ফাগুনের আগুন রাঙা বসন্ত
ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত। পহেলা ফাল্গুন। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমীয় বাণীটি ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানায়। ফুল ফোটার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে কাননে-কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক।
কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। হৃদয় হবে উচাটন। পাতার আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহু কুহু ডাক, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরহী অন্তর।
১লা ফাল্গুন বা বসন্ত এলেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই পরিচিত গান ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশী বাজে, এত পাখী গায়….।’ এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলেফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীরগতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।
শীতের খোলসে ঢুকে থাকা বন-বনানী নতুন আলো আর বাতাসের স্পর্শে জেগে ওঠে এ সময়। পলাশ, শিমুলগাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তের সাজসাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই আজ গেয়ে উঠবেন- ‘মনেতে ফাগুন এলো…।’ কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরাপাতার শুকনো নূপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন এ বসন্তেই।
বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। নাগরিক জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ও একুশের বইমেলা। বসন্ত আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্ত রঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপর রঙ ছড়ায়। ’৫২ সালের আট ফালগুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
বসন্তের প্রথম দিনে অসংখ্য রমণী বাসন্তী রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে। সুশোভিত করে তোলে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরসহ পুরো নগরী। এ পূর্ণতার বসন্তের দোলা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সব বাঙালির ঘরে ঘরে। তবে বাস্তবতার পাথরচাপা হৃদয়ে সবুজ বিবর্ণ হওয়া চোখে প্রকৃতি দেখার সুযোগ পান না নগরবাসী। কোকিলের ডাক, রঙিন কৃষ্ণচূড়া আর আমের মুকুলের কথা বইয়ের পাতায় পড়ে থাকলেও একালের তরুণ-তরুণীরা কিন্তু বসে থাকতে রাজি নন। গায়েহলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি জড়িয়ে তরুণী ও পাঞ্জাবি পরা তরুণরাও এদিন নিজেদের রঙিন সাজে সাজাতে কম যান না।