ছড়াচ্ছেন পূর্ণিমার আলো
বিনোদন ডেস্ক ঃ
প্রথম সিনেমা যখন মুক্তি পায়, তখন তিনি নবম শ্রেণির ছাত্রী। সেটি ১৯৯৮ সালের ঘটনা। সেই বছরের ১৫ মে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি পরিচালনা করেন জাকির হোসেন রাজু। নাম ‘এ জীবন তোমার আমার’। ২৫ বছর আগের সেই সিনেমায় পূর্ণিমা দেখতে যেমন ছিলেন, দর্শকের মতে তিনি এখনো তেমনই আছেন। তার এই বয়স না বাড়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা কম হয়নি। আগামীতেও যে হবে! কারণ এখনো তাকে দেখে স্কুলপড়ুয়া কিশোরীর মতোই লাগে!
আজ তার জন্মদিন। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম দিলারা হানিফ রিতা; কিন্তু পূর্ণিমা নামেই তিনি সবার কাছে পরিচিত। জন্মদিনে তাকে আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
মাঝের বেশ কিছু সময় চলচ্চিত্রে না থাকলেও ছোটপর্দায় তাকে পাওয়া গেছে নিয়মিত। কখনো উপস্থাপনায়, কখনো নাটকে। বর্তমানে সিনেমায় খুব একটা নিয়মিত নন তিনি। মুক্তির অপেক্ষায় ‘জ্যাম‘ ও ‘গাঙচিল’ নামের দুটি সিনেমা রয়েছে। দুটি সিনেমাই পরিচালনা করছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। মানসম্মত যে কোনো কাজের প্রতিই তার বেশ আগ্রহ। একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি বারবার বলেছেন যে, মনের মতো গল্প না পেলে প্রস্তাবে সাড়া দেবেন না।
প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা থেকে পূর্নিমা বলেন, ‘শুধু আমি কেন, দর্শকও এখন ভালো গল্প চান। ভালো গল্প হলে দর্শকরা অবশ্যই প্রেক্ষগৃহে ও টিভির সামনে বসবেন। যেসব সিনেমার গল্প স্ট্রং, সেসব সিনেমা দেখতে এখনো দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করেন।’ জন্মদিনে মধ্যরাত থেকেই শুভেচ্ছাবার্তা জানাবেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। বিশেষ এই দিনের মতো করেই সবার ভালোবাসা, আন্তরিকতা এবং দোয়ায় সুন্দর সুন্দর কাজ করে যেতে চান তিনি।
পূর্ণিমা অভিনীত প্রথম সফল সিনেমা ‘মনের মাঝে তুমি’। এটির পরিচালক মতিউর রহমান পানু। ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার গানগুলোও খুব আলোচিত হয়েছিল। খ্যাতিমান পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত সাহিত্যনির্ভর সিনেমা ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘শাস্তি’ ও ‘সুভা’য় অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা। ‘সুভা’ সিনেমাতে তার বিপরীতে ছিলেন শাকিব খান। সাহিত্যনির্ভর তিনটি সিনেমাতেই পূর্নিমার অভিনয় প্রশংসিত হয়।
এসএ হক অলিক পরিচালিত ‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমাটি মুক্তির পর আলোচিত হয়। সিনেমার গানগুলোও তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘বলে তো দিয়েছি হৃদয়ের কথা’ ও ‘ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু’ গান দুটি। এর পর এসএ হক অলিক পরিচালিত ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ মুক্তি পায়। এই সিনেমা দুটিতে তার বিপরীতে ছিলেন রিয়াজ। দুজনে প্রায় ২৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
ক্যারিয়ারে অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আরও রয়েছে- ‘নিশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘শশুর জামাই’, ‘টক ঝাল মিষ্টি’, ‘যোদ্ধা’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘সুলতান’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’, ‘ধোঁকা’, ‘হিংসার পতন’, ‘মা আমার স্বর্গ’, ‘সন্তান যখন শত্রু’, ‘প্রেমের নাম বেদনা’, ‘ছায়াছবি’, ‘বিপদজনক’, ‘বলো না ভালোবাসি’, ‘লাল দরিয়া’, ‘টাকা’, ‘বাধা’, ‘জমিদার’সহ আরও বেশ কিছু সিনেমা।
২০১০ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ওরা আমকে ভালো হতে দিলো না’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। পূর্ণিমা শুধু অভিনয় করেই দর্শকদের মুগ্ধ করেননি, পাশাপাশি উপস্থাপনা দিয়েও মন জয় করেছেন। তার সাবলীল উপস্থাপনায় ‘এবং পূর্ণিমা’ ও ‘পূর্ণিমার আলো’ অনুষ্ঠান দুটি দর্শকের মনে গেঁথে আছে।
কারও নামের অর্থ বা সঙ্গে যোগ হওয়া বিশেষণ কখনো কখনো এতটাই সত্য এবং সুন্দর হয়ে আমাদের সামনে আসে যে, অবাক না হয়ে উপায় থাকে না। তেমনিই একটি নাম পূর্ণিমা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির এই আলোচিত এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী তার নামের মতো করেই পূর্ণিমার আলো ছড়াচ্ছেন।
অসাধারণ সৌন্দর্য, সহজাত অভিনয় দক্ষতা ও গ্ল্যামারস লুক, ব্যতিক্রমী বাচনভঙ্গি দিয়ে সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সবার কাছেই আলাদা একটা স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম, অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তাকে নন্দিত অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে ইন্ডাস্ট্রিতে।
জনপ্রিয় ১০ সিনেমা
স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ ২০০২
মনের মাঝে তুমি ২০০৩
মেঘের পরে মেঘ ২০০৪
শাস্তি ২০০৪
সুভা ২০০৫
হৃদয়ের কথা ২০০৬
মনের সাথে যুদ্ধ ২০০৭
ধোকা ২০০৭
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা ২০০৮
ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না ২০১০