কোপার ফাইনালে ব্রাজিল
ক্রীড়া ডেস্ক: কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও রবার্তো ফিরমিনো।
ম্যাচশেষে গোলপোস্টকে দোষারোপ করতেই পারেন মেসি-আগুয়েরোরা। গোলপোস্ট বাধা না হয়ে দাঁড়ালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে হয়তো আজ হারা লাগত না তাদের। তাতে ব্রাজিলের কি? নিজেদের কাজ তারা ঠিকই করেছে।
আক্রমণভাগে রবার্তো ফিরমিনো আর গ্যাব্রিয়েল জেসুসের ‘নিখুঁত’ খেলার লাভ পুরোটাই বুঝে নিয়েছে হলুদ-নীলরা। ২-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে গেছে তারা।
বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোরে বেলো হরিজন্তের এস্তাদিও মিনেইরোতে কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।
খেলার প্রথমার্ধে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের গোলে ১-০-তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে রবার্তো ফিরমিনোর গোলে ২-০-তে জয় পায় স্বাগতিকেরা। ম্যাচটি নিয়ে দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। শেষমেশ ব্রাজিল সমর্থকদের মুখে হাসি। আর আরেকবার হতাশায় ডুবল আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা।
কোয়ার্টার ফাইনালের দলগুলোর মধ্যে শুধু আর্জেন্টিনাই ম্যাচের মূল নব্বই মিনিট সময়ে গোল করতে পেরেছিল, অন্য ম্যাচগুলো ০-০ গোলে ড্র হওয়ার কারণে পেনাল্টি শুটআউটে নিষ্পন্ন হয়। এ কারণেই কি না, ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে নামানো একাদশটা আর পরিবর্তন করলেন না আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি।
ব্রাজিল অবশ্য সে কাজ করেনি। ঊরুর চোটটা বেশ ভোগাচ্ছিল লেফটব্যাক ফিলিপে লুইসকে, ফলে তাঁর জায়গায় জুভেন্টাসের আলেক্স সান্দ্রোকে মাঠে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে। ওদিকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ব্রাজিলের মাঝমাঠে ফিরে আসেন রিয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরো, অ্যালানের জায়গায়। এই দুটি পরিবর্তন ছাড়া ব্রাজিলের বাকি দল একই রকম ছিল।
প্রথম থেকেই আক্রমণ করা শুরু করে ব্রাজিল। ম্যাচের মাত্র দুই মিনিটে স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোর ডান পায়ের জোরালো শট আটকে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি। তবে শটটা অফসাইড পজিশনে থেকে করেছিলেন ফিরমিনো। গোলটা না হলেও ম্যাচের শুরু থেকেই ব্রাজিল তাদের উদ্দেশ্য বেশ ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয় মেসিদের।
ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলে প্রথমে একটু খেই হারিয়ে ফেলে আর্জেন্টিনা, নয় মিনিটে দলের লেফটব্যাক নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর হলুদ কার্ড খাওয়া তারই প্রমাণ। ১২ মিনিটে আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেসের দুর্দান্ত এক শট একটুর জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। ম্যাচের বিশ মিনিটের মধ্যে আর্জেন্টিনার দেখার মতো আক্রমণ ওই একটাই ছিল। ম্যাচের ১৯ মিনিটে দানি আলভেসের নিয়ন্ত্রিত এক পাস খুঁজে পায় ডান প্রান্তে থাকা রবার্তো ফিরমিনোকে। আর্জেন্টিনার ডিফেন্সের হতোদ্যম অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেখান থেকে মাটিঘেঁষা এক ক্রস পাঠিয়ে দেন বক্সে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। সেখান থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি জেসুসের।
গোল খাওয়ার পর যেন জেগে ওঠে আর্জেন্টিনা, জেগে ওঠেন মেসি। গোল খাওয়ার আগ পর্যন্ত ম্যাচে মেসিকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও আস্তে আস্তে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন মেসি। রদ্রিগো দি পল, সার্জিও আগুয়েরো আর লওতারো মার্টিনেজের সঙ্গে রসায়নটা বেশ জমে ওঠে তাঁর। কিন্তু ব্রাজিলের সুকঠিন রক্ষণভাগ আর গোলবক্সে গিয়ে সঠিক সময়ে শট না নিতে পারার কারণে ভুগতে হয় আর্জেন্টিনাকে। তার ওপর অ্যালিসন তো ছিলেনই।
মেসির একেকটা আক্রমণ দক্ষতার সঙ্গে বারবার ফিরিয়ে দেন লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী এই গোলরক্ষক। এর মধ্যেই মাঠে মেসিকে ফেলে দেন কাসেমিরো। হলুদ কার্ড দেখা থেকে বেঁচে গেলেও ফ্রি-কিক ঠিকই হজম করতে হয় ব্রাজিলকে। মেসির নেওয়া সে ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত এক হেড করেন আগুয়েরো। দুর্ভাগ্য, বলটা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। প্রথমার্ধের শেষ পর্যন্ত বলের দখল তুলনামূলকভাবে আর্জেন্টিনার কাছেই বেশি ছিল।
৪৯ মিনিটে মার্টিনেজের বাঁ পায়ের শট আটকে দেন অ্যালিসন। এর কিছুক্ষণ পরে মেসি-আগুয়েরোর রচনা করা দুর্দান্ত এক আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট শট মেরে নষ্ট করেন দি পল। মেসির একেক প্রচেষ্টায় করা দুর্দান্ত আরেক আক্রমণ পোস্টে লেগে ফিরে আসে আবার। আর্জেন্টিনার দুর্ভাগ্য ও গোলপোস্টের সামনে নিষ্ক্রিয় থাকার সুবিধা আর কিছুক্ষণ পরেই কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নেয় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধের অধিকাংশ সময়ে মেসি-আগুয়েরো-পারেদেস ও লওতারোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচে স্রোতের বিপরীতে সুযোগ পেয়ে যায় ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার মতো সে সুযোগ হেলায় হারায়নি তারা। ফিরমিনোকে গোলে সহায়তা করে ‘ঋণ’ শোধ করেন জেসুস।
গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন দানি আলভেস ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস। জেসুস যে সাবেক ব্রাজিলীয় তারকা রোনালদোর মতো প্রথাগত নাম্বার ‘নাইন’ নন, বরং একজন উইং ফরোয়ার্ড, সেটা এই ম্যাচে বেশ ভালো বুঝিয়ে দিয়েছেন। দানি আলভেস হার মানিয়েছেন বয়সকে। ওদিকে টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচ খেলেও গোলপোস্টের ‘কল্যাণে’ কপালে গোল জোটেনি মেসির। কিন্তু মেসির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সার্জিও আগুয়েরো ও লওতারো মার্টিনেজরা যেভাবে খেলেছেন, আগামী বছরের কোপার জন্য আশাবাদী হতেই পারেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা!
কোপা আমেরিকার নকআউট পর্বে এ নিয়ে পাঁচবারের লড়াইয়ে প্রতিবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা। ১৯৯১ সালে সবশেষ কোপায় ব্রাজিলকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা।