আগামীতে ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না:শেখহাসিনা

নৌকা নৌকা মিছিলে জনস্রোতে মুখরিত ছিল আলিয়া মাঠ
সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় উন্নয়নের মার্কা নৌকায় ভোট চাইলেন নেতারা

মবরুর আহমদ সাজু
পূণ্যভূমি সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনার জন্য সিলেট বিভাগসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের ছোঁয়া সিলেট বিভাগে এসে পৌঁছেছে। সিলেটে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। শ্রীহট্ট একটি ঐতিহাসিক নাম। এই নামে অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। গতশনিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সিলেট বিভাগের সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। হাওর-বাওর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার প্যানেল করে দিয়েছি যাতে মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যায়। তিনি বলেন, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। এখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। চা-শ্রমিকরা নৌকায় ভোট দেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এজন্য তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের উন্নয়নে স্কুল, কমিউনিটি, মসজিদ করে দিয়েছি। সিলেটের উন্নয়নে ইতোমধ্যে জানুয়ারিতে বিভিন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর করেছি। এছাড়াও সিলেটের চার জেলার উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তিনি বলেছেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, নৌকা সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে। বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে ৩০ ডিসেম্বরে দেশে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অতীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই বাংলার মানুষ তাঁর স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সন্মান পেয়েছে।’‘বাঙালি কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, মাথা উচু করে চলবে, আর তা নিশ্চিত করতে হলে আগামী যে নির্বাচন সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মাকায় ভোট চাই,’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এ সময় হাত তুলে নৌকায় ভোট দানের জন্য জনগণের ওয়াদা চাইলে সকলে সমস্বরে চিৎকার করে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্থ করেন। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেটে শেখ হাসিনার চতুর্থ নিবাচনী সফর এটি। এ উপলক্ষে পুরো নগরী সাজানো হয় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রাক নির্বাচনী এই জনসভায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর চলার পথের দু’দিকে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে স্বাগত জানান লক্ষ্য জনতা। সকাল থেকেই সিলেটবাসীর যেন একটাই গন্তব্য ছিল, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। হাজার হাজার মানুষ বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে- গেয়ে, শ্লোগানে শ্লোগানে, আকাশ-বাতাস মুখরিত করে জড়ো হতে থাকে জনসভা স্থলে। দুপুর নাগাদ সমাবেশস্থল, আশ-পাশের রাস্তা-ঘাট, মাঠ, বাড়ি-ঘরের ছাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সরকারের উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নের ছোঁয়া সিলেটের প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে দিয়েছি। সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দেয়ার কারণেই আজকে বাংলার ঘরে ঘরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের সুনাম হয়। বাংলাদেশ পুরস্কার পায়। আর অপরদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ তিরস্কৃত হয়। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস- হয়ে যায় তাদের মূল কাজ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ গত নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি’র তথাকথিত আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে সন্ত্রাস-তান্ডব চালিয়েছিল। সেসময় অনেক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সিএনজি চালককে পুড়িয়ে মেরেছে তারা। হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে তিনি বলেন, ‘লুটেরা (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে লুটপাট করে খেত আর ঐ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চালাতো।’ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাদের আমলে বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি, জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যšন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশে সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তাঁর সরকার করেছে, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছে এবং এদেশে কোন অন্যায়-অবিচারকে তাঁর সরকার বরদাশত করবে না, কোন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না, বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি দেশকে সন্ত্রাস- জঙ্গিবাদ মুক্ত রাখতে সরকার প্রধান ধর্মীয় শিক্ষক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক এবং তাদের অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকার আহবান জানান। কার সন্তান কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে সে বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য প্রত্যেক অভিভাবকের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এমনকি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও জনগণকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী ধর্মের মৌলিক শিক্ষা প্রদানের আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দূর করতে সক্ষম হয়েছে বলেই সিলেটবাসী আরামে ঘুমাতে পারছেন। সিলেট আজকে শান্তির নগরী। এই শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জ এবং ওয়ার্ড-ইউনিয়নে তিনি শান্তি বজায় রাখার আহবান জানান। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে উন্নত- সমৃদ্ধ দেশ। ইনশাআল্লাহ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’ এর আগে দুপুর ২টার দিকে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে এ জনসভা শুরু হয়। জনসভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সিলেট কালেক্টরেট জামে মসজিদের খতিব মো. শাহ আলম ও গীতা পাঠ করেন জয়ন্ত বিজয় চক্রবর্তী। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের তিন মাজার জিয়ারত শেষে জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজনের জন্য নগরীর সার্কিট হাউজে অবস্থান করেপরে বেলা ৩টা ১২ মিনিটের দিকে জনসভাস্থলে এসে পৌঁছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রসঙ্গত, নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে ‘নিজ খরচে’ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে সিলেট আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.) ও সিলেটের প্রথম মুসলিম গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার জিয়ারত করেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়, জনগণের কল্যাণ হয়। আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই জনগণের অধিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। উন্নয়নের জোয়ার সিলেটে এসেছে। আমরা সিলেট বিভাগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আমরা ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে পেরেছি। আজ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। সিলেটে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। প্রবাসী যারা আছেন, তারাও বিনিয়োগ করতে পারবেন। সকলের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছি, যেখানে কর্মসংস্থান হবে।’বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগদান করায় তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। লন্ডনে থাকা সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা হবে বলেও মন্তব্য করে তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছে, তা ধরে রাখতে হবে। যে সম্মান বিশ্বে পায়, তার জন্য নৌকায় ভোট দিতে হবে। আমি নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে এসেছি। শুধু নৌকা প্রতীক নয়, আমরা মহাজোটের সকল প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে এসেছি।’জনসভায় সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মহাজোটের সকল প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা প্রতীক বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ দেশ। ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্লানের মাধ্যমে বাংলাদেশেকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’

