বিশ্বনাথে বিএনপির প্রতিপক্ষ বিএনপি, এগিয়ে আ.লীগের নুনু মিয়া
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্বের অভ্যান্তরীন কোন্দলের জের ধরে সিলেটের বিশ্বনাথে আবারও বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়েছে বিএনপি।
বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করলেও বিশ্বনাথ উপজেলায় বিএনপির বিভক্ত দুই গ্রুপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দু’জনকে নিয়ে পৃথকভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্থ সময় কাটাচ্ছেন।
এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ-দূর্নীতি, লুটপাঠ-টেন্ডারবাজি, প্রকল্প আত্নসাৎ, দালালী-বাটপারির একাধিক অভিযোগ করছেন।
উভয় পক্ষে থাকা বিএনপি পন্থি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরিবর্তে নিজেদের দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী অপর প্রার্থীকে ঘায়েল করার কাজেই বেশি ব্যস্থ। তাই বিএনপির প্রতিপক্ষ বিএনপি হওয়াতে ও নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সকল গ্রুপিং-উপগ্রুপিং ভুলে নৌকায় একাট্টা থাকায় নির্বাচনী মাঠে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ না থাকার ফলে দলীয় প্রতিকে অনুষ্ঠিত প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে ধারণা করছেন বিভিন্ন মহলের নেতৃবৃন্দ।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যেমন বিএনপি পন্থি একাধিক (২ জন) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন, তেমনি ভাইস চেয়ারম্যান (৪ জন) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (৩ জন) পদেও বিএনপি পন্থি একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের মতো এপদগুলোতেও আওয়ামী লীগ মনোনীত/সমর্থিত একক প্রার্থী থাকায় এবারের নির্বাচনে প্রথম বারের মতো বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ পন্থি প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল রয়েছে।
এদিকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৬০৩ জন ভোটারের বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের ৩টি পদে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ১৭ প্রার্থীর মধ্যে ৯ জন বিএনপি পন্থি, ৪ জন আওয়ামী লীগ পন্থি ও বাকী ৪ জন অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
উপজেলার মোট ভোটারের মধ্যে ৭৬ হাজার ৫৫৭ জন পুরুষ ভোটার ও ৭৪ হাজার ৪৬ জন মহিলা ভোটার। নির্বাচনী মাঠে সরাসরি লড়াইয়ে নৌকা-ধানের শীষ না থাকলেও রয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আমেজ।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করায় বিএনপি পন্থি ওই ৯ প্রার্থীকে গত ৩ মার্চ রোববার সন্ধ্যায় দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিস্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। আর দলের শীর্ষ নেতা ও নির্বাচনের প্রার্থীদেরকে বহিস্কার করার কারণে তাদের (প্রার্থী) পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্থ থাকা তৃণমূলসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন বিপাকে। সর্বদা তাদের মধ্যে রয়েছে বহিস্কার হওয়ার এক অজানা আতংক।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিকারী ওই ৯ নেতা-নেত্রীকে বহিস্কার করার প্রভাব তৃণমূলে এসে পরার কারণে ৪টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। একটি পক্ষ দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ মান্য করে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহন করা থেকে দূরে রয়েছেন, আরেকটি পক্ষ দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং অপর দুটি পক্ষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষালম্বন করে নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণার কাজে সক্রিয় রয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করার জন্য তৃণমূলসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে থাকা সকল গ্রুপি-উপগ্রুপিং ভুলে গিয়ে নৌকায় একাট্টা হয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণার কাজে সক্রিয় রয়েছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সমর্থন দেওয়ার ও নৌকার পালের নতুন হাওয়ায় উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থীকে বিএনপি সমর্থন না দিয়ে বিরুধীতা করার কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপি পন্থি দুই প্রার্থীর কেউই খেলাফত মজলিসের সমর্থন নাও পেতে পারেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত বিএনপির আরেক শরিক জামায়াতও রয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে অনেক দূরে। ফলে তাদের ভোট বিএনপি পন্থি কোন প্রার্থীর পক্ষে যাবে, না কি ভোট প্রয়োগ থেকে জামায়াত বিরত থাকবে এ নিয়ে রয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। আবার জামায়াতের ভোট একক প্রার্থীর পক্ষে না গিয়ে দুই প্রার্থীর পক্ষেই গেলে কিংবা ভোট প্রয়োগ থেকে জামায়াত বিরত থাকলে সর্বপুরী লাভবান হবে আওয়ামী লীগ।
৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত একক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এস এম নুনু মিয়া (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির সহ সভাপতি (সদ্য বহিস্কৃত) ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী(কাপ-পিরিছ), যুক্তরাজ্যের কলচেষ্ঠার বিএনপির সভাপতি (সদ্য বহিস্কৃত) ও উপজেলা বিএনপি নেতা মিছবাহ উদ্দিন (আনারস), ইসলামী ঐক্য জোট মনোনীত প্রার্থী কাজী মাওলানা রুহুল আমীন (মিনার)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আলতাব হোসেন (তালা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির সদস্য (সদ্য বহিস্কৃত) ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ-নূর উদ্দিন (মাইক), উপজেলা আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর কোষাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান (বই), বিশ্বনাথ ক্রিকেট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম (টিউবওয়েল), আওয়ামী লীগ নেতা নোয়াব আলী (গ্যাস সিলিন্ডার), উপজেলা যুবদল নেতা (সদ্য বহিস্কৃত) জুবেল আহমদ (উড়োজাহাজ), জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (সদ্য বহিস্কৃত) আবদুর রহমান খালেদ (চশমা), মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (সদ্য বহিস্কৃত) আশরাফ উদ্দিন রুবেল (টিয়া পাখি)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জুলিয়া বেগম (কলস), স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা মহিলা দলের সহ সভাপতি (সদ্য বহিস্কৃত) ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেগম স্বপ্না শাহীন (বৈদ্যুতিক পাখা), জেলা মিহলা দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (সদ্য বহিস্কৃত) নাজমা বেগম (প্রজাপতি), উপজেলা মহিলা দলের আহবায়ক (সদ্য বহিস্কৃত) নূরুন্নাহার ইয়াসমিন (ফুটবল), নারীনেত্রী নেহারা বেগম (পদ্মফুল)।