বসন্তকালে রোদের জাদু

প্রকৃতি তার আপন বাহারি রঙে সেজে উঠছে। পাশাপাশি সবার মনে এ ঋতুরাজ বসন্ত মায়াজাল বুনেও চলছে। মৌ মৌ গন্ধ বনে আর মাতাল হাওয়া বইছে ঘরের কোণে। না, শুধু এমন কাব্যিক রূপই নয়, বসন্তকালের রোদের সূর্যের কিছু গুণ নিয়ে লিখেছেন –  রিয়াজ রিপন 

প্রকৃতিতে এখন বসন্ত। এ সময়ে ভোরের মৃদু হিমেল হাওয়ার ছোটাছুটির মাঝে এক চিলতে সূর্যের হাসি নতুন দিনের প্রেরণার বাণী হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে এই সূর্যরশ্মি ছড়িয়ে পড়ে সবুজ পাতার জীবন্ত শিরা-উপশিরায়, দিগন্তজোড়া মাঠে এবং কর্মব্যস্ত সবার মনের দ্বারপ্রান্তে। তাই, আর দেরি নয়, বেরিয়ে পড়ুন বসন্তে ঘেরা প্রকৃতির কোলে। উপভোগ করুন অপার আনন্দ, আর সঙ্গে কিছু সূর্যালোকের উপকারী প্রাকৃতিক সুরাহা।

এ বসন্ত সবার জীবনেই বয়ে আনে অনাবিল উচ্ছ্বাস ও আবেগঘন মুহূর্ত আর নিজে রঙিন প্রকৃতির পসরা নিয়ে বসে। এ সময়ে লোকালয়ে না বেশি শীত, না বেশি গরম। বেড়ানোর এটিই উৎকৃষ্ট সময়। আবহমান বাংলার নদী, ঝিল কিংবা সুদূর মাঠে, বনে সবিতার তির্যক ঝাঁঝাল প্রতিফলন না ঘটে বরং নমনীয় ভাব এখানে-সেখানে প্রকাশ ঘটে। বনে বনে মৌ মৌ ঘ্রাণ আর রোদের মাতামাতি দেখে কে না ভ্রমণে বেরুতে চায়। অকপটে ভ্রমণপ্রিয়রা আনন্দের সঙ্গে তাদের মনের ইচ্ছাঘুড়ি হাওয়ার মাঝে উড়ান এবং দিন শেষে একগুচ্ছ স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

মাঝে মাঝে এক পশলা বৃষ্টির পড়ে গাছে গাছে জেগে ওঠে সবুজ পাতা ও কুঁড়ি। কিছু প্রহর পেরুতেই পত্রপল্লবে ছেয়ে যায় বৃক্ষ-লতা। এরপরে নানা রঙিন ফুলের বাহারে গোটা প্রকৃতি তার নিজস্ব মর্যাদা দখল করে নেয়। চারপাশে ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয় পাখ-পাখালির কল-কাকলি। মুখরিত হয় আকাশ বাতাসসহ সব কোণে।

ঘোরাফেরার জন্য অন্য ঋতুর মতো এ বসন্তও উল্লেখযোগ্য। কারণ এ সময়ে দিবসের ভাগ দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী থাকে। সূর্যের হাসি সব কোণে কোণে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও শীতের সময়ে দিন ছোট থাকে। ফলে, সূর্যের আলো বেশিক্ষণ পাওয়া যায় না। আবার গ্রীষ্মের কথা ভাবা যাক। যেখানে প্রচণ্ড তাপদাহ। দূর ভ্রমণে কিংবা বিকালের হাঁটাহাঁটিতে ক্লান্ত ভাব জাগ্রত হয়। এদিক থেকে বসন্তই সেরা।

কবিগুরুর ভাষায়, ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে। মধুর মলয়-সমীরে মধুর মিলন রটাতে। কুহক লেখনী ছুটায়ে কুসুম তুলিছে ফুটায়ে, লিখিছে প্রণয়-কাহিনী বিবিধ বরণ-ছটাতে।’ বসন্তের উপস্থিতিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে শহরের উদ্যান, বাড়ির ছাদবাগান এবং গ্রামের নদীর পাড়, খেতের আইল, মেঠোপথ বেয়ে কিছুক্ষণ চললে মানসিক ও শারীরিক উন্নতি দুটিই ঘটে।

শারীরিক সুস্থতা ও উন্নয়নের পাশাপাশি মানসিক বিকাশে দিনের আলো অর্থাৎ সূর্যালোক জরুরি। কেননা দিনের আলো প্রেরণার মূলমন্ত্র। আবার রোদে রয়েছে ভিটামিন ‘ডি’ যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারী। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট রোদে বের হওয়াটাই সুস্থ থাকার সহজ উপায় ও নানা রোগের মুক্তি মেলে সূর্যের আলোতে। বর্তমানে শহরে দৈহিক স্থূলতা একটি প্রধান সমস্যা। অসুষম খাবার মানুষের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট করে দিচ্ছে। রোগের সৃষ্টি করে মৃত্যুর দিকে পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে। এ কথা চিন্তা করে বিশেষজ্ঞরা রোদের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। রোদে স্বল্পক্ষণের জন্য নিয়মিত ঘোরাঘুরি করলে দেহের ওজন হ্রাস পায় এমনটাই উল্লেখ করেছেন।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও হৃদরোগজনিত সমস্যা সমাধানে রৌদ্রস্নানের তুলনা হয় না। বসন্তের এ সময় রোদের তাপমাত্রা অনেকাংশে কম থাকে। বাতাসে আর্দ্রতাও কম। সুতরাং রোদে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন বা বাগান ঘুরে দেখুন।

নিয়মিত রৌদ্রস্নান করে মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। তাই এ বসন্তের রোদে নিজে, কখনও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বের হয়ে যেতে পারেন।

ঘুম আমাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেকেই অনিদ্রার কারণে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। আপনি কি জানেন, সূর্যের আলোর মাঝে কিছুক্ষণ থাকলে ভালো ঘুম হয়? অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও সূর্যের আলোর গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়া অস্থি মজবুত, চর্মরোগের উন্নতি এবং দেহের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে রৌদ্রস্নান অপরিহার্য।

তবে রোদে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয়। অতিরিক্ত রোদে থাকলে দেহের চামড়া পুড়ে যেতে পারে বা জ্বর হতে পারে, এমনকি এলার্জি বেড়ে যেতে পারে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রোদে বের না হওয়া উত্তম। কারণ এ সময় সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি বের হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। আর বেশি প্রয়োজন হলে সানস্কিন ব্যবহার করে বের হতে পারেন।

এ বিভাগের অন্যান্য