মিতুর প্রতি ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ আশঙ্কা, বিশিষ্টজনদের বিবৃতি
চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় স্ত্রী চিকিৎসক তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর প্রতি ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ আশঙ্কা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন লেখক, শিক্ষক ও উন্নয়নকর্মীরা।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘গভীর উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি যে, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯ চট্টগ্রামে সংগঠিত হওয়া চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচণ্ড বিদ্বেষ ও ঘৃণা উদ্রেগকারী বক্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে। যার নির্মম শিকার হচ্ছেন আকাশের স্ত্রী চিকিৎসক তানজিলা হক চৌধুরী মিতু এবং তার পরিবার। যা বিচারাধীন এই ঘটনাটিকে ‘মিডিয়া-ট্রায়াল’-এর দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
‘ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি যে, আকাশের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে পূর্বানুমানের ভিত্তিতে সমাজের গৎবাঁধা দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করে মিতুকে অভিযোগ করার ঘটনা ব্যাপক হারে ঘটছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেই একই প্রবণতা দ্বারা পরিচালিত হয়ে মামলা হওয়ার আগেই আইন বহির্ভূত ভাবে মিতুকে গ্রেপ্তার করে এবং পরবর্তীতে রিমান্ডে নিয়েছে, যা উদ্বেগজনক।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (হু) তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করছে, যা কোনভাবেই আমরা সমর্থন করতে পারি না। আমরা সমাজে এই বাস্তবতা দেখছি যে, একটি মানসিক পরিস্থিতিতে কেউ আত্মহত্যা করেন আবার বেশীরভাগ মানুষ সেই একই পরিস্থিতিতে বা তারচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েও আত্মহত্যা করে না।’
‘আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন মানবিক এবং সামাজিক সম্পর্কের নতুন ধারা এবং মাত্রা আমাদের সমাজে প্রবেশ করেছে। সারা বিশ্বেই মানুষ এখন অপর মানুষের সাথে সম্পর্কের মাত্রা নিজে নির্ধারণ করাকে অধিকার ভাবছে। এটা অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। এজন্য আত্মহত্যার দায় অন্যকে দেওয়া এবং প্ররোচনার জন্য অভিযুক্ত করার বিষয়টি অত্যন্ত সচেতনভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন যেনো আত্মহত্যা করা ইতিবাচক হিসাবে প্রতিফলিত না হয়। কে কোন পরিস্থিতিতে চরম হতাশ হয়ে জীবনকে অর্থহীন মনে করবে তা বলা মুশকিল। তবে যাদের এই ধরণের প্রবণতা থাকে পরিবারের সদস্যরাই সর্বাগ্রে তা বুঝতে পারে। তাই তাদের মানসিক শক্তি যোগানো, জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা পরিবারের সদস্যদের কাজ৷বিষয়টির সার্বিক সমাধানে সমাজ ও রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তনও জরুরি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণ অমূল্য এবং প্রতিটি মানুষের ন্যায় বিচার পাবার অধিকার রয়েছে, তাই আমরা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, অপরাধ প্রমাণিত হবার আগেই আকাশের আত্মহননের দায় যেনো কিছুতেই অন্যায্যভাবে মিতুর কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে মিতুকে এবং তার পরিবারকে লোকলজ্জা ও সামাজিক চাপের মধ্যে ফেলা না হয়। কেননা, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে অন্যায়ভাবে কাউকে দায়ী করে তার কাঁধে দোষ চাপানো হলে সেটিও অবিচার হবে এবং সেখানেও লংঙ্ঘিত হবে মানবাধিকার।’
আকাশের আত্মহনন বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একজন তরুণ চিকিৎসকের করুণ আত্মহনন আমাদেরকে ব্যথিত করে। ভবিষ্যতে আর কেউই যেন কোনো পরিস্থিতিতেই আত্মহননের পথ বেছে না নেয় সেই লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের তরফে সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া দরকার বলেও আমরা অনুভব করছি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন:
১. শাহদীন মালিক, সিনিয়র আইনজীবী
২. খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী
৩. রেহনুমা আহমেদ, লেখক
৪. আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৫. গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৬. স্বাধীন সেন, অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৭. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৮. সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৯. আইনুন নাহার, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১০. ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১১. জোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী
১২. হাসনাত কাইয়ুম, আইনজীবী
১৩. সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলাবিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১৪. কামাল চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, ক্লিনিকাল সাইকোলজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৫. নাসরীন খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. পারভীন জলী, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৭. মজিবুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৮. সাদাফ নূর, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৯. সুবর্ণা মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২০. মাইদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২১. দেলোয়ার হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২২. সুদীপ্ত শর্মা, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৩. জাভেদ কায়সার, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২৪. কাজী মামুন হায়দার, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২৫. গোলাম হোসেন হাবীব, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৬. গৌতম রায়, সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২৭. সায়মা আলম, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৮. আফরোজা সোমা, সহকারী অধ্যাপক, মিডিয়া এন্ড ম্যাস কমিউনিকেশান বিভাগ, আমেরিকান ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)
২৯. অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, প্রভাষক, অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৩০. দিপ্তী দত্ত, প্রভাষক, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩১. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, নৃবিজ্ঞানী ও উন্নয়ন কর্মী
৩২. বাকী বিল্লাহ, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক কর্মী
৩৩. রাখাল রাহা, লেখক ও সম্পাদক
৩৪. বন্যা আহমেদ, লেখক ও ভিজিটিং ফেলো, লণ্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স
৩৫. সুপ্রীতি ধর, উইমেন চ্যাপ্টার সম্পাদক ও অ্যক্টিভিস্ট
৩৬. আফসানা কিশোয়ার, ব্যাংকার ও অ্যক্টিভিস্ট
৩৭. ফেরদৌস আর রুমী, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী
৩৮. শামীম আরা নীপা, অ্যক্টিভিস্ট
৩৯. লাকী আক্তার, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক কর্মী
৪০. আরিফ জেবতিক, ব্লগার ও অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট
৪১. কৌশিক আহমেদ, ব্লগার ও অ্যক্টিভিস্ট
৪২. পূরবী তালুকদার, নারী অধিকার কর্মী
৪৩. মোহাম্মদ হাসান, ব্লগার ও অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট
৪৪. জাহিদুল ইসলাম সজীব, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক কর্মী
৪৫. তাসলিমা মিজি, নারী উদ্যোক্তা
৪৬. সায়দিয়া গুলরুখ, গবেষক
৪৭. সায়েমা খাতুন, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪৮. বীথি ঘোষ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক