নামাজ ও রোজার চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ যে কাজ
একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে পারস্পরিক সৌহার্দ্য রক্ষা করা আবশ্যক। কিন্তু মানবিক দুর্বলতা, স্বভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে কখনো কখনো সমাজে দ্বন্ধ ও বিরোধ দেখা দেয়। ইসলাম বিরোধ বিরোধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানুষ সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের পথে চলার নির্দেশ দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন কোরো আর আল্লাহকে ভয় কোরো যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
বিরোধ নিরসন কেন প্রয়োজন
বিবাদ ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষত যখন কোনো পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রে বিরোধ সৃষ্টি হয়, তখন তারা নেতৃত্বের যোগ্যতা ও সুযোগ হয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।
বিরোধ নিরসনে করণীয়
পারস্পরিক বিরোধ নিরসনে কোরআনের নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
১. পারস্পরিক ভালোবাসা : হূদ্যতা ও ভালোবাসা বিরোধ নিরসনের প্রধান অবলম্বন।
২. অন্যের ভালো-মন্দের বিবেচনা : মানুষ যদি পরস্পরের ভালো-মন্দের বিবেচনা না করে, তবে তাদের বিরোধ কোনোভাবেই মীমাংসা করা সম্ভব নয়। এজন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুহাম্মদের প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম! তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না সে নিজের ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ না করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে থাকে।
৩. নিষ্পত্তির প্রত্যাশা : পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে উভয়পক্ষকে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৫)
৪. অনুকূল গুণাবলী ধারণ : যেসব গুণাবলী বিরোধ নিষ্পত্তির অনুকূল তা মুসলমানরা ধারণ করবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল-হূদয় হয়েছিলে। যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কোরো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কোরো এবং কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কোরো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
৫. প্রতিকূল স্বভাব ত্যাগ : মানুষের কিছু স্বভাব-চরিত্র পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে। মুমিন এমন স্বভাব-চরিত্র ত্যাগ করবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা পরস্পরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান কোরো না। তোমরা পরস্পরের পেছনে নিন্দা কোরো না।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)
উদ্যোগ নিতে পারে অন্যরা
যদি কোনো দুই পক্ষ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে আগ্রহী না হয়, তবে অন্য কোনো পক্ষ তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে পারে। কেননা বিরোধ নিরসন করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি কি তোমাদের রোজা, নামাজ, সদাকার চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ কাজের কথা বলব না? সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করা। আর পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বাধানো ধ্বংসের কারণ।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯১৯)
আল্লাহ সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠনের তাওফিক দিন। আমিন।