রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম মানবসম্পদ গড়ার পাঠ
একসঙ্গে কাজ করছেন এ সংগঠনের সবাই
৪ এপ্রিল ১৯৮৯। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি, তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন ও ক্যারিয়ার গঠনে করণীয় বিষয়ে পথনির্দেশনা দিতে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদপত্র পাঠক ফোরাম। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজ করে আসছে সংগঠনটি। কার্যক্রম বাড়তে থাকায় ২০১৫ সালে সদস্যদের সম্মতিতে এটির নতুন নাম হয় ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম’।
৭৯ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা পাঁচ হাজার। বছরজুড়ে দেশি-বিদেশি পত্রিকা পাঠ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বাংলা ভাষা উপস্থাপনা, ইংলিশ স্পোকেন, গণিত কোর্স, উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শিক্ষামূলক ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রদর্শন ও মেধা যাচাই পরীক্ষার আয়োজন করে এটি। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরতে ২০১০ সালে ‘প্রযুক্তিমুখী উচ্চশিক্ষা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ ও পরের বছর ‘জাতীয় উন্নয়ন ও ছাত্র সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা সভা, ২০১৩ সালে ‘সুশাসন ও সুনীতি : আগামীর বাংলাদেশ ও তরুণ সমাজ’ ও ২০১৫ সালে ‘মুক্তবাজারে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ব্যক্তিগত প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনার এবং ২০১৬ সালে ‘জীবনের কথা, অর্থনীতির কথা’ শীর্ষক গণবক্তৃতার আয়োজন করেছে সংগঠনটি। গণবক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
ফোরামের সাবেক প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক জুয়েল কিবরিয়া এখন শিক্ষকতা করছেন রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে। ফোরাম প্রাঙ্গণে দেখা হলে তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা করার সময়ই নিজেকে একটু অন্যভাবে বিকশিত করার ইচ্ছা ছিল। এই সংগঠন সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আজকের অবস্থানে আসার পেছনে পাঠক ফোরামের অবদান রয়েছে। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে সুযোগ হলেই এখানে ক্লাস নেওয়ার জন্য ছুটে আসি। এর মাধ্যমে পাঠক ফোরামের প্রতি যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, সে দায় পূরণের চেষ্টা করি।’
কম্পিউটার ল্যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থী ৫০০ টাকা ফি দিয়ে ছয় মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এই কোর্সে ভর্তি হওয়া আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানালেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য এখানে এসেছি। ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার শেখার এটি একটি প্রিয় জায়গা।’
ফোরামে পড়াশোনার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ পাঠাগার রয়েছে। সেখানে থরে থরে সাজানো আছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী, চাকরির প্রস্তুতিমূলক গাইড ও সাহিত্যের বই। এ ছাড়া ভর্তিচ্ছূ শিক্ষার্থীদের জন্য ‘অ্যাডমিশন ফোরাম বুলেটিন’ ও প্রতিবছর শিক্ষামূলক পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। রবিবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন ফোরামের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কার্যনির্বাহী ও প্রতিনিধি নামের দুটি পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা এ কাজটি করেন। সদস্য ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী এই ফোরামের যেকোনো আয়োজনে অংশগ্রহণ নিতে পারেন।
সামিয়া রহমান পড়ছেন দর্শন বিভাগে। এ সংগঠনের সহসভাপতি তিনি। জানালেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে ও নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছে পাঠক ফোরাম। বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনার পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে এটি নারী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখছে।’
সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত সুলতানা বললেন, ‘ফোরামের সঙ্গে পথচলা শুরুর দিন শুনেছিলাম ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা। ১৯৮৯ সাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা ও মননের বিকাশে জড়িয়ে আছে ফোরাম নামটি।’
দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার স্বপ্নকে ধারণ করে ফোরামটি প্রতিষ্ঠা করেন আরিফ হাসনাত। কথায় কথায় তিনি বললেন, ‘দীর্ঘ এ পথচলায় ফোরামের অনেক অর্জন হয়েছে। প্রত্যাশা করি, আগামী দিনে প্রতিটি বিভাগের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সহশিক্ষা কার্যক্রম কোর্স সংযুক্ত করা হবে এবং একটি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বমানের নাগরিক হয়ে উঠতে পারবেন।’
পাঠক ফোরামের ২৭তম কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি নাঈম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ তিন দশকের পথ পরিক্রমায় ফোরামের অর্জন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক সদস্যরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সততা ও মর্যাদার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের বর্তমান অবস্থানের মাঝে ফোরামের সদস্যরা নিজেদের স্বপ্ন পূরণের সাহস খুঁজে পান।’