সিলেট এখন ঝুলন্ত তারের নগরী,

অচল ল্যম্পপোস্ট, রাতে সক্রিয় অপরাধীচক্র,
অপরিকল্পিত তার সংযোগ নগরবাসীর কাছে এখন আতঙ্ক’র নাম।
মবরুর আহমদ সাজু:

সিলেট এখন ঝুলন্ত তারের নগরী, সড়ক কিংবা ফুটপাত জুড়ে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল থামছে না। প্রায় এলাকাতেই দীর্ঘ দিন ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন সংস্থার তার(ক্যাবল)। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের । তারে আটকা পড়ে মাঝ মধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা। পুরো সিলেট জুড়ে লাখ লাখ মিটার অবৈধ ‘ঝলুন্ত তারের’ অপসারণ চায় ভুক্তভোগীরা।
সিলেটের সচেতন নাগরিকরা জানান, নগরীতে বহুদিনের সমস্যা ‘ঝুলন্ত তার’। কিছুদিন পূর্বে সিলেট সিটি করপোরেশনের অভিযানে অবৈধভাবে সংযুক্ত তারগুলো কেটে দেওয়া পর ও আবারো পুরোনো চেহেরায় নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তারের জঞ্জালের আটি লক্ষ করা যাচ্ছে।
তারগুলোকে মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্নমহলের পক্ষ থেকে আবেদন জানান দেওয়ার পরও তা এখনও মাটির উপরেই আছে। সিলেটে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। বিশেষ করে জিন্দাবাজার আম্বরখানার মতো বাণিজ্যিক এলাকায় ঝুলে থাকা তার অনেক বেশি,পাশাপশি সিলেট বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন সংস্থার কুলী পাকানো ঝুলন্ত তারের জন্য (ক্যাবল) চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। এসব তারে ক্ষতি হচ্ছে সড়কের দামি বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং সড়ক বাতির। তবে শুধু ঝুলে থাকাতেই সমস্যার শেষ নয়। ঝুলতে ঝুলতে অনেক স্থানে তারগুলো মাটি স্পর্শ করে। এ কারণে অনেক পথচারী ফুটপাত দিয়ে ভয়ে হাঁটেন না। এসব তারে নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট করা ছাড়াও প্রায় ঘটে দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানি ঘটনার নজিরও আছে। তাছাড়া ঝুলে থাকা ডিশ বা ইন্টারনেটের ক্যাবল থেকে অগ্নিকা- ছড়িয়ে যেতে পারে। সিলেটে তারের এ সমস্যা বহু দিনের। অপরদিকে মূল সড়ক কিংবা অলিগলির ওপরের দিকে তাকালে চোখে পড়ে ঝুলন্ত তারের বিচ্ছিরি চিত্র। তার কত প্রকারের হতে পারে এর কোনো হিসাব নেই। তারগুলোকে রাস্তা ওপরে ঝুলিয়ে রাখার কসরতগুলোও বেশ চমৎকার। এভাবে তার ঝুলিয়ে রেখে যে নগরের সৌন্দর্য্যের বারোটা বাজানো হচ্ছে- এটা বলাও যেন রীতিমতো অপরাধ। এমন কথাগুলো বলেছিলেন সিলেট নগরীরতে বসবাসরত সাধারণমানুষ। দেখাগেছে নগরীর মোড়ে মোড়ে ডিস এন্টেনা, ইন্টারনেট, বিদ্যুত ও জেনারেটরের তার রাস্তার দু’পাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে এদিক-সেদিক। এসব তার ওভার ব্রীজ ও বিদ্যুতের পিলার থেকে শুরু করে সাইনবোর্ড ছাপিয়ে বড় বড় ভবনের সৌন্দয্য নষ্ট করছে। বিভিন্ন জায়গায় গাছের ঝুরির মতো ঝুলছে তারের কুকুলি। সবচেয়ে অবাক করার কথা হলো, এসব তারে ঝুলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ও ব্যানার। সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা ও যথাযথ আইন প্রয়োগে ব্যর্থতার কারণে বার বার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরানো যায়নি তারের জট। যদিও সিসিকের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে ঝুলন্ত তার (ক্যাবল) অপসারণে গত ৫ বছর ধরে নানা পদক্ষেপের কথা শুনাচ্ছে সিসিক। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। বলা চলে, এক্ষেত্রে তারা অনেকটা নিষক্রিয়। তার ছিঁড়ে মাঝেমধ্যেই যে, ঘটছে দুর্ঘটনা তার কোনো ইয়াত্তা নেই। এব্যাপারে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান কে জানান, নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় এসব ঝুলন্ত তার অপসারণ কিংবা নামিয়ে ফেলতে কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। তিনি বলেন এব্যাপারে সিসিক খুব আন্তরিক। এসডিপি’র সাথে সিসিকের চুক্তি হয়েছে তাদের আওতায় আন্ডারগ্রাউন্ড হবে আর সেই আন্ডারগ্রাউন্ডে ঝুলন্ত তারগুলো প্রবেশ হলে নগরীতে এরকম আর কোনো তারের জঞ্জালের আটি লক্ষ করা যাবে না ,
অনুসন্ধানে দেখা যায়,বিদ্যুতের খাম্বায় শতশত তার প্যাঁচানো। কোনোটি বিদ্যুতের, আবার কোনোটি টেলিফোন, ক্যাবল সিস্টেম ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কোম্পানির। কোন তার কিসের তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝে ওঠা দায়। