সিলেটের জাপার প্রার্থীরা বাজিমাত করতে আসছেন

সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরমধ্যে সিলেট-১ আসনে জাপার প্রার্থী তালিকায় নিজের নামটি রেখেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। এছাড়া বিভাগের চারটি আসনের বর্তমান সাংসদদের নাম রাখার পাশাপাশি আরও চারটি আসনে নতুন প্রার্থী বাছাই করেছেন তিনি। যাদের দু’জনই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা চেয়ারম্যানের নির্দেশে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর প্রত্যাহার করেছিলেন। জাপার দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, জাপা চেয়ারম্যান সিলেটের ৯টি আসনের পাশাপাশি অন্তত ১শ’ আসনে পার্টির প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। এরশাদের তৈরী করা গোপন তালিকা সম্পর্কে বিরোধী নেতা ও পার্টির কো চেয়ারপার্সন বেগম রওশন এরশাদও ওয়াকিবহাল নন বলেও সূত্রটি দাবি করেছে। সূত্রমতে, রওশন এরশাদের অগোচরে গোপনে তৈরী করা প্রার্থীর তালিকাটি শিগগিরই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন এরশাদ।

সুত্র মতে, বিএনপি নির্বাচনে আসলে একাদশ নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে নির্বাচন করবেন এরশাদ। এজন্য তিনি আগে ভাগেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন। চৌদ্দদলীয় জোটনেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে একশ’ আসন চাইবেন, যদি সম্ভব না হয় কমপক্ষে ৭০টি আসন দাবি করবেন তিনি। সেই হিসাব মাথায় রেখে তৃণমূলের মতামত ছাড়া রওশন এরশাদকে না জানিয়ে গোপনে প্রার্থী তালিকা তৈরি করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের গোপন প্রার্থী তালিকায় সিলেট-১ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিলেট-২ আসনে বর্তমান সাংসদ ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া, সিলেট-৩ আসনে উসমান আলী চেয়ারম্যান, সিলেট-৪ আসনে এটিইউ তাজ রহমান, সিলেট-৫ আসনে বর্তমান সাংসদ ও সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বর্তমান সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে জাহাঙ্গীর আলম, হবিগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান সাংসদ আবদুল মুনিম চৌধুরী বাবু, হবিগঞ্জ-৩ আসনে আতিকুর রহমান আতিক’র নাম।

তবে, এ তালিকায় এবার স্থান হয়নি দশম সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে জাপা চেয়ারম্যানের নির্দেশে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তারই নির্দেশে প্রত্যাহারকারী পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাব্বীর আহমদের। যদিও পার্টির মনোনয়নের আশায় তিনি রাজনীতি ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া এ আসনে পার্টির মনোনয়নের আশায় তৎপর রয়েছেন জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুদ্দীন খালেদ ও সাবেক ছাত্রসমাজ নেতা প্রবাসী জাকির হোসেনও।

