ভাষার চেতনায় মুখর দিন

সিলেটের সময় ডেস্কঃ

 

শহিদ মিনার থেকে জনতার ঢল এসেছিল বাংলা একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বর্ণমালাখচিত পোশাক জানান দিচ্ছিল বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার কথা।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষাশহিদদের চেতনা বুকে ধারণ করে বইমেলায় আসা পাঠকদের মনে শপথ ছিল বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার। পাশাপাশি বাংলা ভাষায় আরও ভালো ভালো বইয়ের প্রকাশ হবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি বলে মঙ্গলবার ছিল ছুটির দিন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এদিন বইমেলায় ছুটে আসেন। ছিল শিশুদের কোলাহল। এদিন মেলার দ্বার খুলে যায় সকাল ৮টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। পুরো সময়ই মেলায় মানুষের আনাগোনা ছিল প্রচুর। বইয়ের বিক্রিও মন্দ ছিল না। পাঠকদের প্রিয় সব লেখকই এদিন মেলায় এসেছিলেন।

ধানমন্ডি থেকে আসা মাহিন আনোয়র বলেন, অন্যান্য ছুটির দিনেও নানা কাজ থাকে। তাই বইমেলায় আসতে পারিনি। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি অন্যরকম একটা দিন। সকালবেলায়ই পরিবার-পরিজন নিয়ে বইমেলায় এসেছি। নতুন-পুরোনো বেশ কিছু বই কিনেছি।

মহাখালী থেকে আসা রেহনুমান সাদিকা বলেন, অমর একুশের দিনে আমরা চাই, বাংলা ভাষা আরও এগিয়ে যাক। অফিস-আদালতে বাংলার চর্চা আরও বাড়ুক। লেখকদের একটি প্রজন্ম শেষ হওয়ার পথে। প্রকৃতির নিয়মে তাদের অনেকেই চলে গেছেন। আবার নতুন একটি প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। আমরা আশা করব, নতুন প্রজন্ম আমাদের বাংলা ভাষার আরও গুরুত্বপূর্ণ সব সাহিত্য এবং বই উপহার দেবে।

এদিন সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে প্রায় ১৫০ কবি কবিতা আবৃত্তি করেন। সভাপতিত্ব করেন কবি জাহিদুল হক।

বিকালে ইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৩। নির্ধারিত বক্তা ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। কিন্তু বিদেশ সফরজনিত অনুপস্থিতিতে তার লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন ত্রপা মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

সেলিনা হোসেন বলেন, আমাদের জীবনে ২১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ কোনোদিন নয়। জাতির জীবনে এ দিবসটির মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একুশ আমাদের চেতনাকে জাগ্রত রাখে। একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদের তরুণ সমাজকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসউদ আহমাদ, তানভীর সালেহীন ইমন, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এবং শামীম আজাদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন সুজন বড়ুয়া, নভেরা হোসেন, রিমঝিম আহমেদ, মতিন রায়হান, নাজমুল হেলাল, সালমা বেগ, ইমরুল ইউসুফ, ইসমত শিল্পী, মায়াবী কাজল, গিয়াসউদ্দিন চাষা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রূপা চক্রবর্তী, আহ্কামউল্লাহ। ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন রথীন্দ্রনাথ রায়, শিবু রায়, কল্যাণী ঘোষ, মহাদেব ঘোষ, আবদুল হালিম খান, স্বর্ণময়ী মণ্ডল এবং সোমা দাস।

নতুন বই : বইমেলায় এদিন নতুন বই এসেছে ৩০৩টি। আসা নতুন বইগুলোর মধ্যে রয়েছে বদরুদ্দীন উমরের ‘বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর’ (বাঙ্গালা গবেষণা কেন্দ্র), আমীন আল রশীদের ‘উন্নয়নপাঠ : নদী ও প্রাণ’ (ঝালকাঠি পাবলিকেশন্স), ইমদাদ হকের ‘সার্বিয়া : শুভ্র শহরের দেশ’, (অন্যপ্রকাশ), অধ্যাপক ড. আকমল হোসেনের ‘খেরোখাতার স্মৃতিকথা’ (সংহতি প্রকাশন), মহিউদ্দিন আহমেদের ‘রাজনীতির মওলানা’ (বাতিঘর), হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘শাহবাগে ব্যালেরিন’ (অন্যপ্রকাশ), ইমতিয়ার শামীমের ‘শীতঘুমে একজীবন’ (প্রসিদ্ধ পাবলিশার্স), ইকতিয়ার চৌধুরীর ‘যমুনা সম্প্রদায়’ (পাঠক সমাবেশ), ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনীর ‘ছায়াপাখি’ (শব্দশৈলী), সরকার আমিনের ‘বিবাহিত প্রেমের কবিতা’ (বৈভব), মোস্তফা সেলিমের ‘মুন্সী সাদেক আলীর কেতাব হালতুননবী’ (উৎস প্রকাশন)।

এ বিভাগের অন্যান্য