বিশ্বনাথে নৌকার পালে নতুন হাওয়া : একমঞ্চে শফিক-মুহিব
মবরুর আহমদ সাজু
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিশ্বনাথ উপজেলায় এলাকায় ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আবারো নির্বাচনের প্রচারণায় নৌকার পালে নতুন করে হাওয়ায় দুলছেন ভোটাররা। কারণ একটাই এক মঞ্চে ভোটাররা দেখেছেন শফিকুর রহমান ও মুহিবুর রহমানকে। নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় বরাবরই আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে বরাবরই মহাজোটের বিশেষ কারনে বারবার ছাড় দিতে হয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে গ্রুপিং রাজনীতির উর্দ্ধে এসে সিলেটে-২ আসনের অন্তর্ভূক্ত বিশ্বনাথ উপজেলায় আধিপত্য ধরে রাখতে চায় গেল উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হওয়া আওয়ামী লীগ। বিগত দিনে হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় এ আসনের উপজেলাটি এবার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। এবার সেই প্রত্যাশা হয়তো পূরণ করবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররাও।
আগামী ১৮ মার্চের বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা এস এম নুনু মিয়া নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন। বিশ্বনাথে ৪জন চেয়ারম্যান, ৮জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৫জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কোমর বেঁধে নেমেছেন নির্বাচনের মাঠে। উপজেলার ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভোটের জন্য। ভোটাররা বলছেন, যে প্রার্থীই ভোট চাইতে আসুন না কেন, নৌকার পালে যে হাওয়া লেগেছে তাই আমরা নৌকাকেই নির্বাচিত করব। ভোটারদের মতে, যেহেতু সারা দেশে নৌকার জোয়ার এসেছে, সে কারণে এই নির্বাচনেও এলাকার উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা নৌকাকেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করব। ভোটারদের এমন বক্তব্যে এই উপজেলার নৌকার বিজয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুনু মিয়ার নৌকায় একাট্টা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের জেলা দুই চৌধুরী বলয়ের নেতাকর্মি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের নেতা কর্মিরা। গ্রুপিং রাজনীতি ভূলে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে মাঠে রয়েছেন সকল বলয়ের নেতা কর্মিরা। এতোদিন আলাদা আলাদা প্রচারণায় অংশ নিলেও বৃহস্পতিবার দেখা গেল এক মঞ্চে সকল বলয়ের নেতাকার্মীরা। এতে করে উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবীদরা বলছেন বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগের সুদিন এসেছে। অন্যদিকে বিশ্বনাথ উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিকট অতীত থেকে দুই মেরুতে অবস্থান করে। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও তাদের অবস্থান ছিলো দুই মেরুতে। কিন্তু নেত্রী নৌকার মনোনয়ন ঘোষনার সাথে সাথে পাল্টে যায় ঐ উপজেলার আওয়ামী লীগের চিত্র। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এসএম নুনু মিয়াকে নিয়ে একাট্টা সিলেট-২ আসনে আওয়ামী রাজনীতির দুই কর্ণধার শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এদিকে মুহিবুর রহমান নিজেই তাঁর অনুসারী নেতাকর্মী নিয়ে নুনু মিয়ার নৌকার প্রচারণায় ও পথসভায় যোগ দিচ্ছেন।
জানা গেছে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থকদের বিশ্বনাথ উপজেলায় দুটি শক্তিশালী বলয় রয়েছে। আবার সাবেক ২বারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের নেতৃত্বেও আওয়ামী লীগের বেশ সংখ্যক নেতাকর্মিরা রয়েছেন। আরো জানাযায়, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক নেতাই প্রধানমন্ত্রীর দিকে থাকিয়ে নিজ দলের নেতাদের জনপ্রিয়তাকে বিসর্জন দিয়ে মহাজোটের প্রার্থীকে জয় করিয়ে ছিলেন। কিন্তু জয়ের পর সংসদীয় এলাকার এমপির পাশে তারা দাঁড়াতে পারেননি। এছাড়া সর্বশেষ গণফোরামের মোকব্বির এ আসনে জয় পেয়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ এর আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বুলন্ঠিত হয়ে উঠছে তাদের কমিটমেন্ট ।
এবারের নির্বাচনে বাজিমাত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা। দলটির নেতারা বলছেন, সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার কারণে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নুনু মিয়াকে নৌকায় ভোট দেবেন ভোটাররা। নেতারাও কাজ করার জন্য একাট্টা হয়ে উঠছেন।
এসএস নুনু মিয়া সিলেট কেন্দ্রিয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের কাসিমপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। এসএম নুনু মিয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের একান্ত সহচর ও প্রিয়ভাজন ব্যাক্তি। কেন্দ্রীয় পর্যায়েও রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। এসএম নুনু মিয়া বলেন, বিশ্বনাথ উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নই হবে প্রধান কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত প্রতিটি গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করতে যে প্রদক্ষেপ নেয়া হয়েছে শুরুতেই তা বিশ্বনাথ উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। যেভাবে উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষকলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর সকল পর্যায়ের নেতাকর্মিরা যেভাবে নৌকার পক্ষে একাট্টা হয়ে নির্বাচনী ভোটে নেমেছেন তাতে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে।
ইতিমধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, নুনু মিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে তার বলয়ের নেতাকর্মিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা নৌকার পক্ষে। নৌকার যার আমরা তার। বিশ্বনাথ উপজেলায় নেত্রী নুনু মিয়া নৌকা দিয়েছেন আমরা নেত্রীর নৌকার পক্ষে এখানে কে কি করেন বা করেছেন তা দেখার বিষয় নয়। আর বর্তমান বিশ্বায়নের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে নৌকা বিজয়ের কোন বিকল্প নাই। আমরা সবাই মিলে নেত্রীকে নৌকা উপহার দিতে চাই। আর নৌকার বিজয় মানেই উন্নয়ন।
এবিষয়ে সাবেক দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগীতা থাকবে। আর প্রতিযোগিতা থাকলে গ্রুপ সৃষ্টি হবে। কিন্তু যখন বঙ্গবন্ধুর ও শেখ হাসিনার নৌকা আসবে তখন সবাই একমত হয়ে কাজ করবে এটাই হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতির নীতি। আর এ নীতিতে যারা বিশ্বাসী তারাই প্রকৃত আওয়ামীলীগ। তিনি আগামী ১৮ মার্চের নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করে তার অনুসারী ও সমর্থকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বাসী ও আওয়ামী লীগের খাঁটি কর্মী হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। নৌকার বিজয় মানে উন্নয়ন। তিনি আরো বলেন, এবার কোনভাবেই নৌকাকে হাতছাড়া করা যাবে না। উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নৌকা প্রতিকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী এস এম নুনু মিয়াকে বিজয়ী করার কোন বিকল্প নাই। এস.এম নুনু মিয়ার পক্ষে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অপর দিকে সিলেট ২ আসনের অন্যতম উপজেলা বিশ্বনাথ কৌশলে দখলে মরিয়া হয়েছে উঠেছেন বিএনপির বহিষ্কৃত দুই নেতাও। মাঠে রয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে সতন্ত্রভাবে তারা আওয়ামী লীগকে টেক্কা দিবেন বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আগামী ১৮ মার্চের উপজেলা নির্বাচনে একটি জমজমাট ত্রীমূখী ভোটের লড়াইয়ের অপেক্ষায় আছেন বিশ্বনাথের সাধারণ ভোটাররা।