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, সংশ্লিষ্টরাও লাইন মেরামত করতে এসে চিনতে পারছেন না নিজেদের তার কোনটি। বিদ্যুতের তারের সঙ্গে টেলিফোন বা অন্য কোম্পানির তার জড়িয়ে গিয়েও প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সিটি করপোরেশন বা এর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। এব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কে দুদিন যাবত একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিভিন্ন কোম্পানির তার টানা প্রসঙ্গে নূর আজিজ বলেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সুবিন্যস্তভাবে তাদের তার টানার জন্য কয়েক দফা নোটিস দেওয়া হয়েছে। সিলেট ওয়ান ব্যংকের কর্মর্কতা কাজী মুকিত সুমন জানান অপরিকল্পিত তার সংযোগ নগরবাসীর কাছে এখন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিশ, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে ভয়ংকর এক অবস্থা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই তার সৃষ্টি করছে লোডশেডিং, এতে যেমন মানুষের সময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনি মানুষের জীবনমানও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে পথচারী,তিনি দ্রুত এই অব্যবস্থাপনার অপসারন চান বলে নগর কর্তৃপক্ষর কাছে জোড় দাবী করেন। দেখাযায়সিলেট নগরীতে বিদ্যুতের খাম্বায় বিদ্যুৎ ছাড়াও টেলিফোন, ক্যাবল সিস্টেম ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসহ অন্তত ১০টি কোম্পানির তার টানা রয়েছে। একেকটি খুঁটিতে একেক কোম্পানির ১৩-১৫টি তারও রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই তারগুলো টানানো হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের তারের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে টেলিফোন ও ক্যাবল কোম্পানির তার। বিদ্যুতের শক খেয়ে অনেক কর্মী ওপর থেকে পড়ে গিয়ে পঙ্গু হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেটের ঝুলনন্ত তার নগরের সৌন্দর্য নষ্ট করার পাশাপাশি নানা ধরনের দুর্ঘটনার জন্যও দায়ী। ঝুলন্ত তারের কারণে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি বাড়ার সাথে সাথে, উদ্ধার কাজেও ব্যাঘাত ঘটায়। ২০১৪ সালের মধ্যেই বিদ্যুতের খুঁটি থেকে এসব ঝুলন্ত তার অপসারণ করার সময় সীমা বেধে দেওয়া হলেও পরবর্তীতে তা শিথিল করা হয়। তবে রাতারাতি সিলেটে ঝুলন্ত তাতের জঞ্জাল অপসারণ সম্ভব নয় বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট নগরীর বেশ কিছু এলাকার ল্যাম্পপোস্টে বাতি না থাকায় সন্ধ্যা নামলেই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো অন্ধকারে ডুবে যায়। অলি-গলির রাস্তাগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। শীতের রাতে দোকান আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আলোয় রাতের প্রথমভাগে সড়ক কিছুটা আলোকিত থাকলেও দোকানপাট বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় নামে অন্ধকার,  প্রতিবেদককে এরকম কথাগুলো বলেছিলেন নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত খানিশাইল,দহন,ঘাসিটুলা,শামীমাবাদের বাসিন্দারা,সততা যাচাই করার জন্য ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজের কাছে জানতে চাইলে,তিনি এরকম পরিস্থিতির সততা স্বীকার করে করে বলেন, বিগত দিনে এমন ভয়ংকর জায়গা ও পাড়া মহল্লার সড়কে ল্যম্পপোস্ট বাতি না থাকাটা দু:খজনক বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া তিনি নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে জনসাধারণের স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে জানান। শুভপ্রতিদিনের অনুসন্ধানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শুধু নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ড নয়, নগরীর একাধিক ওয়ার্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণএলাকার রাস্তায় বাতি না থাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন রাত ১০টার পর শহরের অন্ধকার রাস্তাগুলেতে থাকে ছিনতাইকারী,পতিতাসহ অপরাধীদের দখলে। চলে মাদক সেবন, ঘটে অপ্রতিকর ঘটনাও, পক্ষান্তরে অপকর্ম করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায় অপরাধীরা। রাতে নগরীতে আইনশৃঙখলা বাহীনির ভুমিকা নিয়ে,সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা জানান, ‘প্রতিরাতেই নগরীতে পুলিশের টহল টিম থাকে।নগরবাসীর নিরপত্তার সার্থে আইনশৃঙখলাবাহিনী কে আরো জোড়দার করা হবে বলে তিনি জানান, এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যানবাহন ও জনবল সংকট রয়েছে। যার কারণে আমরা সব পয়েন্টে রাতে স্থায়ীভাবে পুলিশ দিতে পারি না। তবে এখন থেকে ডেঞ্জার জোর কিনব্রিজের দক্ষিণ ও উত্তর পাশ, শাহজালাল ব্রিজের দক্ষিণ ও উত্তর পাশ, বাস টার্মিনাল, বন্দরবাজার পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে রাতে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। পাশাপাশি রাতে টহল দল বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বলেন অন্যান্য এলাকা থেকে রাতে ট্রেন কিংবা বাসে যারা সিলেট আসেন সেসব যাত্রীদের ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত কাউন্টারে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাতে নগরীতে সাধারণ মানুষ ছিনতাইকারীদের কবলে কোনো আশঙ্কা,বা সমস্যায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অবহিত করার জন্য জানান ।

এ বিভাগের অন্যান্য