বিএনপির কর্মসূচিতে আহত ৫০০, গ্রেফতার ১২৪: রিজভী
সিলেটের সময় ডেস্ক :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পুলিশের প্রটেকশনে আগুন সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যেমনটা তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে, শনিবারও তাই করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা তো গুলি খাচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শনিবার বাসের ড্রাইভারও বলেছেন দশ হাত দূরে পুলিশ ছিল, তাদের সামনে আগুন দিয়েছে। তাকে (ড্রাইভারকে) বলছে তাড়াতাড়ি নেমে যান, না হলে তোকেসহ আগুন লাগিয়ে দেব। এটা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাড়া আর কে করতে পারে। পুলিশের সামনে ড্রাইভারকে এসব কথা বলা, বাসে আগুন দেওয়া এটা তো একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া কেউ করতে পারেন না। তারা দীর্ঘদিন ধরে আগুন সন্ত্রাস করে এসেছে আজও তারাই এ কাজ করেছে। মনে নেই বিহঙ্গ গাড়ি, তার মালিক ছিল বরিশালের আওয়ামী লীগের এমপি। তার গাড়িতে ওই এমপির লোকজন আগুন লাগিয়েছিল- সেটা তাদেরই একজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন। সরকারের নির্দেশই থাকে আগুন লাগাও, দোষ দেওয়া হবে বিএনপির ওপর, মামলা দেওয়া হবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর। ভিন্ন দিকে দৃষ্টি ফেরাতে অগ্নিসন্ত্রাস আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ।
শনিবার রাতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় রুহুল কবির রিজভী শনিবারে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি থেকে গ্রেফতার ও আহতদের চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শনিবার ৫০০ জন নেতাকর্মী আহত ও ১২৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া তিনি জানান, গত ১৯ মে থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মোট ৩২০ মামলা, গ্রেফতার ১৫১৪ জন, মোট আসামি প্রায় ১৪৫০’র অধিক নেতাকর্মী।
রিজভী বলেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে উপস্থিত হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশী আক্রমণ শুরু করে। তাদের সাথে যোগ দেয় সরকারদলীয় সশস্ত্র ক্যাডাররা। ব্যাপক গুলিবর্ষণ, অজস্র কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ ও বেপরোয়া লাঠিচার্জে অগণিত নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করা হয়। এই নারকীয় আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তাকে রাস্তার ওপর ফেলে দিয়ে মাথায় ও হাতে—পায়ে নির্দয়ভাবে আঘাত করা হয়।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আজকের অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করা হলেও পুলিশ সেটিকে অগ্রাহ্য করে সরকারের মনতুষ্টির জন্য দমনের যে ভয়ঙ্কররুপে আত্মপ্রকাশ করেছে তা নজীরবিহীন। বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ এবং বেধড়ক লাঠিচার্জের মাধ্যমে শারীরিক ক্ষতি ও নির্বিচারে গ্রেফতারের যে হিড়িক দেখা গেল তা আওয়ামী অবৈধ কতৃর্পক্ষের এক নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ। আজ শনির আখড়া, মাতুয়াইল, ধোলাইখাল, গাবতলী, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, সাইনবোর্ড এলাকা ছিল রক্তাক্ত প্রান্তর। অসংখ্য গুরুতর আহত নেতাকর্মী এখন হাসপাতালে কিংবা বাসাবাড়িতে কাতরাচ্ছে। আহত নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য হাসপাতালেও হানা দিচ্ছে পুলিশ।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা আন্দোলন এখন জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কারণ সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মুছে দিয়ে শেখ হাসিনা ভোটারদের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সারাদেশের মানুষ স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে এক দফার আন্দোলনের নানা কর্মসূচিতে। তাই শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা ক্ষুব্ধ ও বিকারগ্রস্ত। প্রতিশোধের নেশায় তারা অস্থির হয়ে উঠেছে। এই কারণেই দলীয় চেতনায় গড়ে তোলা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বিএনপি’র কর্মসূচিতে আক্রমণ চালানোর।
এসময় তিনি বিভিন্ন স্থানের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও হামলার চিত্র তুলে ধরেন। গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি ও আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।
রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলার নিন্দা জানান। একই সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একজন সাংবাদিক ও মিডিয়া সেলের প্রতিনিধির ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনারও নিন্দা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।