মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে নিম্নমানের উপকরণ! ‘দোয়েল’ ল্যাপটপের ৪৩ ভাগ অকেজো
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে নিম্নমানের ল্যপটপ ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একারণে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ২৩ হাজার ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা দেশি ব্র্যান্ড ‘দোয়েল’ ল্যপটপের ৪৩ ভাগ অকেজো হয়ে পড়েছে। ২৮ ভাগ মাল্টিমিডিয়াও নিষ্ক্রিয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন করে এমনটি উল্লেখ করেছে আইএমইডি। সমীক্ষার ফলে বলা হয়েছে, ল্যপটপের গুণগত মান দীর্ঘ সময় ব্যবহারের উপযুক্ত নয় বলে এর ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন। প্রকল্পটি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ২৯৪ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। বর্তমানে এর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়ন চলছে। প্রথম পর্যায়ে মোট ২৩ হাজার ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩ হাজার ৬৬৪টি স্কুল, ২৪৭৫টি কলেজ, ৬৮৬ টি স্কুল এন্ড কলেজ এবং ৬৫০৬টি মাদ্রাসায় এই প্রকল্পটি বাস্তাবয়ন করা হয়েছে। যার প্রতিটিতে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা হয়। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহ করে আইএমইডি। দৈব চয়নের ভিত্তিতে ১৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাক্ষাতও গ্রহণ করা হয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের ২৪ শতাংশ ল্যাপটপ পুরোপুরি বাতিল হয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট অবস্থায় আছে ১৪ শতাংশ। আর নিম্নমানের কারণে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করা যাচ্ছে না ১৫ শতাংশ ল্যাপটপ। এ ছাড়া প্রকল্পের ১৪ শতাংশ প্রজেক্টর নষ্ট হয়ে গেছে, অনুপযুক্ত প্রজেক্টর আছে ১৫ শতাংশ। আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পড়ে আছে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে এই উদ্দেশ্যে বিতরণ করা মডেমের ৯ শতাংশ বাতিল হয়ে গেছে।
প্রতিবেদেনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের ৭৮ শতাংশ উপকরণ ১০ বার পর্যন্তও মেরামত করা হয়েছে। আইএমইডির সমীক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, দেশি ব্র্যান্ড দোয়েলের মডেল-১৬১২৩ তে কোর আই-৩ প্রোসেসর, ৪জিবি র্যাম, ৫০০জিবি হার্ডডিস্ক ও ৪ ঘন্টা ব্যটারি ব্যকআপ থাকবে এমন সুবিধা থাকার কথা ছিল। কিন্তু ক্রয় সংক্রান্ত পর্যাপ্ত নথি মূল্যায়নকালে পাওয়া না যাবার কারণে এগুলোর মান যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে, মাউশির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, সহজলভ্য উন্নত প্রযুক্তি ও ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে গণিত, অর্থনীতি, বিজ্ঞান এবং ভাষা শিক্ষার মতো কঠিন বিষয় আয়ত্তে আনতে প্রযুক্তিগত শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এরই অংশ হিসেবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরবরাহ করা ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের মান ভালো নয় বলে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মতামত দিয়েছে।