এরশাদের গোপন তালিকায় আরও যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন, ঢাকা-১ অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ এবং ঢাকা-১৭ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, গাজীপুর-২ এসএম নেওয়াজউদ্দিন, নরসিংদী-২ আজম খান, নরসিংদী-৪ নেওয়াজ আলী ভূইয়া, মানিকগঞ্জ-২ সৈয়দ আবদুল মান্নান, মানিকগঞ্জ-৩ জহিরুল আলম রুবেল, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, ময়মনসিংহ-১০ ক্বারী হাবিবুল­াহ বেলালী, কিশোরগঞ্জ-২ সৈয়দ সাদরুল উল­াহ মাজু, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-১ সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-সেলিম ওসমান, মুন্সিগঞ্জ-১ অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ-২ মো.নোমান মিয়া, টাঙ্গাইল-৫ পীরজাদা শফিউল­াহ আল মনির, রাজবাড়ী-১ অ্যাডভোকেট খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, রাজবাড়ী-২ আবুল হোসেন, ফরিদপুর-৩ এসএম ইয়াহিয়া, জামালপুর-৩ এমএ সাত্তার, জামালপুর-৪ ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ, শেরপুর-১ মো. ইলিয়াস, নেত্রকোনা-০৫ মো.জসিম উদ্দিন ভূইয়া। চট্টগ্রাম-৩ এমএ ছালাম, চট্টগ্রাম-৪ আল­ামা এমএ মান্নান( ইসলামী ফ্রন্ট), চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, চট্টগ্রাম-১২ এমএ মতিন(ইসলামী ফ্রন্ট), চট্টগ্রাম-১৬ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার-১ মৌলভী মো. ইলিয়াস, কক্সবাজার-২ আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোহিবুল­াহ, নোয়াখালী-১ আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক ( ইসলামী মহাজোট), নোয়াখালী-২ ফজলে এলাহী সোহাগ, নোয়াখালী-নোয়াখালী-৪ মোবারক হোসেন আজাদ, লক্ষীপুর-২ মোহাম্মদ নোমান, ফেনী-৩ রিন্টু আনোয়ার, কুমিল­া-২ আমির হোসেন ভূইয়া, কুমিল­া-৪ অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, কুমিল­া-৮ নরুল ইসলাম মিলন, কুমিল­া-৯ এটিএম আলমগীর, কুমিল­া-১১ এইচএনএম শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-১ এমদাদুল হক রুমন, চাঁদপুর-২ মো.এমরান হোসেন মিয়া, চাঁদপুর-৫ মাওলানা মো.আবু সুফিয়ান আল কাদেরী ( ইসলামী মহাজোট), ব্রাহ্মণবাড়িয়া–১ অ্যাডভোকেট ইসলাম উদ্দিন দুলাল (ইসলামী ফ্রন্ট), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ জিয়াউল হক মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রংপুর-৪ মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, রংপুর-৫ ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, রংপুর-৬ নুরে আলম জাদু, কুড়িগ্রাম-১ মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনিরউদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-৩ ডা. আক্কাস আলী, কুড়িগ্রাম-৪ অধ্যাপক মো.ইউনুছ আলী, লালমনিরহাট-১ মেজর অব. খালেদ আখতার, লালমনিরহাট-২ রোকন উদ্দিন বাবুল, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নীলফামারী-২ মো.সাজ্জাদ পারভেজ, নীলফামারী-৪ মো. শওকত চৌধুরী, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, গাইবান্ধা-২ আবদুর রশিদ সরকার, গাইবান্ধা-৩ ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার। রাজশাহী-৩ শাহবুদ্দিন বাচ্চু, রাজশাহী-৫ অধ্যাপক মো.আবুল হোসেন, নওগাঁ-৩ অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন, নাটোর-২ মজিবুর রহমান সেস্টু, নাটোর-৪ অধ্যাপক আলাউদ্দিন মৃধা, সিরাজগঞ্জ-২ আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, পাবনা-২ মকুল হোসেন সন্টু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ মো. ইসমাইল আজাদ, বগুড়া-২ শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, জয়পুরহাট-১ আ স ম মোক্তাদির তিতাস, জয়পুরহাট-২ কাজী আবুল কাশেম রিপন, ঠাকুরগাঁও-১ রেজাউর রাজি স্বপন টৌধুরী, ঠাকুরগাঁও-৩ মো.হাফিজউদ্দিন, দিনাজপুর-৬ মো.দেলোয়ার হোসেন। বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রতœা, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পিরোজপুর-১ নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-৩ ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী। খুলনা-১ সুনীল শুভ রায়, খুলনা-৩ শফিকুল ইসলাম মধু, সাতক্ষীরা-১ সৈয়দ দিদার বখত্, বাগেরহাট-৩ সেকান্দার আলী মনি (বিএনএ), কুষ্টিয়া-১ শাহরিয়ার জামিল জুয়েল, কুষ্টিয়া-৪ সুমন আশরাফ, চুয়াডাঙ্গা-১ এডভোকেট সোহরাব হোসেন, যশোর-৪ লে. কমান্ডার অব. সাব্বির আহমেদ, ঝিনাইদহ-২ নূর উদ্দিন আহম্মেদ এবং মাগুরা-১ অ্যাডভোকেট হাসান সিরাজ সুজা।

জানা গেছে, এরশাদের গোপন তালিকায় বাদ পড়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা-৫ আসনে মীর আবদুস সবুর আসুদ, ঢাকা- সবুজবাগ আসনে অধ্যাপক দোলোয়ার হোসেন, খাগড়াছড়ির আসনে সোলায়মান আলম শেঠ, রওশন ঘনিষ্ঠ সৌদি আরবের বর্তমান রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ (সোনারগাও) এবং টাঙ্গাইলের আবুল কাসেম, সাইদুর রহমান টেপা, ঢাকা-মোহাম্মদপুর আসনে শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ফয়সল চিশতী, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, উপদেষ্টাদের মধ্যে কাজী মামুন (বি বাড়িয়া), নাজমা আখতার (ফেনী), সোমনাথ বাবু, ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), নুরুল ইসলাম নুরু, সরদার শাজাহান (পাবনা), আরিফ খান (মানিকগঞ্জ), শামসুল আলম মাষ্টার (পটিয়া), মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম (চট্টগ্রাম), আলমগীর সিকদার লোটন (নারায়নগঞ্জ), নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভিন ওসমান, মহিলা পার্টির সেক্রেটারি ও এরশাদের পালিত কন্যা অনন্যা হোসেন মৌসুমী (সোনারগাঁ), দলের যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, আশরাফ সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল), দিদারুল কবির দিদার (চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড), মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সেক্রেটারি বেলাল হোসেন, ছাত্রসমাজের সাবেক সভাপতি ইফতিখার হাসান, সেক্রেটারি মিজানুর রহমান মিরু, মহিলা পার্টির নাজমা আকতার (কুমিল­া), প্রয়াত ফকির আশরাফের স্ত্রী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আসমা আশরাফ (নেত্রকোনা) সহ ত্যাাগী নেতারা।

এরশাদের এই গোপন তালিকায় শতাধিক আসন থেকে ৭/ ৮টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেধীন সম্মিলিত জোটের শরিকদলগুলোর শীর্ষনেতাদেরকে। তাদের মধ্যে ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ ৪টি আসনে, ইসলামী মহাজোট ও বিএনএসহ অন্যান্যদের জন্য বাকী আসন রাখা হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য