কলেজ ও মাদ্রাসায় আসন আছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার ২৪৯টি, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে আছে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার। এছাড়া কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় ৯ লাখ। এর মধ্যে এইচএসসি ভোকেশনালে পৌনে ৩ লাখ, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিতে (বিএমটি) ৪ লাখ আসন। সবমিলে আসন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ।

অন্যদিকে এবার এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে মোট পাশ করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ শিক্ষার্থী। এতে এসএসসি, দাখিল আর কারিগরি-এই তিন ধারার ছাত্রছাত্রী আছে। তাদের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে শুধু এসএসসিতে পাশ করেছে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ জন, মাদ্রাসায় ২ লাখ ১২ হাজার ৯৬৪ জন, আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৩০ জন। সুতরাং আসন শূন্য থাকছে প্রায় ১৭ লাখ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বিদ্যমান সাড়ে ১১ হাজার কলেজ, মাদ্রাসা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে হাতেগোনা আড়াইশ থেকে তিনশ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রায় ২শ কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ৪৭টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট ও একটি গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ইনস্টিটিউট। এছাড়া ৫১৫টি বেসরকারি পলিটেকনিক থাকলেও হাতেগোনা ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। ডিপ্লোমা-ইন-কমার্সের ৭ প্রতিষ্ঠান ও বিএমটি এবং ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানেও কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। কিন্তু এবার কেবল এসএসসির সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২২০ শিক্ষার্থী। আরও আছে ২৪ হাজারের বেশি দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী। সাধারণত এসব শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীর অনেকে ভর্তির জন্য ভিড় করে। এছাড়া জিপিএ-৫ এর নিচে কিন্তু জিপিএ-৩.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আছে আরও ৮ লাখ ৬৪ হাজার ১৫১ জন। এসব শিক্ষার্থীও ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটে থাকে। এর বাইরে গত বছর ভর্তি না হওয়া কিছু শিক্ষার্থীও লেখাপড়া করতে আসে। ফলে সবমিলে কলেজ এবং কিছু মানসম্পন্ন কলেজ ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে এক ধরনের তুমুল প্রতিযোগিতা অপেক্ষা করছে। আর এ থেকেই অনেকের মধ্যে টেনশন ভর করেছে। যে কারণে ফল হাতে পাওয়ার পরদিনই অনেকেই খোঁজখবরের পাশাপাশি চেষ্টা-তদবিরও শুরু করেছেন।

জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চারটি কলেজ হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, সেন্ট গ্রেগরি এবং নটর ডেম কলেজ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপকলেজ পরিদর্শক রবিউল ইসলাম বলেন, এই চার কলেজ সাধারণত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে যা তারা উচ্চ আদালতে রিটের মাধ্যমে অনুমোদন পেয়ে থাকে। তবে এবার এখনো এ ব্যাপারে কলেজগুলো আবেদন করেনি।

জানা গেছে, বাকি কলেজ ও মাদ্রাসায় এবারও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসরণ করে ভর্তি করা হবে শিক্ষার্থী। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে। পরে বোর্ডে থাকা শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা করা হবে। এবারও অনলাইনে আবেদন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ১০টি ও সর্বনিম্ন ৫টিতে আবেদন করতে পারবে।

এ বিভাগের অন্যান্য