তিনি বলেছেন, ‘আগে চায়ের নিলাম শুধুমাত্র চট্টগ্রামে হতো। আমরা সেই নিলাম সিলেটে যাতে হয়, তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকায় ভোট দেয়। তাদেরকে ধন্যবাদ। তাদের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কাজ করেছি। চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করেছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। মা বোনেরা এখন বাড়ির পাশে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ শনিবার বিকাল ৪টা ৩ মিনিট থেকে আধা ঘন্টারও বেশি দীর্ঘ বক্তব্যে সিলেটে নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নগরীর চৌহাট্টাস্থ আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো বলেন, ‘সিলেটের উন্নয়নের জন্য স্কুল, রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। গত জানুয়ারিতে এসে অনেক প্রকল্প উদ্বোধন করে যাই। সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সিলেটের সকল জেলায় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় করতে উদ্যোগ নিচ্ছি। সিলেট-ঢাকা চারলেন সড়ক দ্রুত শুরু হবে। সিলেট বিভাগের সকল প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে দিচ্ছি। সিলেটে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছিল। এখন লন্ডন থেকে সরাসরি বিমান দেশে আসে। জলাবদ্ধতা যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা করেছি। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম করে দিয়েছি। দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম এখন অনেকেই দেখতে আসে।’

তিনি বলেন, ‘জানুয়ারিতে সিলেট থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছিলাম। আবারও আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সামনে এসেছি। আগামী নির্বাচনে আমরা যে প্রার্থী দিয়েছি, তাদের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রীকে শাহ এ এমএস কিবরিয়াকে হত্যা করা হলো। সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশকে দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে, জঙ্গিবাদি দেশ হিসেবে, সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। দেশের মানুষের মানইজ্জত সব শেষ করে দিয়েছে। তাদের অরাজকতার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল বিএনজি-জামায়াত। তারা মানুষ পুড়ানো, অস্ত্রবাজি, দুর্নীতি করা ছাড়া আর কিছু জানে না। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছিল। খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিরাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে আমি বা আওয়ামী লীগ মামলা দেয়নি। সেই মামলা দশ বছর ধরে চলে শাস্তি দেয়া হয়েছে। একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্পিøন্টার নিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান বিদেশে বসে কলকাঠি নাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, দারিদ্রের হার কমে। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ ভাগে উন্নীত করেছি। আমরা সকলের জন্য বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। দুই কোটি চার লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছি। মায়ের মোবাইল ফোনে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেই। সারাদেশে ইন্টারনেট চালু করেছি। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সবাই এখন বিশ্বকে দেখতে পারে, আত্মীয়স্বজনকে দেখতে পারে। মোবাইল ফোনে আমরা টু জি থেকে থ্রিজি, থ্রিজি থেকে ফোরজিতে চলে এসেছি। আগামীতে আমরা ফাইভ জি চালু করবো।’
দীর্ঘ বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা হাওরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। হাওরবাসী যাতে শুধু মাছ চাষেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাদের এগিয়ে নিতে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। হাওরাঞ্চলে যাতে শিল্প গড়ে ওঠে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। প্রতিটি মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশকে নিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা তুলে ধরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদী ভাঙন ঠেকাতে, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। সিলেট বিভাগের সকল জেলায় সার্বিক উন্নয়নে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। আবার ক্ষমতায় এলে তা বাস্তবায়ন হবে। দারিদ্র বলে কিছু থাকবে না। মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে।’
‘নৌকা হচ্ছে মানুষের বিপদের বন্ধু’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নুহ নবীর আমলে মহাপ্লাবন থেকে মানুষ জাতিকে রক্ষা করেছিল নৌকা। নৌকা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিয়েছি। নৌকা দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বিশ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালবো, কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। এই নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ একসময় নেতিবাচক পরিচিতি পেয়েছিল। এখন বাংলাদেশ মানে উন্নয়ন। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। আমি দুর্নীতি করতে আসিনি। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। যে অভিযোগ ওঠেছিল, তা বানোয়াট ছিল প্রমাণ হয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু করবো। আল্লাহর রহমতে তা আমরা করছি।’

‘বিএনপি-জামায়াত জোট বাঙালি জাতির মানসম্মান ভুলুণ্ঠিত করেছিল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হত্যা, দুর্নীতি এগুলো ছিল তাদের নীতি। নির্বাচনে তারা একেক আসনে চার-পাঁচজনকে নমিনেশন দিয়েছে। পরে অকশনে দিয়েছে। যে বেশি টাকা দিয়েছে, তাকে মনোনয়ন দিয়েছে।’

এ বিভাগের অন্যান্য