সিলেটে নবনির্মিত চিড়িয়াখানা দেখতে দল বেঁধে আসছেন দর্শনার্থীরা
॥ প্রবেশ মূল্য কম থাকায় দর্শনার্থী সংখ্যা বাড়ছে ॥
মবরুর আহমদ সাজু:
দুনিয়া জুড়ে কত বিচিত্র প্রাণীর বাস। এদের কেউ বাস করে পানিতে, কেউ ডাঙায়। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এদের দেখছে। এদের মধ্যে বেশকিছু প্রাণীকে মানুষ পোষ মানিয়েছে, নিজের কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু এদের বেশিরভাগই থেকে গেছে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে। ঘন অরণ্যে, মরু ও মেরু অঞ্চলে বাস করছে নানা প্রাণী। পোষা ও বুনো প্রাণীদের মধ্যে এমন সব প্রাণী রয়েছে যারা কেবল দেখতেই অদ্ভুত নয়, আচার-আচরণেও বিস্ময়কর। পৃথিবীর বড় বড় চিড়িয়াখানায় গেলে বোঝা যায় প্রাণিজগৎ কত বিচিত্র। সিলেটে যাত্রা শুর করেছে দেশের তৃতীয় বৃহৎ চিড়িয়াখানা। এটা নগরীর টিলাগড় ইকোপার্কে নির্মিত।
এখানে চিড়িয়াখানাটিতে দর্শনার্থীদের জন্য আনা হয়েছে নানা জাতের দেশি-বিদেশি প্রাণী।আর চিড়িয়াখানাটিতে প্রবেশ মূল্য কম থাকায় দর্শনার্থীদের যেন আনন্দও শেষ নেই। সিলেটে নতুন নির্মিত ইকোপার্কে দেখতে এসছেন সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবেল নাজমুল সহ তার বন্ধুরা তারা জনানা এতদিন আমরা যে প্রাণি ঢাকায় গিয়ে দেখতে যেতাম সেখানে আমরা সিলেটে দেখতে পারব। সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা সাবেরা বেগম জানান। চিড়িয়াখানায় প্রবেশ মূল্যকম ভালো কথা তবে আরো প্রাণির সংখ্যা বাড়াতে হবে বলে তারা জানান। সিলেট কমার্স কলেজের প্রভাষক সজীবদত্ত বলেন। ইট পাথর আর কন্ঠকাকীর্ণ শহরের এককোণে এই পার্ক হওয়ায় তিনি আন্দিত। তিনি বলেন ডোরাকাটা জেব্রা আর চিত্রল হরিণ-মায়াবী এসব প্রাণীর এখন দেখা মিলছে সিলেট নগরীর টিলাগড় ইকোপার্ক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের ভেতরের চিড়িয়াখানায়। ইটপাথরের ব্যস্ত নগরে সংরক্ষিত এ বনে খাঁচাবন্দি এসব প্রাণী যোগ করেছে সিলেটবাসীর বিনোদনে নতুন মাত্রা। সরেজমিনঘুরে দেখা যায়। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ সিলেটের পর্যটন খাত আরো সমৃদ্ধ হতে এগিয়ে নিবে পার্কটি। জানাযায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ হচ্ছে দেশের তৃতীয় চিড়িয়াখানা। নগরের টিলাগড় ইকোপার্কে ৮ একর জায়গার দীর্ঘ অপেক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে সিলেট চিড়িয়াখানার। উদ্বোধনের পর থেকে বিকেল বেলা দর্শনার্থীদের ভীর বাড়তে থাকে। বিকাল থেকে দলে দলে দর্শনার্থীরা জড়ো হন চিড়িয়াখানায়। বন বিভাগের মালিকানাধীন নতুন চালু হওয়া এই চিড়িয়াখানার ইজারা নিয়েছে তালহা এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার সুবেদুর রহমান মুন্না বলেন, বিকেল হলে এখানে আসেন দর্শনার্থীরা আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছেন। তিনি জানান, টিকিটের ফি কম থাকায় থাকায় লোকজস বেশ আসেন । জানাযায় প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫ টাকা ও শিক্ষার্থীদের জন্য ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সপ্তাহে সাতদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই চিড়িয়াখানা উন্মুক্ত থাকবে। গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে সিলেট চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয় দুটি জেব্রাসহ নয় প্রজাতির প্রাণী। এর মধ্যে আরও রয়েছে- ২টি হরিণ, ১২টি ময়ূর, ১টি গোল্ডেন ফিজেন্ট পাখি, ৩টি সিলভার ফিজেন্ট পাখি, ৩টি ম্যাকাও পাখি, ৪টি আফ্রিকান গ্রে পেরট, ৪টি সান কানিউর, ৩০টি ছোট লাভ বার্ড ও ১টি অজগর। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, আগামীতে প্রাণী আনা হবে। সিলেট বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে নগরীর টিলাগড়ে শুরু হয় ইকোপার্কের নির্মাণ কাজ। পাহাড়ি টিলা বেষ্টিত ও ঘন সবুজে আচ্ছাদিত ১১২ একর আয়তনের এই ইকোপার্ক তৈরিতে প্রথম পর্যায়ে ব্যয় হয় এক কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৬০০ টাকা। এরপর ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় সিলেটে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চিড়িয়াখানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। টিলাগড়ের ইকোপার্কে চিড়িয়াখানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য সে বছর ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্ধও দেয়া হয়। প্রকল্পের কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দের প্রায় ১০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় হয় ৬ কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাকি টাকা ফিরিয়ে নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষে তা সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তরকে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে চিড়িয়াখানার কাজ শুরুর দিকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্যপ্রাণী কেনা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে- বাঘ, জেব্রা, ময়ূর প্রভৃতি। প্রায় ছয় বছর ধরে এগুলো গাজীপুরের সাফারি পার্কে ছিলে। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের মেয়াদকালেই টিলাগড় ইকোপার্কে প্রাণীদের জন্য ১১টি শেডের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর মধ্যে রয়েছে ময়ূর শেড, গন্ডার শেড, হরিণ শেড, হাতি শেড প্রভৃতি। শেডে থাকা ও বিভিন্ন সময় উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে।